অর্থনীতি

শিল্পাঞ্চলে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের দাবি ব্যবসায়ীদের

শিল্পাঞ্চলগুলোতে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। উচ্চ ব্যাংক সুদহারের সমালোচনা করেছেন তারা। 

শনিবার (৫ অক্টোবর) রাজধানীর মতিঝিলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা পর্যালোচনা এবং ভবিষ্যৎ পথনির্দেশনা’ শীর্ষক গোলটেবিল আলেচনায় ব্যবসায়ীরা এ দাবি জানান। 

সেমিনারের ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন, লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফেকচার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাবেক সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, বিকেএমইএ’র সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, শাশা ডেনিমস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ডিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি শামস মাহমুদ, পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. মাসরুর রিয়াজ, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আহসান খান চৌধুরী, মাস্টারকার্ড বাংলাদেশের সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল উপস্থিত ছিলেন।  

ডিসিসিআই’র সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, কোভিড-পরবর্তী সময় থেকে আমরা নানা চ্যালেঞ্জের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। তবে, সাম্প্রতিক সময়ে শিল্প-কারখানায় অসন্তোষের কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও ব্যাংক ঋণের সুদের উচ্চ হার এবং সাপ্লাই চেইন ব্যবস্থাপনায় অস্থিতিশীলতার কারণে বেসরকারি খাত প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। অর্থনীতির সার্বিক বিকাশের লক্ষ্যে তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। 

তিনি বলেন, দেশের ভালো ব্যাংকগুলোতে তারল্য সঙ্কট রয়েছে। ফলে, উদ্যোক্তারা প্রত্যাশিত মাত্রায় ঋণ পাচ্ছেন না। সেই সঙ্গে কাঁচামাল আমদানিতে ঋণপত্র খোলার ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতা শিল্প খাতে পণ্য উৎপাদন ব্যাহত করছে। শিল্পাঞ্চলগুলোতে গ্যাসের সঙ্কট। এসব কারণে স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি রপ্তানি সমুন্নত রাখা বেশ কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

ঢাকা চেম্বারের সভাপতি শিল্পাঞ্চলগুলোতে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানান। এছাড়াও, শিল্পাঞ্চলগুলোতে, বিশেষ করে শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে আবাসন, শিক্ষা ও চিকিৎসাসেবা স্বল্পমূল্যে নিশ্চিত করতে সরকারি-বেসরকারি সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণেরও দাবি জানান তিনি।    

এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন বলেন, ১৫ শতাংশের বেশি ব্যাংক ঋণের সুদ দিয়ে পৃথিবীতে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা খুবই দুঃসাধ্য একটি ব্যাপার। তবে, আমাদের উদ্যোক্তাদের সেটা করতে হচ্ছে। 

তিনি বলেন, উচ্চ মূল্য দিয়েও আমাদের শিল্প খাতে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। তাই, আমাদের অনশোর-অফশোর গ্যাস অনুসন্ধানে আরো জোর দিতে হবে।   

লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফেকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, আমরা উদ্যোক্তারা এ দেশে থেকেই অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার মাধ্যমে অর্থনীতিকে আরো সুদৃঢ় করতে আগ্রহী। 

তিনি বলেন, দক্ষ ও ভালো নিয়োগের মাধ্যমে সঙ্কট উত্তরণ সম্ভব, যেটি বাংলাদেশে ব্যাংকের ক্ষেত্রে পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে হবে। তবে, বর্তামন প্রেক্ষাপটে ব্যবসায়ীরা ভীষণভাবে অনিশ্চিয়তা ও নিরাপত্তাহীনতরা মধ্যে রয়েছেন। তা থেকে উত্তরণে শিল্পাঞ্চলে শিল্প পুলিশ ও সেনাবাহিনীর কার্যক্রম আরো জোরদার করতে হবে। পাশাপাশি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে হবে। 

তিনি বলেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে স্থানীয়ভাবে আমাদের চাহিদা কমে গেছে, যেটা উদ্বেগের বিষয়। সেখানে সবাইকে নজর দিতে হবে। 

বিকেএমইএ’র সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, খেলাপি ঋণ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ সিদ্ধান্তের কারণে দেশের অধিকাংশ উদ্যোক্তার খেলাপি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তা পুনঃবিবেচনা করা প্রয়োজন।  সেই সঙ্গে শিল্প খাতে গ্যাস সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন করতে হবে।    

ডিসিসিআই’র প্রাক্তন সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, বিচার বিভাগ, এনবিআর এবং বাংলাদেশে ব্যাংকের কার্যক্রমে বেশকিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ পরিলক্ষিত হয়েছে। তা আশাব্যঞ্জক একটি বিষয়। 

তিনি কারখানায় উৎপাদন অব্যাহত রেখে রপ্তানি সচল রাখতে নিরবচ্ছিন গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। 

তিনি আরো বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণে আমরা এখনও প্রস্তুত নই। বিষয়টি নিয়ে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা আবশ্যক।      

পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. মাসরুর রিয়াজ বলেন, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ সম্প্রসারণ, এসএমই খাতে অর্থায়ন ও উন্নয়ন কার্যকর নীতি সহায়তা প্রদান একান্ত অপরিহার্য। 

তিনি বলেন, ঋণপত্র খোলাসহ আর্থিক খাতের অন্যান্য সমস্যা সমাধানে রিজার্ভে আরো ৬ থেকে ৮ বিলিয়ন ডলারের সংযোজন ঘটাতে হবে। সরকারকে এ ব্যাপারে জোরালো উদ্যোগ গ্রহণ করা আবশ্যক। সেই সঙ্গে ফরেন এক্সচেঞ্জ ও ব্যালেন্স অব পেমেন্ট সুসংহত করা জরুরি।

তিনি আরো বলেন, ব্যাংক ঋণের সুদের হার বৃদ্ধি করে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে তা আরো ভয়াবহ হবে। তাই, সাপ্লাইচেইন ব্যবস্থাপনার ওপর আমাদের আরো মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন।