আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এর ধারণা চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৮ শতাংশে নেমে আসবে। তবে প্রবৃদ্ধি কমলেও নীতি শিথিলতার কারণে তা আগামী অর্থবছরে বেড়ে ৬ দশমিক ৭ শতাংশের ঘরে গিয়ে দাঁড়াবে। সেই সঙ্গে চলতি অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি ১১ শতাংশের ঘরে থাকলেও আগামী বছরে তা কমে ৫ শতাংশ হবে।
বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) আইএমএফের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে এসব তথ্য উঠে এসেছে। আইএমএফ-এর একটি টিম ক্রিস পাপাজর্জিও’র নেতৃত্ব গত ৩ ডিসেম্বর থেকে ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ সফর করেছে। এই সফরে তারা অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর, অর্থসচিব ড. খায়রুজ্জামান মজুমদার, এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিক সভা করেছেন।
অর্থনৈতিক কার্যকলাপ এখনো ধীর গতিতে এগুচ্ছে মন্তব্য করে আইএমএফ বলেছে, একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সময়মতো গঠন অর্থনৈতিক স্বাভাবিকতায় ধীরে ধীরে প্রত্যাবর্তনকে উৎসাহিত করেছে। তবে অর্থনৈতিক কার্যকলাপ উল্লেখযোগ্যভাবে মন্থর হয়েছে এবং মূল্যস্ফীতি এখন ক্রমবর্ধমান। বিশেষ করে ব্যাংকিং খাত থেকে মূলধনের বহিঃপ্রবাহ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে চাপে ফেলেছে। উপরন্তু কর রাজস্ব হ্রাস পেয়েছে, বেড়েছে ব্যয়ের চাপ। আর্থিক খাতের কিছু অংশে চাপের কারণে এই চ্যালেঞ্জগুলো আরো বেড়েছে।
তবে বাংলাদেশের আউটলুক খুবই অনিশ্চিত অবস্থায় রয়েছে এবং অর্থনীতির গতিও নিম্নমুখী থাকবে। এসব অনিশ্চয়তা দূর করার জন্য আইএমএফের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকটি পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে, রাজস্ব আয় বাড়ানোর জন্য কর অব্যাহতি দূর করা এবং অপ্রয়োজনীয় খাতে ব্যয় কমিয়ে আনা। এর পাশাপাশি মুদ্রানীতি আরো কঠোর করা, বিনিয়ম হার আরো নমনীয় করা এবং রিজার্ভের আকার বাড়ানোরও পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি। এগুলো বাইরের ধাক্কা থেকে অর্থনীতিকে রক্ষা করবে বলে মনে করে আইএমএফ।
বাংলাদেশের কর-জিডিপির অনুপাত বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে আইএমএফ-এর বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, কর-জিডিপির অনুপাত বাড়ানোর জন্য কর খাতে স্বচ্ছতার সঙ্গে সংস্কার করা উচিত। একই সঙ্গে প্রশাসন থেকে কর নীতি আলাদা করা, যাতে করে রাজস্ব আয় বাড়ানো সম্ভব হয়। জ্বালানি খাতে ভর্তুকি বিষয়ে একটি ব্যাপক নীতি প্রণয়ন করার প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্ব আরোপ করেছে সংস্থাটি। এর পাশাপাশি সার ও বিদ্যুতের বকেয়া বিলও কমিয়ে আনার তাগিদ দিয়েছে আইএমএফ।
ব্যাংকিং খাতের ভঙ্গুরতাকে দ্রুত নিরূপণ করার তাগিদ দিয়ে আইএমএফ বিবৃতিতে বলেছে, এ জন্য দ্রুত খেলাপির প্রকৃত হিসাব নির্ণয় করতে হবে, বিদ্যমান আইনকানুনগুলোও দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে এবং আর্থিক খাত পুনর্গঠনের জন্য একটি পথনকশা তৈরির উপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
আইএমএফ-এর সঙ্গে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচি শুরু হয় ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি। এর পর তিন কিস্তিতে সংস্থাটি থেকে প্রায় ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। ২০২৬ সাল নাগাদ পুরো অর্থ পাওয়ার কথা রয়েছে। এর বাইরে সংস্থাটি থেকে সম্প্রতি আরো ৩০০ কোটি ডলার ঋণের আবেদন করে বাংলাদেশ। চলমান ঋণ কর্মসূচির চতুর্থ কিস্তি ছাড়ের আগে শর্ত বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা ও নতুন ঋণের বিষয়ে দরকষাকষি করতে ৩ ডিসেম্বর থেকে আইএমএফ গবেষণা বিভাগের ডেভেলপমেন্ট ম্যাক্রোইকোনমিকসের প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিওর নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকা সফর করছে। মিশনটি চতুর্থ কিস্তি ছাড়ের বিষয়ে অনেকটা ঐকমত্যে পৌঁছলেও নতুন ঋণের বিষয়ে অনেক ক্ষেত্রে কঠিন শর্ত আরোপ করেছে বলে জানা গেছে।