জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত যেসব কলেজ শিক্ষকদের বেতন ভাতা দিচ্ছে না তাদের অধিভুক্তি বাতিল করা হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. মশিউর রহমান।
শনিবার (২৬ জুন) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে মিট দ্য রিপোর্টার্স অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, কলেজ প্রতিষ্ঠায় সময় প্রতিটি শিক্ষকের বেতন কলেজ থেকে দেওয়া হবে বলে অঙ্গীকার করা হয়। এরপরও বহু কলেজ শিক্ষকদের বেতন দিচ্ছে না। এ বিষয়ে প্রতিটি কলেজে চিঠি দিয়েছি, যেসব কোর্সের শিক্ষকদের বেতন দেয়া হচ্ছে না, ওই বিষয়ের কোর্সটির অধিভুক্তি বাতিল করা হবে।
কিছু দুর্নীতিবাজ ছাড়া অধিকাংশ শিক্ষক সততার সঙ্গে জীবন যাপন করেন জানিয়ে উপাচার্য বলেন, আমি অনেক অধ্যাপককে দেখেছি অবসরের পর একটি ফ্লাট কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন। অনেক শিক্ষক রঙ্গিন একটা টিভিও কিনতে পারেন না। শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নয়, মাধ্যমিক প্রাথমিকের ৯৫ ভাগ শিক্ষক সততার সঙ্গেই জীবন ধারণ করছেন। অথচ আমরা সংবাদ মাধ্যমে দেখতে পাই শিক্ষকের দুর্নীতির সচিত্র প্রতিবেদন। যা খুবই দুঃখজনক।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় মানচিত্রসম উল্লেখ করে তিনি বলেন, এদেশের মানচিত্র যত বেশি বিস্তৃত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী-অভিভাবকও তেমনি সারাদেশেই বিস্তৃত রয়েছেন। দেশে মোট ২২৬০টি কলেজ। ৫৬০টি অনার্স কলেজ ও শিক্ষার্থী আছে ২৯ লাখ। শিক্ষক আছে ৬০ হাজার।
অধ্যাপক ড. মশিউর রহমান বলেন, কোভিডকালে ৭০০০ ক্লাস আপলোড করেছি। এছাড়াও প্রায় ১৩ হাজার ক্লাস নেয়া হয়েছে। তবে কতজন শিক্ষার্থী এসব ক্লাস থেকে শিক্ষা নিয়েছেন তা নিয়ে সংশয় আছে।
তবে আমি আইসিটি ডিরেক্টরের সঙ্গে কথা বলেছি। এ বিষয়ে নতুন পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও এমপিওওভুক্ত যেসব শিক্ষক আছেন। বেতন পাচ্ছেন তাকে তো ক্লাস নিতে হচ্ছে না। এসব শিক্ষকদেরকে দিয়ে অনলাইন ক্লাস আয়োজনের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এছাড়াও বিতর্ক প্রতিযোগীতা, অন্যান্য এক্সট্রা কারিকুলাম এক্টিভিটিস করার পরিকল্পনা আছে।
শিক্ষার্থীদের অটোপ্রমোশন দেওয়া হয়নি দাবি করে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা যেন এক বর্ষে না থাকে এজন্য তাদেরকে উন্নীত করা হয়েছে। শিক্ষা ব্যবস্থার জন্মলগ্ন থেকে ফেস টু ফেস শিক্ষাদানে অভ্যস্থ। আমরা যতবেশি অনলাইন শিক্ষায় অভ্যস্থ হতে পারবো ততবেশি এগিয়ে যেতে পারবো। এ বিষয়ে গণমাধ্যম অনুপ্রেরণা যোগাবে বলেও তিনি বিশ্বাস করেন।
অনলাইনে ভর্তি বিষয়ে তিনি বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অনেক আগে থেকেই অনলাইনে ভর্তি কার্যক্রম শুরু করেছে। শুধুমাত্র এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের একটি কাগজ বিশ্ববিদ্যালয়ে জমা দিতে হয়। আমরা সেটি সমাধানেরও চেষ্টা করছি। ঢাকার বাইরের শিক্ষকরা সাড়ে ৪ ঘণ্টা ক্লাস নিয়েছে। এক্ষেত্রে খুবই কম শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছে।
উপাচার্য বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান লক্ষ্য গুণগত শিক্ষাদান। এজন্য শট কোর্স ও ডিপ্লোমা কোর্স নিয়ে কাজ শুরু করেছে।
দুর্নীতি প্রতিরোধ সেল গঠিত হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, নীতিগত ভাবে এটি করা হয়েছে। এর জন্য একটি অফিস লাগবে। যার কাজ চলছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অবশ্যই জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে। অনলাইনে পরীক্ষার বিষয়েও কাজ করছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সাইন্স বিভাগ কাজ শুরু করেছে। তবে অবশ্যই ফেস টু-ফেস পরীক্ষা নেয়ার কোন বিকল্প নেই বলেও জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মুরসালিন নোমানী ও সাধারণ সম্পাদক মসিউর রহমান খান।