অর্থনীতি

পথচলার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন পূর্বাণীর

১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের অন্যতম সফল ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান পূর্বাণী গ্রুপ তার গৌরবময় যাত্রার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করছে।

বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) রাতে রাজধানীর ইউনাইটেড কনভেনশন সেন্টারে সাফল্যের পথচলার উদযাপন উপলক্ষে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে উঠে আসে গ্রুপটির প্রতিষ্ঠার গল্প, বিভিন্ন সাফল্য, দেশের অর্থনীতিতে এর অবদান এবং আগামী দিনের পরিকল্পনা।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পূর্বাণী গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সিইও আবদুল হাই সরকার, বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিকুল আই সরকার (সোহেল)।

দেশের বিভিন্ন নামকরা ব্যবসায়ী, রপ্তানিকারক, আমদানিকারক, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিসহ পূর্বানী গ্রুপের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

পূর্বাণী বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এবং প্রাচীনতম শতভাগ রপ্তানিমুখী টেক্সটাইল প্রতিষ্ঠান। সাফল্যের সাথে ৫ দশক ধরে সুনামের সাথে ব্যবসা পরিচালনা করছে। পোশাক প্রস্তুতকারক, স্পিনিং, ইয়ার্ন ডাইং, ফেব্রিক্স ম্যানুফ্যাকচারিং, রেডিমেড গার্মেন্টস, খুচরা পোশাক, কৃষিসহ মোট ১৩টি ব্যবসায়িক ইউনিট নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে বৃহৎ এই প্রতিষ্ঠানটি।

অনুষ্ঠানে পূর্বাণী গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সিইও আবদুল হাই সরকার বলেন, কর্মীদের অধিকার, নিরাপত্তা এবং মঙ্গল আমাদের আমাদের শীর্ষ অগ্রাধিকার। বর্তমান শ্রম অধিকারের সাথে সম্মতি নিশ্চিত করে আমরা আরামদায়ক এবং আনন্দদায়ক কর্মপরিবেশ প্রদানে সর্বদা সচেষ্ট। এই উন্নয়নের জন্য আমরা আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা তথা আইএলওর সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সহযোগিতা করে আসছি।

তিনি আরও বলেন, শুধু ব্যবসায়িক চিন্তা নিয়ে আমাদের গ্রুপ পরিচালিত হচ্ছে না। আমরা গুরুত্ব দেই পরিবেশের সামঞ্জস্যতা, জাতীয় উন্নয়ন, ব্যক্তি পর্যায়ের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে। সুবিধাবঞ্চিত ব্যক্তিদের প্রয়োজনীয় সাপোর্ট প্রদান আমাদের অন্যতম একটি লক্ষ্য। আমরা পরিবেশের ওপর ইতিবাচক প্রভাব নিশ্চিত করার জন্য গ্রিন ইনিশিয়েটিভ নিয়েছি। আমাদের কারখানাগুলোতে নিশ্চিত করা হয়েছে টেকসই উৎপাদন প্রযুক্তি। যা জাতীয়ভাবে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে সহায়তা করবে। আমরা বিশ্বাস করি, এগুলো এসডিজি এবং জাতীয় অগ্রাধিকার সূচক উভয়ের সাথে সম্পৃক্ত। একটি পরিচ্ছন্ন ভবিষ্যত নিশ্চিত করতে, আমরা জৈবিক বর্জ্য পরিশোধন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছি যা ZDHC, DOE, detox এবং অন্যান্য বর্জ শোধনের স্টান্ডার্ড মেনে চলে।

ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিকুল আই সরকার (সোহেল) বলেন, দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে পূর্বাণী আজকের এই সাফল্যমণ্ডিত অবস্থানে এসেছে। এর সাথে জড়িত আমাদের সব স্তরের সহযোগীরা। আমাদের ইউনিট একে অপরের সাথে নিখুঁত সিঙ্কে কাজ করছে এবং সেরা আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে মানসম্মত পণ্য সরবরাহ করছে। সব কর্মী এবং বিভাগের পরিশ্রম, আন্তরিকতা এবং সৌহাদ্যপূর্ণ কর্মতৎপরতার কারণে আজ আমরা ‍গৌরবময় সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করতে পারছি। এর অংশীদার আমাদের সকল সহকর্মীরা।

তিনি আরও বলেন, আমরা বিশ্বের অনেক দেশে রপ্তানি করছি। স্বনামধন্য অসংখ্য আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের সাথে কাজ করছি। আমি বিশ্বাস করি আমাদের স্থিতিস্থাপকতা এবং শ্রেষ্ঠত্বের আগ্রহ এবং প্রেরণা টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনে আমাদের সাহায্য করবে। সাসটেইনিবিলিটি অর্জনের প্রক্রিয়ায় আমরা আমাদের প্রকৃত সম্পদ এবং কর্মীদের সর্বোচ্চ যত্ন নেওয়ার বিষয়টিও নিশ্চিত করছি।

এই ব্যবসায়িক ব্যক্তিত্ব আরও বলেন, আমাদের কোম্পানি সত্তর দশকের গোড়ার দিকে একটি ট্রেডিং কোম্পানি হিসেবে যাত্রা শুরু করে। দীর্ঘ পথচলায় সেদিনের সেই উদ্যোগ বর্তমানে একটি বৃহৎ টেক্সটাইল গ্রুপে পরিণত হয়েছে। টেক্সটাইল খাতের পাশাপাশি কৃষি এবং মৎস্য খাতেও আমাদের ব্যবসার প্রসার ঘটেছে। দেশের জাতীয় অর্থনীতিতে আমরা অবদান রাখতে পেরে নিজেদের সৌভাগ্যবান মনে করছি।

আমাদের প্রতিষ্ঠানের যাত্রাপথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল সব পর্যায়ের গ্রাহক। আমাদের সাফল্যের পেছনেও রয়েছে গ্রাহকদের সন্তুষ্টি। আমাদের বর্তমান এবং ভবিষ্যতের সম্প্রসারণ কর্মসূচি বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এছাড়া গত ৫০ বছর ধরে সমাজে বিভিন্ন জনহিতকর কর্মকাণ্ডে আমাদের বাণিজ্যিক সম্পৃক্ততা ও উপস্থিতি ছিল যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। আমাদের ভিশন এবং মিশন সম্পূর্ণরূপে বিশ্বব্যাপী দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা পরিচালিত। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যারা আমাদের বৃদ্ধির প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত তাদের সবার প্রতি অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

অনুষ্ঠানে বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে ছিল ফ্যাশন শো। এছাড়া একটি মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক আয়োজন উদযাপন অনুষ্ঠানে ভিন্নমাত্রা যোগ করে।