অর্থনীতি

আস্থার পরিবেশের উন্নয়ন হলে বিনিয়োগ বাড়বে: ঢাকা চেম্বার

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেছেন, ব্যবসা-বাণিজ্য সংশ্লিষ্ট সরকারি বিভিন্ন সংস্থার কাজের পরিধি সংস্কার করা আবশ্যক। আস্থার পরিবেশের উন্নয়ন হলে দেশে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্প্রসারণ হবে।

শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) ডিসিসিআই আয়োজিত ‘বাংলাদেশের অর্থনীতির দ্বি-বার্ষিক পর্যালোচনা (জানুয়ারি-জুন, ২০২৪); প্রেক্ষিত বেসরকারি খাত’ শীর্ষক সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে তিনি এসব কথা বলেন। 

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক ড. খান আহমেদ সৈয়দ মুরশিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেপলমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ও র‌্যাপিডের নির্বাহী পরিচালক ড. আবু ইউসুফ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক (গবেষণা) ড. মো. সেলিম আল মামুন সেমিনারে আলোচনা করেন।

নিরবচ্ছিন্নভাবে পণ্য উৎপাদনের মাধ্যমে রপ্তানি অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে শিল্পাঞ্চলে আইন-শৃঙ্খলা জোরদারের পাশপাশি উদ্যোক্তাদের আস্থা ফিরিয়ে আনার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন ডিসিসিআই’র সভাপতি। 

মূল প্রবন্ধে তিনি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রভাব, বাজেট ও মুদ্রানীতির বাস্তবায়ন অবস্থা, মূল্যস্ফীতি, বেসরকারি বিনিয়োগ, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, কৃষি ও কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ, তৈরি পোশাক, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, ওষুধ শিল্প, সিএমএসএমই, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, এলডিসি থেকে উত্তরণ-পরবর্তী চ্যালেঞ্জ এবং আর্থিক খাত নিয়ে বিস্তারিত আলোকপাত করেন।

আশরাফ আহমেদ বলেন, বিদ্যমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক উচ্চ সুদহার এবং মুদ্রা বিনিময় নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নিয়েছে। তবে, দেশে মূল্যস্ফীতি কমে যাওয়ার পরিস্থিতি বিবেচনায় এ সিদ্ধান্ত পুনঃবিবেচনা করা প্রয়োজন।

ডিসিসিআই’র সভাপতি বলেন, আমাদের শিল্প কারখানায় প্রয়োজনীয় জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিতের মাধ্যমে পণ্য উৎপাদন বাড়িয়ে রপ্তানি অব্যাহত রাখতে হবে। ব্যালেন্স অব পেমেন্টের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট জটিলতা অচিরেই নিরসন করতে হবে।

তিনি বলেন, উচ্চ সুদ হার, উচ্চ বিনিময় হার, ব্যবসায়িক মূলধনের খরচ বৃদ্ধির কারণে সিএমএসএমই খাতে প্রকৃত ঋণপ্রবাহের কার্যকর হার সঙ্কুচিত করছে। তারপরও দেশের অর্থনীতির সার্বিক উন্নয়নে, বিশেষ করে সিএমএসএমই খাতে ঋণ প্রবাহ বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই।

মূল্যস্ফীতি সহনীয় হলে সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি নমনীয় করার প্রস্তাব করেন ডিসিসিআই’র সভাপতি। তিনি বলেন, কর আহরণের হার বৃদ্ধি পেলে সরকারের গৃহীত ঋণের সুদ পরিশোধের সক্ষমতাও বাড়াবে।

ড. খান আহমেদ সৈয়দ মুরশিদ বলেন, আমাদের অর্থনীতিবহির্ভূত অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তাই, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়ানোর মাধ্যমে বেসরকারি খাতে আস্থা বাড়াতে হবে। 

তিনি বলেন, আমাদের শুধু জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর ওপর নজর দিলেই হবে না; সুশাসন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দেওয়ার সময় এসেছে। বিশেষ করে, শিল্প কারখানায় নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবারহ নিশ্চিত করতে মূল্য নির্ধারণে নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।

ড. আবু ইউসুফ বলেন, কার্যকর নীতিমালা প্রণয়নে খাতভিত্তিক পরিসংখ্যানের বিকল্প নেই, যেখানে আমাদের ঘাটতি রয়েছে। সময় এসেছে অর্থনীতিভিত্তিক পরিসংখ্যানগুলোর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার।

ড. মো. সেলিম আল মামুন বলেন, চলমান সংস্কার কার্যক্রমের একটি অন্যতম অনুষঙ্গ হলো আর্থিক খাতের সংস্কার। এতে বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। 

তিনি বলেন, দেশের নিম্ন আয়ের মানুষকে মূল্যস্ফীতির প্রভাব থেকে রেহাই দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অনুসরণ করছে। মূল্যস্ফীতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলে আবার টাকার প্রবাহ বাড়বে এবং বেসরকারি খাত সুফল পাবে, স্বল্প সময়ের জন্য বেসরকারি খাতকে ধৈর্য ধরতে হবে।