আমদানি দায় পরিশোধকালে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারজনিত ক্ষতি পোষাতে আমদানিকারদের সুবিধা দিয়ে নতুন সার্কুলার জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর ফলে অপ্রত্যাশিত বিনিময় হারজনিত ক্ষতির মোট পরিমাণ নির্ণয় করবে ব্যাংকগুলো। একইসঙ্গে ক্ষতির সমপরিমাণ অর্থ গ্রাহকদের ঋণ-ঝুঁকি বিশ্লেষণ করে ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে চলতি মূলধনের ঋণসীমার বাইরে আলাদা একটি মেয়াদী ঋণ হিসাবে স্থানান্তর করতে পারবে ব্যাংকগুলো। তা সর্বোচ্চ ১ বছর গ্রেস পিরিয়ডসহ মোট ৮ বছর মেয়াদে কিস্তিতে পরিশোধ করতে পারবেন আমদানিকারকরা।
বুধবার (২৭ নভেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করা হয়েছে।
সার্কুলারে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দাসহ বিবিধ কারণে বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে টাকার মূল্যমান আকস্মিকভাবে উল্লেখযোগ্য হারে কমে যায়। এতে স্থানীয় উৎপাদনমুখী শিল্পগুলো কাঁচামাল আমদানিকালে বিনিময় হারজনিত ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। ফলে, এসব প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন সক্ষমতা কমে যাওয়াসহ ফোর্সড লোন সৃষ্টি হচ্ছে এবং চলতি মূলধন ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আমদানিনির্ভর শিল্পগুলো, যেমন: স্টিল ও সিমেন্ট খাত এবং স্থানীয় যেসব শিল্প প্রতিষ্ঠানের পণ্যের বিক্রয়মূল্য সরকারের মাধ্যমে নির্ধারিত, সেসব শিল্প প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন সক্ষমতা অক্ষুণ্ন রাখার মাধ্যমে দেশের আর্থিক প্রবৃদ্ধি ও রপ্তানির গতিধারা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে নিচের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
শিল্প প্রতিষ্ঠানের কাঁচামাল আমদানির নিমিত্তে ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে স্থাপিত ইউজেন্স ঋণপত্রের ক্ষেত্রে অপ্রত্যাশিত বিনিময় হারজনিত ক্ষতির মোট পরিমাণ সংশ্লিষ্ট ব্যাংক নির্ণয় করবে। অপ্রত্যাশিত বিনিময় হারজনিত ক্ষতির মোট পরিমাণ=(ঋণপত্র পরিশোধের তারিখের বিনিময় হার- ঋণপত্র স্থাপনের তারিখের বিনিময় হার) x ৮০ শতাংশ x বৈদেশিক মুদ্রায় পরিশোধিতব্য অর্থের পরিমাণ। নির্ণয় করা ক্ষতির সমপরিমাণ অর্থ গ্রাহকের ঋণ-ঝুঁকি বিশ্লেষণ করে ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে এবং উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে চলতি মূলধন ঋণসীমার বাইরে পৃথক একটি মেয়াদী ঋণ হিসাবে স্থানান্তর করা যাবে। তা সর্বোচ্চ এক বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ সর্বোচ্চ ৮ বছর মেয়াদে সমকিস্তিতে (মাসিক/ত্রৈমাসিক) পরিশোধযোগ্য হবে।
একক গ্রাহক ঋণসীমা কোনোক্রমেই অতিক্রম করা যাবে না। কোনো খেলাপী গ্রাহক প্রতিষ্ঠান এ সুবিধা পাবেন না। এ সুবিধা গ্রহণের লক্ষ্যে গ্রাহক ২০২৫ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক বরাবর আবেদন দাখিল করতে হবে। গ্রাহক বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হারজনিত কারণে প্রকৃত অর্থে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কি না, তা ব্যাংকের মাধ্যমে নিশ্চিত হতে হবে। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন বিভাগ যাচাই করার জন্য যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে হবে।
ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ এর ৪৫ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এ নির্দেশনা জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।