যুগোপযোগী শিক্ষা বাস্তবায়নে বছরের শুরুতে নতুন কারিকুলামের বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিয়েছে সরকার। বই বিতরণের কয়েকদিনের মধ্যেই পাঠ্যবইতে নানা ভুল নিয়ে শুরু হয় বিতর্ক। এ নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
ভুলের বিষয়টি নিয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) প্রথমে নিরব থাকলেও কর্তৃপক্ষ পরবর্তীতে বিবৃতি দিয়ে সেটি স্বীকার করেছে৷ সর্বশেষ সংশোধিত বিষয়গুলো ওয়েবসাইটে প্রকাশেরও নির্দেশ দিয়েছে এনসিটিবি।
এ ঘটনায় অভিভাবক ও শিক্ষাবিদরা ‘বিস্ময়’ প্রকাশ করে পুরো বিষয়টিকে ‘লজ্জাজনক’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনসিটিবির এক কর্মকর্তা রাইজিংবিডির এ প্রতিবেদককে বলেন, পাঠ্যপুস্তকের এমন ভুল মানা যায় না। দায়িত্ব নিয়ে কাজ না করা, আর দায়সারা গোছের কাজের কারণে পাঠ্যবইয়ে এই ভুল। বই প্রণয়নের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ শুধু চাকরি বিবেচনায় করলে হয় না, শতভাগ দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হয়। কিন্তু এখানে অনেকে আসেন শুধু চাকরি করতে, দায়িত্ব পালনের জন্য নয়। তাদের চিহ্নিত করা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
শিক্ষাবিদরা পাঠ্যবইয়ে এমন ভুলের জন্য এনসিটিবির কর্মকর্তাদের দায়িত্বহীনতা ও জবাবদিহি না থাকাকে দায়ী করছেন। তাদের মতে, মূলত দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের অবহেলার কারণে এমন পরিস্থিতি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট প্রত্যেকেই এটার জন্য কমবেশি দায়ী।
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক রাইজিংবিডিকে বলেন, এ ভুলগুলো হয়েছে মূলত অবহেলাজনিত কারণে। একজন শিক্ষার্থীর কাছে পাঠ্যপুস্তক হচ্ছে বাইবেলের মতো। শিক্ষার্থীরা সেটিকে পূর্ণরূপে অনুকরণ করে থাকে। তাই কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জন্য পুস্তক প্রণয়নে সতর্ক দৃষ্টি রাখা জরুরি।
তিনি বলেন, এসব বই প্রণয়নের ক্ষেত্রে যারা মূলত পর্যাপ্ত সময় পান, ফ্রি থাকেন তাদের এ দায়িত্ব দেওয়া উচিত। অনেকের অনেক পদ পদবী থাকতে পারে। কিন্তু তাদের এত ব্যস্ততার মাঝে যথাযথ সময় দেওয়া অনেক সময় হয়ে ওঠে না৷ যার কারণে অনেক ছোট ছোট বিষয় তারা গুরুত্ব দিয়ে দেখেন না। ফলে ভুলগুলো থেকেই যায়। তাই দেখে দেখে যারা শুধু শিক্ষকতা পেশায় আছেন, অন্য কোনো কাজে খুব বেশি ব্যস্ততা নেই তাদেরকেই এসব দায়িত্ব দেওয়া উচিত। তাহলে পাঠ্যপুস্তক নির্ভুল হবে এবং সরকারও বিব্রত হবে না।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা, শিক্ষাবিদ রাশেদা কে চৌধুরী রাইজিংবিডিকে বলেছেন, শিক্ষার্থীদের ইতিহাস জানানোর ক্ষেত্রে তথ্যগত ভুল ঠেকাতে হবে। শিক্ষার্থীরা যাতে কোনোরূপ ভুল কিছুর মধ্য দিয়ে না যায় সেদিকটি অবশ্যই সতর্কতার সাথে দেখতে হবে। এক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, এনসিটিবিসহ সংশ্লিষ্টদের আরও সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মাহফুজা খানম এ প্রতিবেদককে বলেন, পুরো বিষয়টি অনভিপ্রেত ও দুঃখজনক। এটা তো অনেকগুলো ধাপ পেরুতে হয়। যারা লিখেন, জমা দেন, সম্পাদনা করেন, আমি মনে করি এ ধাপগুলো পেরুলো এবং প্রত্যেকে এটার জন্য কমবেশি দায়ী। এ ধরনের ভুল শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের মনে নেতিবাচক ধারণা তৈরি করবে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড জানিয়েছে, যেকোনো অসঙ্গতি বা অভিযোগ পেলেই সেটি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়। নতুন বইয়ে যে ভুল পাওয়া গেছে, তা এরই মধ্যে সংশোধন করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জানানো হয়েছে এবং ওয়েবসাইটে প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগামী বছর নতুন সংস্করণে শিক্ষার্থীরা নতুনভাবে পরিমার্জিত বই পাবে।
ভবিষ্যতে এ ধরনের ভুল এড়াতে সংশ্লিষ্টদের আরও সতর্ক থাকতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছে এনসিটিবি।