বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে যুগোপযোগী শিক্ষা বাস্তবায়নে ২০২৩ সালের শুরুতে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন কারিকুলামের পাঠ্যবই দিয়েছে সরকার। পাঠ্যবই স্কুল পর্যায়ে বিতরণের পরপরই নানা ধরনের ভুল নিয়ে নতুন বিতর্ক মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। এ নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা।
এ ঘটনায় অভিভাবক ও শিক্ষাবিদরা ‘বিস্ময়’ প্রকাশ করেছেন এবং পুরো বিষয়টিকে ‘লজ্জাজনক’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। ভুলের বিষয়টি স্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছেন বই সম্পাদনার সঙ্গে যুক্ত সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরাও৷
এমন প্রেক্ষাপটে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড বলছে, অভিযুক্ত লেখকদের বিষয়ে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। এসব বিষয়ে সংশোধনী নিয়ে আসা হবে। পরবর্তী বছর শিক্ষার্থীরা নতুনভাবে পরিমার্জিত বই পাবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম বলেন, ভুলের বিষয়টি অনাকাঙ্ক্ষিত। আমরা এটি নিয়ে কাজ করছি। যারা ভুল করেছেন এবং প্লেজিয়ারিজমের সাথে জড়িত তাদের আগামীতে পাঠ্যপুস্তক এবং সংশ্লিষ্ট কাজে যুক্ত করা হবে না।
তিনি বলেন, প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শেণির বই এবার পরীক্ষামূলকভাবে দেওয়া হয়েছে। এ বছর মাঠপর্যায়ে সবার মতামতের পর ব্যাপক পরিমার্জন করে আগামী বছর দেওয়া হবে বইগুলোর প্রথম সংস্করণ।
তিনি বলেন, নবম দশম শ্রেণির বইয়ে যেসব ভুল রয়েছে তার সংশোধনী ইতোমধ্যে পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি অনলাইনে এবং এনসিটিবির ওয়েবসাইটেও দেওয়া হয়েছে। যেখানে সারা দেশের সব প্রতিষ্ঠানের সংযুক্তি রয়েছে। আমরা তাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছি।
কিভাবে এ সংশোধনী আনা যাবে সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা ভাবছি পাঠ্যপুস্তক চূড়ান্ত করার আগে তার পরীক্ষামূলক কপি করার বিষয়ে। ফলে পাঠ্যবইয়ে ভুলের সংখ্যা কমবে। তবে আমরা চাইলেই কোনো শিক্ষক বা প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করতে পারি না। এভাবে যদি কাট-ছাট বা বাদ দেওয়া চলতে থাকে তাহলে আগামীতে বই লেখার জন্য লোক পাওয়া যাবে না। ফলে সি অথবা ডি গ্রেডের শিক্ষক দিয়ে আমাদের পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন করতে হবে।
পাঠ্যবইয়ে ভুল থাকার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের অন্যতম হাতিয়ার হবে দক্ষতাভিত্তিক প্রায়োগিক শিক্ষা। আমরা সেদিকে এগুচ্ছি। নতুন শিক্ষাক্রমের পাঠ্যবইয়ে ভুল সংশোধন করা হবে। আমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২৫ সালের নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে শিক্ষা ব্যবস্থার রূপান্তর হবে।
সপ্তম শ্রেণির সাধারণ বিজ্ঞান বইয়ের চৌর্যবৃত্তির অভিযোগের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, নতুন শিক্ষাক্রমের সব বইয়ের পরীক্ষামূলক সংস্করণ ছাপানো হয়েছে। আমরা পরবর্তী সংস্করণে প্রয়োজনীয় সংশোধন করবো।
এবার শ্রেণিভেদে শিক্ষার্থীরা দুই ধরনের বই হাতে পেয়েছে। এর মধ্যে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে নতুন বই হাতে পেয়েছে। আর অন্যান্য শ্রেণির শিক্ষার্থীরা পুরোনো শিক্ষাক্রমের আলোকে বই হাতে পেয়েছে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, নতুন শিক্ষাক্রমের জন্য ছাপানো পাঠ্যপুস্তকের ভুল সংশোধনে এবং কেন ভুল হল তা তদন্তে দুটি কমিটি কাজ করবে। একটি কমিটি বিশেষজ্ঞদের নিয়ে, যারা কাজ করবেন ভুল সংশোধন নিয়ে। অন্য কমিটি হবে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে, যারা এ ঘটনার পেছনে কারো ইচ্ছাকৃত ভুল বা অস্থিরতা সৃষ্টির উদ্দেশ্য ছিল কি না তা অনুসন্ধান করবে।