রাজধানীর শেরে বাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয়ের গভর্নিং বডির সভাপতি রিয়াজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ ও যৌন হয়রানির অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। তদন্ত শেষে এমনটাই উল্লেখ করে প্রতিবেদন দাখিল করেছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি।
অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, অধ্যক্ষ, সকল শিক্ষক ও ব্যাংক হিসাব বিবরণী অনুযায়ী ২০২১ সালের অক্টোবরে সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণকালে প্রতিষ্ঠানটির এফডিআরের পরিমাণ ছিল ৭ কোটি ৯৯ লাখ ৬৬ হাজার ৫০০ টাকা। চলতি বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি গ্রহণকালে এফডিআর আত্মসাৎ নয়, বরং এর পরিমাণ বাড়িয়ে তিনি রেখে যান ৮ কোটি ২৮ লাখ ১৩ হাজার ১৭৫ টাকা। অর্থ আত্মসাতের পুরো অভিযোগ ভিত্তিহীন।
শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের বিষয়ে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, প্রতিষ্ঠানটিতে উচ্চমাধ্যমিক শাখায় শিক্ষক সংখ্যা ১৭ জন, মাধ্যমিক শাখায় ৩৬ জন, প্রাথমিক শাখায় ১৯ জন, কর্মচারী (৩য় ও ৪র্থ শ্রেণি) ২২ জন। এসব শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে কতিপয় শিক্ষক-কর্মচারী প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ বিষয়সহ স্থানীয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত এবং বিভিন্ন সময়ে প্রতিষ্ঠানের সাবেক সভাপতিদের মাধ্যমে নিয়োগ পান। সর্বশেষ সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন যখনই বিধিসম্মতভাবে প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় উদ্যোগী হন, ঠিক তখনই কতিপয় শিক্ষক ও স্থানীয় কিছু ব্যক্তির প্রতিহিংসার শিকার হন তিনি।
শিক্ষিকাদের যৌন হয়রানির বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক-শিক্ষিরা তাদের যৌথ লিখিত বক্তব্যে জানিয়েছেন, সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন প্রতিষ্ঠানটিকে সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনার জন্য শিক্ষকদের ড্রেস কোড হিসেবে শাড়ি এবং পর্দানশীন শিক্ষকদের অ্যাপ্রোন ক্রয়ের জন্য ৫০০ টাকা করে প্রদানসহ মহিলা ও পুরুষ শিক্ষকদের আলাদা কক্ষে বসার ব্যবস্থা করেন। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে পুরো প্রতিষ্ঠানে তিনি সিসি ক্যামেরার আওতায় আনেন। প্রতিষ্ঠান চলাকালে অনেক অভিভাবক নানাবিধ কারণ দেখিয়ে প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে অবস্থান করে গল্প-গুজব করা, নানা পণ্যের ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করার বিষয়টি দৃষ্টিগোচর হলে তাদের এমন তৎপরতাও বন্ধ করেন তিনি। এতে কুচক্রী মহলের ষড়যন্ত্রের রোষানলে পড়েন তিনি। অথচ তিনিই আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিভিন্ন ধরনের সহশিক্ষা কার্যক্রম চালু করেন বলে তদন্ত দলকে জানান প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকরা।
যৌন হয়রানির বিষয়ে তদন্ত কমিটিকে অধ্যক্ষ জানান, এ সংক্রান্তে আদৌ কোনও শিক্ষিকা লিখিত কিংবা মৌখিক অভিযোগই করেননি। শিক্ষা বোর্ডের তদন্তেও এ সংক্রান্তে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ কিংবা প্রমাণ পাওয়া যায়নি। পুরো বিষয়টিই তাকে সামাজিক, পারিবারিক ও মানসিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার লক্ষ্যে স্বার্থান্বেষী কতিপয় শিক্ষক ও কুচক্রী মহলের চক্রান্তের বহিঃপ্রকাশ বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করে তদন্ত কমিটি।