নিম্ন আয়ের মানুষকে সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য ক্রয়ের সুযোগ দিতে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ফ্যামিলি কার্ডধারী ১ কোটি পরিবারের কাছে ভর্তুকি মূল্যে ভোজ্যতেল, মসুর ডাল ও চিনি বিক্রি করছে সরকার। সেই সঙ্গে খাদ্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে ৫ কেজি চাল বিক্রির কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
এই ১ কোটি পরিবারের বাইরে বিজিএমইএ’র আওতাভুক্ত ১০ লাখ পোশাক শ্রমিক পরিবারের মধ্যে ভর্তুকি মূল্যে টিসিবির মাধ্যমে পণ্য বিক্রির উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার।
এই কার্যক্রম চালাতে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভায় একটি প্রস্তাব নিয়ে যাচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বুধবার (২৭ নভেম্বর) অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় প্রস্তাবটির নীতিগত অনুমোদন মিললে টঙ্গী, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, আশুলিয়া, সাভারসহ ঢাকার সন্নিকটের শিল্পগুলোর গার্মেন্টস শ্রমিকদের মাঝে টিসিবির নির্ধারিত পণ্যগুলো ভর্তুকি মূল্যে বিক্রি করা হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১০ লাখ পোশাক শ্রমিকদের মাঝে ভর্তুকি চিনি, ভোজ্যতেল ও মসুর ডাল বিক্রি বাবদ মাসিক সম্ভাব্য ব্যয় হবে ৩১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। আর প্রতি মাসে খাদ্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে প্রায় ৫ হাজার মেট্রিক টন চালের প্রয়োজন হবে।
এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডধারী ১ কোটি পরিবারের নিকট ভর্তুকি মূল্যে নির্ধারিত পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। পাশাপাশি খাদ্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে পাওয়া ৫ কেজি চাল বিক্রয় কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এতে নিম্ন আয়ের মানুষ সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য ক্রয় করতে সক্ষম হচ্ছে।
তিনি বলেন, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিবের ডিও’র ভিত্তিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী টঙ্গী, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, আশুলিয়া, সাভারসহ ঢাকার সন্নিকটের শিল্পগুলোর গার্মেন্টস শ্রমিকদের মাঝে টিসিবির র্নিধারিত পণ্যগুলো ভর্তুকি মূল্যে বিক্রির সিদ্ধান্ত হয়।
এ অবস্থায় টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডধারী ১ কোটি উপকারভোগী পরিবারের অতিরিক্ত হিসেবে আরও ১০ লাখ গ্রামের্ন্টস শ্রমিক পরিবারের মধ্যে ভর্তুকি মূল্যে টিসিবির মাধ্যমে পণ্য বিক্রির বিষয়টি নীতিগত অনুমোদনের জন্য অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভায় উপস্থান করা হবে। উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি প্রস্তাবটি অনুমোদন দিলে দ্রুত গার্মেন্টস শ্রমিকদের মাঝে ভর্তুকি মূল্যে টিসিবির পণ্য বিক্রির কার্যক্রম শুরু হবে।
এদিকে অর্থ উপদেষ্টার সভাপতিত্বে বুধবার সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হবে। সয়াবিন তেল, চিনি, মসুর ডাল, সার কেনা সংক্রান্ত কয়েকটি প্রস্তাব উপস্থান করা হতে পারে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়েল পক্ষ থেকে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ৫৫ লাখ লিটার সয়াবিন তেল কেনার প্রস্তাব বৈঠকে উপস্থান করা হতে পারে। বসুন্ধারা মাল্টি ফুড প্রডাক্টস থেকে এসব সয়াবিন তেল কিনতে খরচ হবে ৯১ কোটি ৩০ লাখ টাকা। প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ধরা হচ্ছে ১৬৬ টাকা। টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডধারী ১ কোটি পরিবারের কাছে ভর্তুকি মূল্যে বিক্রির লক্ষ্যে এই সয়াবিন তেল কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সভায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ১০ হাজার মেট্রিক টন চিনি কেনার একটি প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে। উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি অনুমোদন দিলে মেঘনা সুগার রিফাইনারি লিমিটেড থেকে ১১৬ কোটি ৮৫ লাখ টাকা দিয়ে এই চিনি কেনা হবে। প্রতি কেজি চিনির দাম ১১৬ টাকা ৮৫ পয়সা। এই চিনি আগামী পবিত্র রমজান মাসে টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডধারী ১ কোটি পরিবারের নিকট ভর্তুকি মূল্যে বিক্রি করা হবে।
সভায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ১০ হাজার মেট্রিক টন চিনি কেনার আর একটি প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে। উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি অনুমোদন দিলে ১১৫ কোটি ৮৫ লাখ টাকা দিয়ে মেঘনা সুগার রিফাইনারি লিমিটেড থেকে এই চিনি কেনা হবে। এক্ষেত্রে প্রতি কেজি চিনির মূল্য ১১৫ টাকা ৮৫ পয়সা। এসব চিনি রমজান মাসে টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডধারী ১ কোটি পরিবারের কাছে ভর্তুকি মূল্যে বিক্রি করা হবে।
সূত্রটি জানিয়েছে, সভায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ১০ হাজার মেট্রিক টন মসুর ডাল কেনার প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে। উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি অনুমোদন দিলে ৯৭ কোটি ৯৭ লাখ টাকা দিয়ে রাজশাহীর নাবিল নাবা ফুডস লিমিটেড থেকে এই মসুর ডাল কেনা হবে। প্রতি কেজি মসুর ডালের মূল্য ৯৭ টাকা ৯৭ পয়সা। টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডধারী ১ কোটি পরিবারের নিকট ভর্তুকি মূল্যে এই মসুর ডাল বিক্রি করা হবে।
সভায় কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো), বাংলাদেশের কাছ থেকে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার কেনার একটি প্রস্তাব দিতে পারে শিল্প মন্ত্রণালয়। উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি অনুমোদন দিলে ১২০ কোটি ৮২ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিয়ে এই সার কেনা হবে। প্রতি মেট্রিক টন ইউরিয়া সারের দাম ৩৩৫.৬২৫ মার্কিন ডলার। এতে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সারের দাম ১ কোটি ৬৮ হাজার ৭৫০ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ১২০ কোটি ৮২ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
এছাড়া সৌদি আরবের সাবিক এগ্রো-নিউট্রিয়েন্টস কোম্পানি থেকে ৩০ হাজার মেট্রিক টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানির একটি প্রস্তাব দিতে পারে শিল্প মন্ত্রণালয়। উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি অনুমোদ দিলে ১২৪ কোটি ৮৩ লাখ টাকা দিয়ে এই সার কেনা হবে। প্রতি মেট্রিক টন ৩৪৬.৭৫ মার্কিন ডলার হিসেবে সর্বমোট ব্যয় হবে ১ কোটি ৪ লাখ ২ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার।