প্রান্তিক খামিদের অর্থনৈতিকভাবে সুরক্ষা দিতে ডিম আমদানি বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ) বলছে, দেশে ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণে সিন্ডিকেট ভাঙা ও উৎপাদন বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই।
বুধবার (২০ নভেম্বর) সংগঠনটি এক বিজ্ঞপ্তিতে এই আহ্বান রেখেছে।
এতে বলা হয়েছে, সরকারের উদ্যোগে বাণিজ্যিকভাবে মুরগির বাচ্চা ও পোল্ট্রি ফিড উৎপাদন করে প্রান্তিক খামারিদের মাঝে ন্যায্যমূল্যে বিক্রি কার্যক্রম চালু করতে হবে। এর মাধ্যমে করপোরেট সিন্ডিকেট ভাঙবে ও প্রান্তিক খামারিরা ন্যায্যমূল্যে ফিড ও মুরগির বাচ্চা কিনতে পারবে। এতে ডিম ও মুরগির উৎপাদন খরচ কমবে এবং ডিম ও মুরগির দামে স্বস্তি ফিরে আসবে। ভোক্তা ন্যায্যমূল্যে ডিম মুরগি কিনতে পারবে ও প্রান্তিক খামারিরাও লাভবান হবে।
দেশব্যাপী ডিম ও মুরগির বাজারে ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে, ফিড ও মুরগির বাচ্চার সিন্ডিকেট বন্ধ করার এবং প্রান্তিক খামারিদের রক্ষার জন্য সরকারকে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদন বাড়াতে এবং বাজারে স্থিতিশীলতা আনতে বড় করপোরেট কোম্পানির একচেটিয়া আধিপত্যের অবসান ঘটানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ উদ্যোগ সফল হলে স্থানীয় খামারিরা তাদের উৎপাদন বাড়িয়ে বাজারে সরবরাহ বাড়ানোর মাধ্যমে দেশের ডিম ও মুরগির সংকট দূর করতে হবে।
ফিড এবং মুরগির বাচ্চার বাজারে বড় করপোরেট কোম্পানিগুলোর সিন্ডিকেটের কারণে প্রান্তিক খামারিদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে। এসব কোম্পানির একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছে এবং দাম বাড়ছে। করোনার আগে দেশের প্রান্তিক খামারিরা ডিম ও মুরগির উৎপাদনে প্রধান ভূমিকা পালন করত। স্থানীয় পর্যায়ে ছোট খামারিদের পণ্য সরবরাহের কারণে বাজারে প্রতিযোগিতা ছিল এবং দাম স্থিতিশীল ছিল।
তবে করপোরেট কোম্পানির আধিপত্য বাড়ার কারণে বর্তমানে এই প্রতিযোগিতা অনেকটাই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বাজারে করপোরেট সিন্ডিকেটের আধিপত্যের কারণে প্রান্তিক খামারিরা তাদের উৎপাদিত পণ্য সঠিক দামে বিক্রি করতে পারছে না। এতে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা দিন দিন ব্যবসা ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন।
ডিম আমদানির কোনো প্রয়োজন নেই উল্লেখ করে বিপিএ জানায়, দেশে ডিম ও মুরগির সংকট নেই; বরং সিন্ডিকেটের কারণে বাজার অস্থিতিশীল। ডিম আমদানি না করে যদি প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য সহায়তা দেয়া হয় তাহলে দেশেই ডিমের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। এতে আমদানি নির্ভরতা কমবে এবং স্থানীয় অর্থনীতি শক্তিশালী হবে।
কন্ট্রাক্ট ফার্মিং পদ্ধতিতে করপোরেট কোম্পানিগুলো ফিড, বাচ্চা ও অন্যান্য সরঞ্জাম সরবরাহ করে খামারিদের জিম্বি করে নিয়ন্ত্রণে রাখছে বলেও অভিযোগ জানিয়েছে বিপিএ। সংগঠনটি জানায়, এতে খামারিরা স্বাধীনভাবে বাজারে প্রতিযোগিতা করতে পারছে না এবং তাদের লাভ কমে যাচ্ছে। কন্ট্রাক্ট ফার্মিং ‘নীল চাষের মতো’। করপোরেট কোম্পানিগুলোর এই পদ্ধতি দেশের ক্ষুদ্র খামারিদের স্বনির্ভরতার পথে বাধা তৈরি করছে। এভাবে চলতে থাকলে প্রান্তিক খামারিরা তাদের ব্যবসা ধরে রাখতে পারবে না।
ডিম ও মুরগির সরবরাহ বাড়াতে সরকারের প্রতি ৫ দফা প্রস্তাব দিয়েছে বিপিএ। এগুলো হলো-
সিন্ডিকেট ভাঙতে কার্যকর ব্যবস্থা: ফিড ও মুরগির বাচ্চার বাজারে করপোরেট সিন্ডিকেট বন্ধ করতে কড়া নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে প্রান্তিক খামারিদের সরাসরি পণ্য বিক্রির সুযোগ তৈরি করতে হবে।
ক্ষুদ্র খামারিদের জন্য জামানতবিহীন ঋণ: বড় করপোরেট কোম্পানির ঋণ সুবিধা সীমিত করে ক্ষুদ্র খামারিদের জন্য ব্যাংক ঋণ সহজলভ্য করা এবং সরকারি প্রণোদনার মাধ্যমে প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদন বাড়ানোর সুযোগ তৈরি করতে হবে।
প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা: খামারিদের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য প্রশিক্ষণের আয়োজন করতে হবে। আধুনিক পদ্ধতিতে উৎপাদন বাড়ানোর জন্য প্রযুক্তিগত সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে।
ন্যায্যমূল্যের নিশ্চয়তা: ডিম ও মুরগির ন্যায্যমূল্য নির্ধারণ করতে হবে। বাজারে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধির জন্য ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে হবে।
কন্ট্রাক্ট ফার্মিং নিয়ন্ত্রণ: করপোরেট কোম্পানির কন্ট্রাক্ট ফার্মিং পদ্ধতির অপব্যবহার রোধে আইন প্রণয়ণ করতে হবে। ক্ষুদ্র খামারিদের স্বাধীনতা রক্ষায় বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
প্রান্তিক খামারিদের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা ও উপকরণ সরবরাহ করা হলে দীর্ঘমেয়াদি সুফল মিলবে বলেও আশা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন। এতে দেশে ডিম ও মুরগির উৎপাদন বাড়বে। বাজারে সরবরাহ বাড়ানোর ফলে দাম নিয়ন্ত্রণে থাকবে। স্থানীয় খামারিদের আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত হবে। নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। স্থানীয় সাপ্লাই চেইন শক্তিশালী হবে।
ছোট খামারিদের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা নিশ্চিত করা হলে অল্প সময়ের মধ্যেই ডিম ও মুরগির বাজারে স্থিতিশীলতা আসবে এবং দেশ আরও স্বনির্ভর হবে। ক্ষুদ্র খামারি ও ব্যবসায়ীদের আহ্বান জানিয়ে বিপিএ জানায়, একত্রিত হয়ে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করতে হবে। সরকার এই খাতের প্রতি যথাযথ দৃষ্টি দিলে ও প্রান্তিক খামারিদের সহায়তা করলে বাংলাদেশ শিগগিরই ডিম ও মুরগির উৎপাদনে স্বনির্ভরতা অর্জন করবে।