অর্থনীতি

‘পুঁজিবাজারের উন্নয়ন-সংস্কারে সকলকে অবদান রাখতে হবে’

পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও সংস্কারে সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানকে অবদান রাখতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। তিনি বলেন, শুধুমাত্র বিএসইসি নয় বরং পুঁজিবাজারের সকল প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের প্রত্যেকের অবস্থান থেকে নিয়মমাফিক নিজ নিজ দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করতে হবে।

বুধবার (২ অক্টোবর) বিএসইসি’র মুখপাত্রের পক্ষে জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. মোহাইমিনুল হক স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, গত মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) রাজধানীর আগারগাঁও বিএসইসি ভবনে পুঁজিবাজারের সার্বিক সংস্কার সংক্রান্ত বিষয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাথে ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ), বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ), অ্যাসোসিয়েশন অব ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি অব বাংলাদেশ (এসিআরএবি), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজ (বিএপিএলসি). ফাইনান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল (এফআরসি), ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) এবং ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএমএবি) শীর্ষ প্রতিনিধিদের একটি মত বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় বিএসইসি’র চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ, বিএসইসি’র কমিশনার মু. মোহসিন চৌধুরী, বিএসইসির কমিশনার মো. আলী আকবর, বিএসইসি’র কমিশনার ফারজানা লালারুখ, বিএসইসির নির্বাহী পরিচালকবৃন্দ এবং ডিবিএ, বিএমবিএ, এসিআরএবি, বিএপিএলসি, এফআরসি, আইসএবি ও আইসিএমএবির শীর্ষ প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভার সূচনা বক্তব্যে বিএসইসি’র চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ দেশের পুঁজিবাজারের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহ যেমন- ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ পিএলসি (ডিএসই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ পিএলসি (সিএসই), সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল), ইস্যুয়ার বা তালিকাভুক্ত কোম্পানিসমূহ, স্টক বোকার ও ডিলার প্রতিষ্ঠানসমূহ, মার্চেন্ট ব্যাংকসমূহ, ক্রেডিট রেটিং এজেন্সিসমূহ, সম্পদ ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠানসমূহ, নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ, নিরীক্ষা সংস্থাগুলো নিয়ন্ত্রণের জন্য দায়বদ্ধ সরকারি নিয়ন্ত্রক সংস্থা এফআরসি ইত্যাদি সকলকে স্ব স্ব অবস্থান থেকে যথাযথভাবে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান। একটি সমৃদ্ধ ও সফল পুঁজিবাজার গড়তে হলে শুধুমাত্র বিএসইসি নয় বরং পুঁজিবাজারের সাথে সম্পৃক্ত সকল প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের প্রত্যেকের অবস্থান থেকে নিয়মমাফিক নিজ নিজ দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করতে হবে এবং পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও সংস্কারে অবদান রাখতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

সভায় ডিবিএ, বিএমবিএ, এসিআরএবি, বিএপিএলসি, এফআরসি, আইসিএবি, আইসএমএবির শীর্ষ প্রতিনিধিবৃন্দ দেশের পুঁজিবাজারের সার্বিক সংস্কার সংক্রান্ত বিষয়ে তাদের মতামত ও প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। এ সময় দেশের পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও বিকাশের পথে বিদ্যমান বিভিন্ন অন্তরায় কিংবা প্রতিবন্ধকতার কথাও উঠে আসে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়, সভায় অন্যান্যের মধ্যে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান, বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য অংশীজনসহ সমগ্র পুঁজিবাজারের রেগুলেটরি কাঠামোর সংস্কার, পুঁজিবাজারের মনিটরিং কার্যক্রম শক্তিশালীকরণ, সুশাসন নিশ্চিতকরণ, সিকিউরিটিজ আইনের যথাযথ পরিপালন বাস্তবায়ন ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধির সাথে সাথে যথাযথ ফাইনান্সিয়াল রিপোর্টিং নিশ্চিতকরণ, বিনিয়োগ শিক্ষার প্রসার ও বিকাশের উদ্যোগ গ্রহণ, ‘পুঁজিবাজার’ বিষয়ে ভালমানের গবেষণা পরিচালনার উদ্যোগ গ্রহণ ও উৎসাহিতকরণের সাথে সাথে গবেষণা লব্ধ জ্ঞানের আলোকে সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ, আইপিও লিস্টিং’র রুলস ও আইপিও অনুমোদনের প্রক্রিয়া সহজীকরণ এবং সরকারি প্রতিষ্ঠান ও বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ডিরেক্ট লিস্টিং করার প্রক্রিয়া পুনরায় চালুকরণ, তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর ট্যাক্স বেনিফিট যুক্তি সংগতকরণের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার আনয়ন, লভ্যাংশ ও ক্যাপিটাল গেইনের উপর কর আরোপের নীতির সংস্কারের জন্য সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার সাথে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ এবং জাতীয় অর্থায়ন কৌশলপত্রে তথা বাজেটে দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়নের উৎস হিসেবে পুঁজিবাজারকে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাবনা উঠে এসেছে।

সভার আলোচনায় পুঁজিবাজারের উপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি করে পুঁজিবাজারের গঠনমূলক ও টেকসই সংস্কার সাধনের বিষয়টিতে জোর দেওয়া হয়। সর্বোপরি, দেশের পুঁজিবাজারের সংস্কার ও উন্নয়নে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনসমূহের সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে যার যার অবস্থান থেকে সকলকে কাজ করার উপর গুরুত্বারোপ করা হয়।

উল্লেখ্য, গত ৩০ সেপ্টেম্বর পুঁজিবাজারের সার্বিক সংস্কার সংক্রান্ত বিষয়ে বিএসইসির সঙ্গে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ পিএলসি, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ পিএলসি, সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড, সেন্ট্রাল কাউন্টারপার্টি বাংলাদেশ লিমিটেড, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ক্যাপিটাল মার্কেট, বাংলাদেশ একাডেমি ফর সিকিউরিটিজ মার্কেটস ও ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড এর শীর্ষ নির্বাহীদের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এ ছাড়া, পুঁজিবাজারের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে সম্ভাব্য সংস্কার সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনার নিমিত্ত গত ২৩ সেপ্টেম্বর বর্তমান কমিশন বিএসইসির সকল পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় সভা করেছে। আগামীতেও পুঁজিবাজারের সার্বিক সংস্কার সংক্রান্ত বিষয়ে পর্যায়ক্রমে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসমূহ, সম্পৃক্ত নিয়ন্ত্রক সংস্থাসমূহসহ অন্যান্য সকল পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ অ্যাসোসিয়েশন, চেম্বার, এজেন্সি এবং বিনিয়োগকারীদের সংগঠনের সাথে সভা করবে বিএসইসি। সংস্কারের চলমান প্রক্রিয়া অনুসরণ করে দেশের পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট সকলের মতামত ও অংশগ্রহণ এবং অংশীজনদের সহযোগিতায় একটি স্বচ্ছ ও সমৃদ্ধ পুঁজিবাজার গাড়ে তুলতে বিএসইসি কাজ করছে। এরই ধারাবাহিকতায় বিএসইসি পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের বিভিন্ন সংগঠনের শীর্ষ প্রতিনিধিত্বকারীদের সাথেও মতবিনিময় করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।