চলতি বছরের মার্চে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৩২ হাজার শিক্ষক নিয়োগের প্রাথমিক সুপারিশ করা হয়েছে। এরপর চার মাস অতিবাহিত হতে চললেও এখনো চূড়ান্ত সুপারিশ পাননি শিক্ষকরা। এর ফলে চূড়ান্ত সুপারিশ নিয়ে শিক্ষকরা নানাভাবে জানার চেষ্টা করছেন। তারা বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)-সহ নানা জায়গায় সুপারিশের দাবিও জানিয়ে আসছেন।
প্রাথমিক সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থীরা বলছেন, স্কুল-কলেজে শিক্ষক সংকট থাকায় স্বাভাবিক শিক্ষাকার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক সংকট থাকায় শিক্ষাব্যবস্থার ওপর বিরাট প্রভাব ফেলছে। এ ছাড়া, চূড়ান্ত সুপারিশ না হওয়ায় মানসিক হতাশায় ভুগছেন চাকরিপ্রার্থীরা। এর ফলে পারিবারিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা। অনেকের আর্থিক সংকট আছে। নানা সমস্যা নিয়ে শিক্ষকরা দিনযাপন করছেন।
৪র্থ গণবিজ্ঞপ্তি প্রত্যাশী শিক্ষক ফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইমরান খান রাইজিংবিডিকে বলেন, আমরা ১৬তম নিবন্ধনধারী যারা আছি, খুবই মানবেতর জীবনযাপন করছি। দীর্ঘ পাঁচ বছরেও এখনও শিক্ষক হিসেবে যোগদান করতে পারিনি। চাকরি হওয়ার পরও গ্রামে যেতে পারছি না। অনেকেই ইতোমধ্যে বলতে শুরু করেছে, ‘সত্যিই কি তোমার চাকরি হয়েছে?’ এর কোনও উত্তর দিতে পারি না। এর চেয়ে বড় বিষয় হলো, এই বয়সে বৃদ্ধ বাবা-মায়ের সর্বোপরি পরিবারের দায়িত্ব নেওয়ার কথা। কিন্তু সেই জায়গায় আমি উল্টো তাদের ওপর নির্ভর করছি। তাই খুব দ্রুত যোগদানটা দিলে আমার মত ৩২ হাজার পরিবার বেঁচে যাবে।
তবে এ সুপারিশ নিয়ে শিক্ষকদের চিন্তার কোনও কারণ নেই বলে জানিয়েছেন এনটিআরসিএ সচিব ওবায়দুর রহমান। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আমরা শিক্ষকদের চূড়ান্ত সুপারিশ নিয়ে চিন্তা করছি। শিক্ষকদের কাগজপত্র নিয়ে কিছু জটিলতা আছে। সেটি সম্পন্ন হলে আমরা অবশ্যই যত দ্রুত সম্ভব চূড়ান্ত সুপারিশের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আবেদন করবো’।
ঠিক কোন মাসে সুপারিশ করা যেতে পারে- এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা এখনও কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করছি। কাগজপত্রে নানা ধরনের জটিলতা আছে। সেগুলোর কাজ শেষ না করে সঠিক সময় বলে দেওয়া উচিত হবে। তবে আশা করছি, আগস্টের মধ্যে সুপারিশ করতে পারবো’।
তিনি আরও বলেন, ‘যদি তারও আগে আমরা কাগজপত্রের কাজ শেষ করতে পারি তাহলে আগেই সুপারিশ করতে পারবো। আমরা চেষ্টা করছি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শিক্ষকদের সুপারিশ করতে। প্রার্থীদের পুলিশ ভেরিফিকেশন চলমান রেখেই চূড়ান্ত সুপারিশ করা হবে’।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ২২ ডিসেম্বর ৬৮ হাজার ৩৯০ জন শিক্ষক নিয়োগের চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে এনটিআরসিএ। এর মধ্যে স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে ৩১ হাজার ৫০৮ জন এবং মাদ্রাসা, ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা ও কারিগরি স্কুল-কলেজে ৩৬ হাজার ৮৮২ জন নিয়োগ দেওয়ার কথা বলা হয়।
চলতি বছরের মার্চে ৩২ হাজার ৪৩৮ জনকে নিয়োগের প্রাথমিক সুপারিশ করা হয়। এর প্রায় দেড় মাস পর গত ২৭ এপ্রিল থেকে ৩১ মে পর্যন্ত তাদের চূড়ান্ত সুপারিশের জন্য অনলাইনে ভি-রোল ফরম পূরণের নির্দেশ দেয় এনটিআরসিএ। ভি-রোল ফরম পূরণের মেয়াদ তিন দফায় বাড়িয়ে ৩০ জুন করা হয়।