দেশের পুঁজিবাজারে ওষুধ ও রসায়ন খাতে তালিকাভুক্ত প্রভাবশালী কোম্পানি বেক্সিমকো ফার্মাসিটিক্যালস লিমিটেড। তাই কোম্পানিটি আইন পরিপালনের তোয়াক্কা করে না। প্রভাব খাটিয়ে পছন্দমতো পরিচালনা করে কোম্পানিটির কার্যক্রম। এবার বেক্সিমকো ফার্মাসিটিক্যালসের স্বেচ্ছাচারিতার প্রমাণ মিলেছে নিরীক্ষক (অডিটর) নিয়োগের ক্ষেত্রে। কোম্পানিটি আইন লঙ্ঘন করে ২০১২ সালের ৩০ জুন থেকে ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত টানা ১২ বছর ধরে একই নিরীক্ষক (অডিটর) দিয়ে বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন নিরীক্ষা করিয়েছে, যা সিকিউরিটিজ আইন পরিপন্থী।
এরই ধারাবাহিকতায় কোম্পানিটির কাছে ব্যাখ্যা তলব করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। একই সঙ্গে কোম্পানিটির নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান এম জে আবেদিন অ্যান্ড কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টের কাছেও এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি বেক্সিমকো ফার্মাসিটিক্যালস লিমিটেড ও এম জে আবেদিন অ্যান্ড কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে পৃথক পৃথক চিঠি দিয়েছে বিএসইসি।
তবে কোম্পানি কর্তৃপক্ষের দাবি, অডিটর নিয়োগে বিএসইসির যে প্রজ্ঞাপন রয়েছে সেটার উপর উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করা হয়। তখন সেই প্রজ্ঞাপন স্থগিত করে উচ্চ আদালত। এজন্য একটানা দীর্ঘ সময় একই নিরীক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘ ১২ বছর ধরে একই নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে বেক্সিমকো ফার্মাসিটিক্যালস নিরীক্ষা কার্যক্রম কেন পরিচালনা করে আসছে সেটা খতিয়ে দেখা দরকার।
এদিকে, বিগত সরকারের আমলে বেক্সিমকো ফার্মাসিটিক্যালস লিমিটেডের বিরুদ্ধ এমন অভিযোগ থাকলেও প্রভাব ও দাপটের কারণে কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারেনি বিএসইসি। তবে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পুনর্গঠিত বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন কোম্পানিটির অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
বিএসইসির চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, কোম্পানির ২০১২, ২০১৩, ২০১৪, ২০১৫, ২০১৬, ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯, ২০২০, ২০২১, ২০২২ ও ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত যেসব বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, সেখানে এম জে আবেদিন অ্যান্ড কো চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট নিরীক্ষা করেছে বলে বিএসইসির নজরে এসেছে। সেক্ষেত্রে সিকিউরিটিজ আইন অনুযায়ী একটি নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানকে টানা তিন বছরের বেশি সময় নিয়োগ দেওয়ার কোনও অনুমতি নেই। যেটা ২০১১ সালের ২৭ জুলাই বিএসইসির জারি করা নির্দেশনার শর্ত (বি) এবং ২০১৮ সালের ২০ জুন বিএসইসির জারি করা নির্দেশনার শর্ত ২(২) লঙ্ঘন করেছে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ এর ধারা ১১(২) এর অধীনে সংশ্লিষ্ট নথিসহ টানা তিন বছরের বেশি সময় ধরে একই নিরীক্ষককে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে ব্যাখ্যা প্রদানের নির্দেশ দেওয়া হলো।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম রাইজিংবিডিকে বলেন, তালিকাভুক্ত কোনও কোম্পানি টানা তিন বছরের বেশি কোনও নিরীক্ষককে নিয়োগ দিতে পারবে না। তবে মাঝে একবছর বাদ দিয়ে আবার দিতে পারবে। সেক্ষেত্রে বেক্সিমকো ফার্মা যে কাজ করেছে, সে বিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। তারা ব্যাখ্যা দেওয়ার পর বিষয়টি যদি যৌক্তিক কারণ থাকে এবং সেটা যদি গ্রহণযোগ্য হয়, তবে কোম্পানি ছাড় পাবে। না হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবে বিএসইসি।
এদিকে এ বিষয়ে বেক্সিমকো ফার্মাসিটিক্যালস লিমিটেডের সচিব মোহাম্মদ আসাদ উল্লাহ রাইজংবিডিকে বলেন, বিএসইসির নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ব্যাখ্যা দেওয়া হবে। আমরা সে বিষয়ে কাজ করছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এম জে আবেদিন অ্যান্ড কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামরুল আবেদিন বলেন, বিএসইসির চাহিদা অনুযায়ী আমরা ব্যাখ্যা দিয়েছি।
প্রসঙ্গত, বেক্সিমকো ফার্মাসিটিক্যালস লিমিটেড পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ১৯৮৬ সালে। ‘এ’ ক্যাটাগরির এ কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ৪৬৪ কোটি ১১ লাখ ২০ টাকা। সে হিসেবে কোম্পানির মোট শেয়ার সংখ্যা ৪৪ কোটি ৬১ লাখ ১২ হাজার ৮৯টি। এর মধ্যে কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে ৩০.১৩ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ২৪.৯৭৪ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে ২৬.৯৯ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ১৭.৯১ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।