অর্থনীতি

চার মাসে এডিপি বাস্তবায়ন ৭ দশমিক ৯০ শতাংশ

২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই- অক্টোবর) বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা কমেছে। এই চার মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে ২১ হাজার ৯৭৮ কোটি টাকা বা ৭.৯০ শতাংশ।

সোমবার (২৫ নভেম্বর) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলন কক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এ তথ্য জানানো হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং একনেক চেয়ারপারসন ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে এ সভা হয়।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে (প্রথম চার মাসে) ৩১ হাজার ৬৯২ কোটি টাকার এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছিল। সে হিসেবে এবার এডিপি বাস্তবায়ন ৯ হাজার ৭১৪ কোটি টাকা বা ৩০.৬৫ শতাংশ কমেছে।

বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত চার মাসে এডিপি বাস্তবায়নে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১১ হাজার ৭৯৮ কোটি টাকা, বিদেশি ঋণের ৮ হাজার ২১০ কোটি টাকা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ১ হাজার ৯৭০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে।

চলতি অর্থবছরে এডিপির আকার ২ লাখ ৭৮ হাজার ২৮৮.৯০ কোটি টাকা। মোট প্রকল্প ১ হাজার ৩৫২টি।

গত অর্থবছরের প্রথম চার মাসে সরকারি তহবিল থেকে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো ১৮ হাজার ৮১৩ কোটি টাকা ব্যয় করেছিল। চলতি অর্থবছরে এ ব্যয় কমেছে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা। গত অর্থবছরের প্রথম চার মাসে বৈদেশিক সহায়তা খাত থেকে ব্যয় কমেছে ৩ হাজার ৬৫৪ কোটি টাকা। যদিও সংস্থাগুলোর নিজস্ব অর্থায়ন থেকে খরচ বেড়েছে ৯৫৫ কোটি টাকা। 

বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, নতুন সরকার সব প্রকল্প পর্যালোচনা করছে। যাচাই-বাছাইয়ের পর অনেক অগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। এ কারণে এই মুহূর্তে অনেক প্রকল্পে অর্থ ছাড়ও কম হচ্ছে। এর প্রভাবে এডিপি বাস্তবায়নে ধীর গতি দেখা দিয়েছে। তবে, আশা করা হচ্ছে, খুব শিগগিরই উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থ প্রবাহ বাড়বে।

আইএমইডির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জুলাই মাস জুড়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রভাবও এডিপি বাস্তবায়নে পড়েছে। একই পরিস্থিতি ছিল আগস্ট মাসে। আগস্ট মাসে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়। কিন্তু, আগস্ট মাস জুড়ে প্রশাসনে অস্থিরতা দেখা যায়। এতে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডও স্থবির হয়ে পড়ে।

আবার দেশি-বিদেশি অনেক ঠিকাদার প্রকল্প এলাকায় না থাকায় প্রকল্প বাস্তবায়ন ব্যাহত হয়। এছাড়া, সরকার নতুন করে অর্থ ছাড়ও কম করছে। সরকার শুধু গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে অর্থ ছাড় করছে। অন্যদিক, সরকার পাইপলাইনে থাকা প্রস্তাবিত প্রকল্পের পাশাপাশি চলমান প্রকল্পও নতুন করে পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্যে চলমান অনেক প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব আটকে গেছে। এসব কারণে এডিপি বাস্তবায়নও স্থবির হয়ে গেছে।

আইএমইডির তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থ বছরের প্রথম চার মাসে সেতু বিভাগ ব্যয় করেছে বরাদ্দের মাত্র ১.১৪ শতাংশ অর্থ। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ ব্যয় করেছে বরাদ্দের ২.৪২ শতাংশ। স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ ব্যয় করছে ২.০১ শতাংশ। পানিম্পদ মন্ত্রণালয়ের এডিপি বাস্তবায়নের হার ২.৯৩ শতাংশ। নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় ৪.৯৩ শতাংশ, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ৫.৭৩ শতাংশ এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ ৬.৭৯ শতাংশ অর্থ ব্যয় করেছে। বেশি বরাদ্দ পাওয়া মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর মধ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগ ব্যয় করেছে ১৩.৯০ শতাংশ, বিদ্যুৎ বিভাগ ১০.৪৪ শতাংশ, রেলপথ মন্ত্রণালয় ১২.৯০ শতাংশ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ৯.৬৫ শতাংশ, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ১০.৯১ শতাংশ এবং কৃষি মন্ত্রণালয় ১১.৫৮ শতাংশ অর্থ ব্যয় করেছে।