অর্থনীতি

ব্যাংক ঋণের সুদহার কমানো জরুরি: ঢাকা চেম্বার

বাংলাদেশের জিডিপিতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের অবদান প্রায় ২৫শতাংশ। এই হার আরও বেশি করতে হলে বন্দর ও শুল্ক কার্যক্রমে অটোমেশন, লজিস্টিক সুবিধা বৃদ্ধিসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থার সমন্বয়হীনতা হ্রাস করতে হবে। একইসঙ্গে ব্যালেন্স অব পেমেন্টের অবস্থার উন্নয়ন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়নো এবং ব্যাংক ঋণের সুদহার যৌক্তিকভাবে কমানো অতীব জরুরি।

মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘ব্যবসায়িক প্রক্রিয়া সহজীকরণ: প্রেক্ষিত আন্তর্জাতিক বাণিজ্য’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় ডিসিসিআই’র সভাপতি আশরাফ আহমেদ উল্লিখিত কথা বলেন। 

মতবিনিময় সভায় সিভিল এভিয়েশন অথরিটি অব বাংলাদেশের সদস্য (ফিন্যান্স) এস এম লাভলুর রহমান, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (হারবার অ্যান্ড মেরিন) কমোডর এম ফজলুর রহমান, মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের উপ-সচিব (পরিচালক, ট্রাফিক) মো. কামাল হোসেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (ডব্লিউটিও অনুবিভাগ) ড. ফারহানা আইরিছ এবং বাংলাদেশ স্থল বন্দর কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. হাসান আলী অংশগ্রহণ করেন।  

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে ডিসিসিআই’র সভাপতি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে টাকার মূল্যমান হ্রাস, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ-স্বল্পতা, ব্যাংক ঋণের সুদের উচ্চ হার এবং ঋণপত্র খোলার প্রতিবন্ধকতাসহ নানা সমস্যা মোকাবিলা করছে বেসরকারি খাত। এছাড়াও বন্দরগুলোতে রয়েছে আমদানি পণ্যের শুল্কায়নে পদ্ধতিগত জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রতা। নানা ধরনের জরিমানা আরোপের ফলে আমাদের ব্যবসায়িক খরচ প্রতিনিয়ত বাড়ছে।

তিনি বলেন, দেশের বন্দরগুলোর কার্যক্রমে অটোমেশনের অভাব, টেস্টিং ও স্ক্যানিং সুবিধার অপর্যাপ্ততার কারণেও পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে অনেক সময় নষ্ট হচ্ছে। ফলে, ব্যবসায়ীরা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় ক্রমাগত পিছিয়ে পড়ছি।

সিভিল এভিয়েশন অথরিটি অব বাংলাদেশের সদস্য এস এম লাভলুর রহমান বলেন, বন্দরে নিয়োজিত সরকারি সংস্থাগুলোর সঙ্গে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়হীনতার কারণে অনেক ক্ষেত্রে পণ্যের আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতা পরিলক্ষিত হয়। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের কার্যক্রম চালু হলে কার্গো সুবিধা আরো ২ থেকে ৩ গুণ বৃদ্ধি পাবে। সেখানে আরো ৩টি কার্গো ভিলেজ স্থাপন করা হবে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (হারবার অ্যান্ড মেরিন) কমোডর এম ফজলুর রহমান বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বয়হীনতার কারণে অনেক ক্ষেত্রে বন্দরে কন্টেইনার জটসহ অন্যান্য প্রতিবন্ধকতার তৈরি হয়। এ সমস্যা মোকাবিলায় অটোমেশন কার্যক্রমের পাশাপাশি নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের দক্ষতা বাড়াতে হবে।  

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের উপ-সচিব মো. কামাল হোসেন বলেন, মোংলা বন্দরে প্রয়োজনীয় অবকাঠমো থাকলেও এই বন্দর ব্যবহারকারী জাহাজের সংখ্যা খুবই কম। বেসরকারি খাতকে আরো বেশি হারে মোংলা বন্দর ব্যবহার করতে হবে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (ডব্লিউটিও অনুবিভাগ) ড. ফারহানা আইরিছ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বাংলাদেশের অবস্থা উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট সকলের সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।  

বাংলাদেশ স্থল বন্দর কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. হাসান আলী বলেন, দেশের ২৪টি স্থলবন্দরের মধ্যে ভারতের সাথে ২৩টি এবং মিয়ানমারের সাথে ১টি দিয়ে বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়। সকল স্থলবন্দরে অটোমেশন কার্যক্রম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রকল্পের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। তা আগামী ২ বছরের মধ্যে সম্পন্ন হবে বলে আশা করি। এসব কাজ শেষ হলে সরকারের রাজস্ব আহরণ বাড়ার পাশাপাশি ব্যবসায়ীরাও উপকৃত হবেন। এছাড়াও স্থলবন্দরগুলোতে স্ক্যানিং সুবিধা থাকলে পণ্য আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়া আরো গতিশীল হবে।