অর্থনীতি

এসকে ট্রিমসের মালিকানায় নেই মতিউর রহমান ও তার পরিবার

পুঁজিবাজারে বিবিধ খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি এসকে ট্রিমস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মালিকানাধীন কোম্পানি। কোম্পানিটির সঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক কর্মকর্তা মতিউর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের সম্পৃক্ততা এবং মালিকানা নেই। কিন্তু একসময় মতিউর রহমানের দুর্নীতির অভিযোগে কোম্পানিটির ব্যাংক হিসাব বন্ধ করে দেওয়ার উদ্যোগ নেয় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বিষয়টি কার্যকর করে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। ফলে শতভাগ রপ্তানিকারক কোম্পানিটির এলসি বন্ধ হয়ে কারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। এতে বাতিল হয় বিদেশীদের একাধিক ক্রয়াদেশ। এর ফলে কোম্পানিটিতে বিনিয়োগ করে কয়েক হাজার বিনিয়োগকারী লোকসান গুণছেন প্রায় ৯৫ কোটি টাকা।

বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) রাজধানীর একটি হোটেলে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসকে ট্রিমসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএ কাইয়ুম হাওলাদার এসব কথা বলেন।

কাইয়ুম হাওলাদার বলেন, এসকে ট্রিমসের শেয়ারহোল্ডার সংখ্যা ৬ হাজার ৭৯৩ জন। কোম্পানিটি শতভাগ রপ্তানিকারক। কিন্তু এই কোম্পানি এনবিআরের সাবেক রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউর রহমান ও তার পরিবারের বলে গুজব ছড়ানো হয়েছে। এতে কোম্পানিটির ব্যাংক হিসাব জব্দের মতো ঘটনা ঘটেছে। ফলে ক্রয়াদেশ বাতিল ও কারখানা বন্ধ করতে হয়েছে। এতে লোকসান গুণছে ৬৭৯৩ জন শেয়ারহোল্ডার, যেটা মোটেও কাম্য নয়। সবারই বোঝা উচিত এটি একটি শেয়ারবাজারের কোম্পানি এবং এর শেয়ারহোল্ডার অনেক। তাই কোম্পানির বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নেওয়া মানেই হাজার হাজার শেয়ারহোল্ডারের বিরুদ্ধে নেওয়া।

তিনি বলেন, গত ২৫ জুন এসকে ট্রিমসের ওয়ান ব্যাংকে পরিচালনা করা হিসাব এবং ১১ জুলাই ৯টি ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করা হয়। ফলে উৎপাদন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ। যা গত ৭ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর করা হয়। তবে এরপরে উচ্চ-আদালত ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশে স্থগিতাদেশ দিয়েছে। ফলে ব্যাংক হিসাব পুনরায় চালু হয়েছে। এতে গত ২১ সেপ্টেম্বর কারখানার কার্যক্রমও শুরু হয়েছে। তবে ব্যাংক হিসাব জব্দ ও ক্রয়াদেশ বাতিলকে কেন্দ্র করে এসকে ট্রিমসের শেয়ারহোল্ডারদের অনেক ক্ষতি হয়েছে, যা এখনো চলমান।

কাইয়ুম হাওলাদার আরো বলেন, ব্যাংক হিসাব জব্দের কারণে এসকে ট্রিমসের উৎপাদন বন্ধের খবর প্রকাশের একদিনেই গত ৮ সেপ্টেম্বর কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম কমেছে ১.৮০ টাকা বা ৯.৭৮ শতাংশ। এর মাধ্যমে কোম্পানিটির সব শেয়ারের দাম কমে  ১৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা। তবে গত ১১ জুলাইয়ের ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করার খবর প্রকাশিত হওয়ার পরে শেয়ার দর কমেছে অনেক বেশি। গত ১১ জুলাই এসকে ট্রিমসের শেয়ারের দাম ছিল ২৫.৫০ টাকা। সেই শেয়ারটি এখন ১৪.৩০ টাকায় নেমে এসেছে। অর্থাৎ ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করার খবর প্রকাশের পরে প্রতিটি শেয়ারের দর কমেছে  ১১.২০ টাকা বা ৪৪ শতাংশ। এক্ষেত্রে কোম্পানিটির সব শেয়ারের দর কমেছে ৯৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকার।

তিনি আরো বলে, গত ৭ সেপ্টেম্বর পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও উভয় স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই-সিএসই) এসকে ট্রিমস কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয়। ওই চিঠির জবাবে কোম্পানির কর্তৃপক্ষ জানায়, কোম্পানিতে মতিউর রহমান এবং তার পরিবারের কেউ পর্ষদে নেই এবং তাদের মালিকানা নেই। তবে মতিউর রহমানের ছেলে ও মেয়ে গ্লোবাল ম্যাক্স প্যাকেজিং ইন্ডাস্ট্রিজ ও গ্লোবাল সুজের শেয়ারহোল্ডার। যে দুটি কোম্পানি এসকে ট্রিমসের মালিকানায় আছে।

উল্লেখ্য গত ২১ সেপ্টেম্বর উচ্চ-আদালত ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশে স্থগিতাদেশ দিয়েছে।