অর্থনীতি

ব্যক্তিগত নয়, দেশের স্বার্থেই সব এজেন্ডা: ড. সালেহউদ্দিন

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, সরকার পরিচালনায় অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো এজেন্ডা নেই। কোনো ব্যক্তিগত এজেন্ডাও নেই। আমাদের এজেন্ডা হলো দেশের স্বার্থ। 

তিনি আরো বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বলা হলেও দুঃখজনকভাবে সত্যি আমরা সেভাবে ডিজিটালাইজড হতে পারিনি। এখানে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা না এলে কোনো কিছুই সম্ভব নয়।

সোমবার (১১ নভেম্বর) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও-এ দৈনিক ‘বণিক বার্তা’ আয়োজিত তৃতীয় বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সম্মেলন ‘বৈষম্য, আর্থিক অপরাধ ও বাংলাদেশের অর্থনীতির নিরাময়’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন তিনি।

সেমিনারে ‘বণিক বার্তা’ সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। সেমিনারেঅতিথি হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান ও এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) কান্ট্রি ডিরেক্টর হোয়ে ইউন জিয়ং উপস্থিত ছিলেন।

ড. সালেহউদ্দিন বলেন, আমাদের অনেক দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে- মিডিয়াম, শর্ট ও লং টার্ম। এর মধ্যে মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারবো। দীর্ঘমেয়াদিগুলো নির্বাচিত সরকার এসে বাস্তবায়ন করবে। আমরা মধ্য ও শর্ট টার্ম এমন কিছু করবো, অন্য সরকার এসে যেন সেভাবে কাজ করে যায়। এখন আয় বৈষম্য থেকে সম্পদের বৈষম্য বেশি। অধিকাংশ সেবা আমরা অটোমেটেড করার চেষ্টা করছি। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ বললেও দুঃখজনক হলেও সত্যি আমরা সেভাবে ডিজিটালাইজড হতে পারিনি। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা না এলে কোনো কিছুই সম্ভব নয়।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আমাদের সিদ্ধান্তগুলো এখন দ্রুত হয়। এ সিদ্ধান্ত দ্রুত হওয়া মানে স্লিপশট ডিসিশন নয়। ভাবনা-চিন্তা করে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিচ্ছি আমরা। আমরা খাদ্যদ্রব্যের দাম, শুল্ক কমানোর চেষ্টা করি। এসবের সিদ্ধান্ত নিতে এর আগে সময় লাগতো। আবার কিছু রাজনৈতিক ইম্পেরেটিভ থাকে, সেটার জন্য করা সম্ভব হয় না।

তিনি বলেন, একটা ফুটপ্রিন্ট আমরা রেখে যেতে চাই। যেটা স্বল্প সময়ে বা মধ্যবর্তী সময়ে রেখে যাবো, ভবিষ্যতে যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক, তারা যাতে তা বাস্তবায়ন করে। ফুটপ্রিন্ট যেটা রেখে যাবো সেটায় যেন জনগণ সন্তুষ্ট হয়। তখন রাজনৈতিক সরকারকে জনগণ প্রেশার দেবে, আপনারা এটা করছেন না কেন?

ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, আপনারা গণমাধ্যমে দেখেছেন বেক্সিমকোয় রিসিভার নিয়োগ করা হয়েছে। কোনো বিজনেস প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করা হয়নি। বেক্সিমকো রিসিভার দেওয়া মানে বন্ধ নয়, বরং এটা সচল করা হচ্ছে। কারণ, গত কয়েক মাস বেক্সিমকোর বেতন-ভাতা সরকার থেকে দেওয়া হয়েছে। যে কোনো কোম্পানি বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা চলছে। এটা করা হয়েছে বেক্সিমকো সচল করার জন্য। তারা কয়েক মাস শ্রমিকদের মজুরি দিতে পারতো না। এখন রিসিভার বসানোর মাধ্যমে সচল করা হবে। একই সঙ্গে বেক্সিমকোর রপ্তানির টাকা যেন বেহাত না হয়। দেশের টাকা যেন দেশেই ফিরে আসে দেখতে হবে।

ব্যাংক নিয়ে তিনি বলেন, বিগত সময়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আমাদের ব্যাংকখাত। তবে দ্রুত সব সমাধান হবে না। দ্রুত সংস্কার বা সমাধান চাইলে আমার চাকরি ছেড়ে দিতে হবে। কারণ এক ব্যাংকের ২৭ হাজার কোটি টাকার এসেট, এক পরিবার ২৩ হাজার নিয়েছে, সেখানে আমার হাতে ম্যাজিক নেই। তবে কোনো ব্যাংক বন্ধ হবে না এটা বলতে পারি। দুর্বল ব্যাংকে টাকা তুলতে পারছে না এ কারণে তাদের তারল্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে, সব সমাধানও হয়ে যাবে।