অর্থনীতি

সংস্কারের মাধ্যমে পুঁজিবাজারের সমস্যার টেকসই সমাধান হবে

বিশ্বমানের যুগোপযোগী সংস্কারের মাধ্যমে পুঁজিবাজারের সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতাগুলোর টেকসই সমাধান হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ।

বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিএসইসির কার্যালয়ে ২০টি শীর্ষস্থানীয় ব্রোকারেজ হাউজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের (সিএসই) সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন।

এ সময় বিএসইসির কমিশনার মু. মোহসিন চৌধুরী, মো. আলী আকবর, ফারজানা লালারুখ, বিএসইসির কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে, দেশের পুঁজিবাজারের শীর্ষস্থানীয় ব্রোকারেজ হাউজগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বিএসইসির জনসংযোগ কর্মকর্তা ও মুখপাত্র (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. মোহাইমিনুল হক স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, অনুষ্ঠানের সভার সূচনা বক্তব্যে বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, সভায় অংশগ্রহণকারী সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা। বিএসইসি পুঁজিবাজারের সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতাগুলোর সাময়িক সমাধান নয়, বিশ্বমানের যুগোপযোগী সংস্কারের মাধ্যমে টেকসই ও নিশ্চিত সমাধানে কাজ করছে। এজন্য কমিশন পুঁজিবাজারের সংস্কারে টাস্কফোর্স করেছে এবং ফোকাস গ্রুপের মাধ্যমে বাজারের সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের মতামত ও প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করেই সংস্কারের রূপরেখা তৈরি হবে।

তিনি আরও বলেন, পুঁজিবাজারের বাজার মধ্যস্ততাকারীদের সুশাসন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতপূর্বক সক্ষমতা বৃদ্ধির চেষ্টা করা হবে। এর মাধ্যমে আগামীতে পুঁজিবাজারে গতিশীলতা বৃদ্ধি পাবে। দেশের পুঁজিবাজারের পদ্ধতিগত পরিবর্তনের মাধ্যমে আমরা বাজারকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবো বলে আশা রাখছি।

তিনি সিকিউরিটিজ আইনের যথাযথ পরিপালন নিশ্চিত করার মাধ্যমে সব অনিয়ম দূর করে দেশের পুঁজিবাজারকে বিশ্বমানের ও মেধাভিত্তিক করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়, সভায় ব্রোকারেজ হাউজসমূহের শীর্ষ প্রতিনিধিরা দেশের পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি ও সংস্কারসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে তাদের মতামত ও প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি এবং সুশাসন নিশ্চিতের মাধ্যমে পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধির বিষয়টি অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষ গুরুত্ব পায়। সভায় পুঁজিবাজারের বিদ্যমান বিভিন্ন রুলস ও রেগুলেশনের প্রয়োজনীয় সংস্কার আনয়ন, বহুজাতিক কোম্পানিসহ ভালো মৌলভিত্তিসম্পন্ন ও সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানির পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির উদ্যোগ গ্রহণ, তালিকাভুক্তিতে উৎসাহ বাড়াতে তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হারের পার্থক্যে সংস্কার আনা, মার্জিন রুলের পুনর্বিবেচনা ও সংস্কার, ইনডিপেন্ডেন্ট ডিরেক্টর সংক্রান্ত নীতিমালা তৈরি ও তাদের দায়িত্বশীলতা বৃদ্ধি, পুঁজিবাজারকে বিনিয়োগবান্ধব করতে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি, ক্যাপিটাল গেইন ও ডিভিডেন্ডের ওপর আরোপিত করের ক্ষেত্রে সংস্কার আনা, বিনিয়োগকারীদের সচেতনতা ও আস্থা বৃদ্ধিতে উদ্যোগ গ্রহণের প্রস্তাবনা উত্থাপন করা হয়।

এছাড়া আলোচনায় বিনিয়োগ শিক্ষার প্রসারে উদ্যোগ গ্রহণ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে আকৃষ্ট করা, তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোতে সুশাসন নিশ্চিতসহ জবাবদিহিতা বৃদ্ধি, বাজার মধ্যস্ততাকারীদের সক্ষমতা বৃদ্ধি, পুঁজিবাজারকে আরো ডিসক্লোজারভিত্তিক করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ, মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতের সম্ভবনাকে কাজ লাগাতে ও এই খাতের উন্নয়নে উদ্যোগ গ্রহণ, পুঁজিবাজারকে দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়নের উৎস পরিণত করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ, পুঁজিবাজারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নীতিসহায়তা প্রদান এবং নীতি সম্পৃক্ত সংস্কারের জন্য সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার সাথে মিলে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ এবং সরকারে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে পুঁজিবাজারের গুরুত্বকে প্রতিষ্ঠিতকরণে উদ্যোগ গ্রহণ ইত্যাদি প্রস্তাবনা উঠে এসেছে।

সভায় ব্রোকারেজ হাউজসমূহের প্রতিনিধিরা দেশের পুঁজিবাজারের উন্নয়নে নানা ক্ষেত্রে তাদের বিভিন্ন প্রচেষ্টা ও উদ্যোগসমূহের কথা তুলে ধরেন। একইসাথে তারা পুঁজিবাজারের বিদ্যমান সংকটসমূহ নিরসনে ও সংস্কারের প্রক্রিয়ায় বিএসইসির সাথে কাজ করার আগ্রহ ও অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।