সরকার ২০২২ শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই প্রাথমিক স্তরের (৩য়, ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণি) বাংলা ও ইংরেজি ভার্সনের বিনামূল্যে ৩,৭৭,৬৫,৬১৬ পাঠ্যপুস্তক শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। এজন্য পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহের জন্য আহ্বান করা ৯৮টি লটের মধ্যে ৫২টি লটের ওই পরিমাণ পুস্তক মুদ্রণের জন্য মোট ব্যয় হবে ১১৫ কোটি ৮২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা।
সূত্র জানায়, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) ২০২২ শিক্ষাবর্ষের ৩য়, ৪র্থ, ৫ম শ্রেণির বাংলা ও ইংরেজি ভার্সনের ৭,১০,৮৬,৮০৬ কপি পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ, বাঁধাই এবং জেলা/উপজেলাভিত্তিক সরবরাহের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ সম্পন্ন করে। এরপর গত ২০ মে সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থে ক্রয় কার্যক্রম সম্পাদন করতে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করে মোট ৯টি বিষয়ের পাঠ্যপুস্তক সর্বমোট ৫১১টি গন্তব্যে (জেলা/উপজেলা/থানা/কেন্দ্র) পাঠানোর লক্ষ্যে মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানগুলো মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহের সক্ষমতা বিবেচনা করে শ্রেণি ও বিষয়ভিত্তিক পাঠ্যপুস্তক বিতরণের কাজ সম্পন্ন করা হবে। প্রতিটি শিক্ষার্থীর কাছে তাদের কাঙ্খিত পাঠ্যপুস্তক যথা সময়ে বিতরণের স্বার্থে উপজেলা ও জেলার অবস্থান বিবেচনা করে মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহ কার্যক্রম সুষ্ঠুও সহজ করার উদ্দেশ্যে দরপত্র ৯৮টি লটে বিভক্ত করা হয়।
২০২২ শিক্ষাবর্ষের প্রাথমিক স্তরের (৩য়, ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণির) বাংলা ও ইংরেজি ভার্সনের পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহের জন্য ৮৫টি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ৯৮টি লটের জন্য ৫২২টি দরপত্র নির্দেশিকা ক্রয় করা হয় এবং ২৭৪টি দরপত্র দাখিল করা হয়। প্রতিটি দরপত্র নির্দেশিকায় ৯৮টি লটের যেকোনো একটিতে অংশগ্রহণের সুযোগ রাখা হয়।
দরপত্রসমূহ মূল্যায়নের জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ৭ সদস্যের দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি গঠন করে। দরপত্রের মূল্যায়ন কমিটিকে মূল্যায়ন বিষয়ক সহায়তা করার জন্য জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড কারিগরি উপকমিটি গঠন করে। কারিগরি উপকমিটির কাছে দরপত্র পরীক্ষার জন্য পাঠানো হলে উপকমিটি দরপত্রের বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করে। কারিগরি উপকমিটি ভৌত-অবকাঠামো সরেজমিনে পরিদর্শন প্রতিবেদন এবং দরপত্র নির্দেশিকার শর্ত অনুযায়ী ম্যানুফ্যাকচারার ডিক্লারেশন অব প্রডাকশন ক্যাপাসিটির ভিত্তিতে মেশিনের উৎপাদন সক্ষমতা নির্ধারণ করে। মূল্যায়ন কমিটি কারিগরি সাব-কমিটির প্রতিবেদন ও দরপত্র নির্দেশিকার শর্ত পর্যালোচনা করে মেশিনের উৎপাদন সক্ষমতার ভিত্তিতে মূল্যায়ন প্রতিবেদন প্রস্তুত করে। পরে এনসিটিবি কর্তৃক গঠিত একটি কমিটির মাধ্যমে প্রাক্কলিত দর নির্ধারণ করা হয়।
সূত্র জানায়, মোট ৯৮টি লটের মধ্যে ২৭৪টি দরপত্র দাখিল হয়। দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির মূল্যায়নে দাখিলকৃত ২৭৪টি দরপত্রের মধ্যে সিডিউলে সন্নিবেশিত শর্তসমূহ পূরণ করায় কারিগরি ও আর্থিক বিবেচনায় ২৬৫টি দরপত্র রেসপনসিভ এবং ৯টি দরপত্র নন-রেসপনসিভ বলে বিবেচিত হয়। দাখিলকৃত ২৭৪টি দরপত্রের মূল্যায়নকালে ৯৮টি লটের মধ্যে ৫২টি লটে সর্বনিম্ন রেসপনসিভ দরদাতার দর গ্রহণের এবং ৪৬টি লটের জন্য পুনঃদরপত্র আহ্বানের সুপারিশ করা হয়।
৯৮টি লটে সর্বমোট ৭,১০,৮৬,৮০৬ কপি পাঠ্যপুস্তকের সুপারিশকৃত ৫২টি লটের মধ্যে অগ্রণী প্রিন্টিং প্রেস ৪৬টি লটে মোট ৩,৩১,০৮,১১৮ কপি পাঠ্যপুস্তকের উদ্ধৃত দর ১০১,৫৪,৪৫,৪৯২.৩৭ টাকা; যার প্রাক্কলিত দর ১০২,১৪,৪৭,৪৪৭.১৫) এবং কচুয়া প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন এর ৬টি লটে মোট ৪৬,৫৭,৪৯৮ কপি পাঠ্যপুস্তকের উদ্ধৃত দর ১৪,২৮,০৯,৮৪৭.৪৩ টাকা; যার প্রাক্কলিত দর ১৪,৩৬,৫৫,৮৪৮.২১ টাকা। সর্বমোট ৩,৭৭,৬৫,৬১৬ কপি পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহের জন্য সর্বমোট প্রাক্কলিত দর ১১৬,৫১,০৩,২৯৫.৩৬ টাকা; যা সর্বমোট প্রাক্কলিত দরের চেয়ে ০.৫৯ শতাংশ কম।
সূত্র জানায়, বছরের শুরুতে নির্দিষ্ট সময়ে শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্যপুস্তক পৌঁছানোর স্বার্থে পিপিআর ২০০৮ এর ৩১ ধারায় বিবৃত পণ্য, কার্য ইত্যাদি ক্রয়ে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতির প্রয়োগ সংক্রান্ত পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন-২০০৬ (সংশোধন-আগস্ট ১, ২০১৬) এর ৭ দফায় বিবৃত ৩ উপধারার বিধানমতে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি দরদাতার দর গ্রহণ করার সুপারিশ করে। দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সার্বিক পর্যবেক্ষণ যাচাই, পর্যালোচনা ও মূল্যায়নে ২০২২ শিক্ষাবর্ষের প্রাথমিক স্তরের (৩য়, ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণি) বাংলা ও ইংরেজি ভার্সনের বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহের নিমিত্ত আহবানকৃত ৯৮টি লটের মধ্যে ৫২টি লটের মোট ৩,৭৭,৬৫,৬১৬ কপি পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণের লক্ষ্যে সর্বমোট উদ্ধৃত দর ১১৫,৮২,৫৫,৩৩৯.৮০ টাকার (পাঠ্যপুস্তক প্রতি গড়ে মুদ্রণ কাগজসহ বাঁধাই ও সরবরাহের খরচ ৩০.৬৭ টাকা) ক্রয় প্রস্তাব গ্রহণের সুপারিশ করে।
উল্লেখ্য, দরদাতাদের দরপত্রের বৈধতার মেয়াদ আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখে উত্তীর্ণ হবে। এ সংক্রান্ত একটি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে বলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।