শিক্ষা

রাবির আবাসিক হলে ডাইনিং বন্ধ, দুর্ভোগে শিক্ষার্থীরা

রাবি প্রতিবেদক : গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ক্লাস বন্ধ থাকলেও প্রশাসনিক কার্যক্রম ও বিভিন্ন বিভাগের চূড়ান্ত পরীক্ষা চালু রয়েছে। ছুটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো খোলা রাখা হয়েছে। তবে হলগুলোর ইন্টারনেট সংযোগ ও ডাইনিং-ক্যান্টিনসহ ক্যাম্পাসের একাধিক খাবারের দোকান বন্ধ হয়ে গেছে। এতে করে দুর্ভোগে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা।এদিকে প্রশাসনিক কার্যক্রম চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেক শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মদিবস পালন করার কথা থাকলেও নিয়মিত অনুপস্থিত থাকেন অনেকেই।খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে ওয়াইফাই সুবিধার ব্যবস্থা থাকলেও তা ব্যবহার করতে পারছেন না শিক্ষার্থীরা। সামান্য বৃষ্টি বা বাতাস হলেই ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত শিক্ষকদের কোয়ার্টারের ইন্টারনেট সংযোগের কোনো সমস্যা হয় না।বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ৭ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রীষ্মকালীন ছুটি শুরু হয় এবং আবাসিক হলগুলো আগামী ২১ মে থেকে বন্ধ হবে বলে হল প্রাধ্যক্ষ কাউন্সিল আহ্বায়ক অধ্যাপক এস এম জাহিদ হোসেন জানিয়েছেন। তবে ছুটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস বন্ধ থাকলেও বিভিন্ন বিভাগের চূড়ান্ত পরীক্ষা চালু রয়েছে। এতে করে অনেক শিক্ষার্থীকে থাকতে হচ্ছে ক্যাম্পাসে।ছুটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা, অ্যানিম্যাল হাজবেন্ড্রি অ্যান্ড ভেটেরিনারি সায়েন্স, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, দর্শন ও প্রাণিবিদ্যাসহ একাধিক বিভাগের চূড়ান্ত পরীক্ষা চলেছে। এ ছাড়া পরীক্ষা না থাকলেও বিভাগের সাক্ষাৎকার, ফিল্ড ওয়ার্ক, টিউশনিসহ একাধিক কারণে অনেক শিক্ষার্থী বাড়িতে যেতে পারেননি। তাই তাদেরকে বাধ্য হয়ে হলে অবস্থান করতে হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের ১১টি এবং ছাত্রীদের পাঁচটি হলের প্রতিটিতে এখন অন্তত দেড় শতাধিক হারে শিক্ষার্থী অবস্থান করছে।কিন্তু কয়েকদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মাদার বখ্শ, সৈয়দ আমীর আলী, নবাব আব্দুল লতিফ, শাহ শখদুম (এসএম) ও রোকেয়াসহ প্রায় সকল হলে বন্ধ রয়েছে ওয়াইফাই (তারবিহীন ইন্টারনেট)। গত কয়েকদিন ধরে এসব হলে বন্ধ করা হয়েছে ডাইনিং ও ক্যান্টিন। এ ছাড়া ক্যাম্পাসের টুকিটাকিসহ বিভিন্ন চত্বরের খাবারের দোকানগুলোও বন্ধ রয়েছে বেশ কয়েকদিন ধরে। তবে শাহ মখদুম ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ক্যান্টিন খোলা থাকায় শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ কিছুটা কমার সঙ্গে সঙ্গে খাবারের মানও কমেছে। গত প্রায় তিন দিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সকল হলের ঝাড়–দার ও মালি নিয়মিত হলে আসছেন না বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা। পরিষ্কারের কাজে নিয়োজিত এসব কর্মচারী নিয়মিত না আসায় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে ও হলের মধ্যে ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধে হলের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে আর দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘বিভাগের রিসার্চের কাজ ও টিউশনি করানোর জন্য গ্রীষ্মকালিন ছুটি শুরু হলেও বাড়িতে যেতে পারিনি। কিন্তু হলের ওয়াইফাই বন্ধ থাকায় আর রিসার্চের কাজ করতে পারছি না।’নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দর্শন বিভাগের মাস্টার্সের এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘গত চার বছর ধরেই দেখছি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল বন্ধের আগের ছয়-সাত দিন এবং পরের ছয়-সাত দিন ডাইনিং-ক্যান্টিনসহ ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ রাখা হচ্ছে। এতে করে হলে অবস্থানকারী শিক্ষার্থীদের  বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।’ক্যাম্পাসে অবস্থিত শিক্ষকদের কোয়ার্টারের ইন্টারনেট, টেলিফোন সংযোগসহ সব কিছু চলছে আগের মতো। শিক্ষার্থীদের হলে ডাউনিং-ক্যান্টিন বন্ধ থাকায় বিস্মিত হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের বেশ কয়েকজন শিক্ষক।নাম ও পরিচয় গোপন রাখার শর্তে এসব শিক্ষক বলেন, ‘গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে শিক্ষার্থীদের হল বন্ধ হলে শিক্ষকদের কোয়ার্টার কেন খোলা থাকবে? একই এলাকার মধ্যে থেকে যদি শিক্ষার্থীদের হলের ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয় তাহলে শিক্ষকদের কোয়ার্টারের সংযোগ বন্ধ রাখা হোক। কিন্তু তা তো হচ্ছে না।’শহীদ হবিবুর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ এস এম একরাম উল্যাহ ওয়াইফাই সংযোগের বিষয়ে বলেন, ‘আমার হলে তো ওয়াইফাই সংযোগ রয়েছে। অন্য হলে নেই কেন তা আমার জানা নেই।’ এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট হল প্রাধ্যক্ষদের সঙ্গে কথা বলে জানাতে চান তিনি।এদিকে কম্পিউটার সেন্টারের প্রশাসক অধ্যাপক খাদেমুল ইসলাম মোল্যা বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ওয়াইফাই নিয়ে তেমন কোনো সমস্যা নেই। তবে আবাসিক হলগুলো থেকে মাঝেমাঝে শিক্ষার্থীরা মুঠোফোনে অভিযোগ করে জানান। হলে কোনো সমস্যা দেখা দিলে সংশ্লিষ্ট হলের প্রাধ্যক্ষের মাধ্যমে আমাদের জানালে দ্রুত সমাধান করে দেওয়া হয়।’হলে অপরিকল্পিত ওয়াইফাই চালু রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের তাপসী রাবেয়া হল ব্যতীত কোনো হল কম্পিউটার সেন্টারের পরামর্শ নিয়ে ওয়াইফাই ব্যবস্থা চালু করেনি। সঠিক পরিকল্পনা না থাকায় এসব হলে বেশিরভাগ সময় বিভিন্ন জটিলতা দেখা যায়।’বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য চৌধুরী সারওয়ার জাহান বলেন, ‘বেশি শিক্ষার্থী না থাকায় হলের ডাইনিং-ক্যান্টিন মালিকরা লোকসানের ভয়ে হয়তো তা বন্ধ রেখেছেন। তবে ওয়াইফাই বন্ধের বিষয়ে হলের প্রাধ্যক্ষরা কোনো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কি-না তা আমার জানা নেই।’

     

রাইজিংবিডি/রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়/১৮ মে ২০১৫/মেহেদী হাসান/সাইফুল