শিক্ষা

১৮তম শিক্ষক নিবন্ধন: খাতা পুনর্মূল্যায়ন চাওয়া প্রার্থীদের লাঞ্ছিতের অভিযোগ

বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ১৮তম নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষার খাতা পুনঃমূল্যায়ন চেয়ে অবস্থান নেওয়া প্রার্থীরা লাঞ্ছিত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) সকাল ১০টা থেকে খাতা পুনঃমূল্যায়নের দাবিতে এনটিআরসিএ এর মূল ফটকে মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীবৃন্দের ব্যানারে তারা এ কর্মসূচি পালন করেন।

এতে মো. আব্দুর রাকিব, শারমিন চৌধুরী, শাহীনুল ইসলাম, আয়েশা সিদ্দিকা, সুজন শরীফ, ওমর ফারুক, মেহেদী হাসান প্রমুখ প্রার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। পরে দুপুর ২টার দিকে এনটিআরসিএ এর চেয়ারম্যান বরাবর স্মারকলিপি প্রদান শেষে আবারও মানববন্ধন শুরু করলে এ লাঞ্ছিতের ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, এনটিআরসিএ এর ব্যবস্থাপনায় ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের স্কুল পর্যায়ের লিখিত পরীক্ষা গত ১২ জুলাই এবং কলেজ পর্যায়ের লিখিত পরীক্ষা গত ১৩ জুলাই অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় তিন মাস পর গত ১৪ অক্টোবর লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ করে। এতে উত্তীর্ণ হন মোট ৮৩ হাজার ৮৬৫ জন। তবে এ ফলাফল যথাযথভাবে হয়নি বলে দাবি করেছেন পরীক্ষায় অকৃতকার্যরা। তাদের অভিযোগ পরীক্ষার খাতা যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা হয়।

ভুক্তভোগী শিক্ষক নিবন্ধন প্রার্থীদের পক্ষে মো. আব্দুর রাকিব অভিযোগ করে বলেন, ‘আমরা অকৃতকার্য হওয়ার মতো পরীক্ষা দেইনি। কিন্তু আমাদের খাতা ভালোভাবে মূল্যায়ন না করে ইচ্ছেমতো ফেল করানো হয়েছে। এজন্য আমরা খাতা পুনঃমূল্যায়নের দাবিতে বৃহস্পতিবার এনটিআরসি অফিসের সামনে মানববন্ধন করি এবং চেয়ারম্যানের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করি। স্মারকলিপিতে দাবি করেছি, আমাদের সমস্যাগুলোর সমাধান করে তিনি যেন সুনির্দিষ্ট সমাধান প্রদান করেন। কিন্তু তিনি আমাদের কোনো দাবি মেনে নেননি। এমনকি এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নিতেও ইচ্ছুক নন বলে জানান। এরপর আমরা এনটিআরসি গেটের সামনে মানববন্ধন শুরু করি।

তিনি অভিযোগ করেন, এনটিআরসি চেয়ারম্যানের নির্দেশে ওই অফিসের কর্মকর্তারা আমাদের মানববন্ধন বন্ধ করতে বলেন এবং এক পর্যায়ে তারা আমাদের ব্যানার কেড়ে নিয়ে অতর্কিত হামলা চালান। এতে ওমর ফারুক, মেহেদী হাসান, আয়েশা সিদ্দিকা, শাহীনুল ইসলাম, সুজন শরীফসহ অনেকে আহত হন। এছাড়া ১০ জনকে ভিতরে আটকে রেখে মারধর করেন এবং মোবাইল ছিনিয়ে নেন। কিছুক্ষণ পর মোবাইলে ধারণকৃত ভিডিও ও ছবি মুছে দিয়ে সবাইকে ছেড়ে দেন তারা। এমনকি পুলিশ দিয়েও মোবাইল তল্লাশি করিয়ে ভিডিও ও ছবি মুছে ফেলেন তারা।

মারধরে আহতরা বিভিন্ন মেডিক্যাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।

এ জানতে চেয়ে নিবন্ধন পরীক্ষা মূল্যায়ন ও প্রত্যয়ন সদস্য (যুগ্মসচিব) মুহম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকীর মোবাইলে একাধিকবার কল দিলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। পরে এনটিআরসিএ’র চেয়ারম্যান মোহাম্মাদ মফিজুর রহমানকে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

১৮তম শিক্ষক নিবন্ধন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীবৃন্দের ব্যানারে দেওয়া স্মারকলিপিতে উল্লেখিত দাবিগুলো হলো- অতিদ্রুত পরীক্ষার খাতা যোগ্য এবং এনটিআরসিএ সিলেবাস বিষয়ে অভিজ্ঞ শিক্ষকমণ্ডলী দ্বারা খাতা পুনর্মূল্যায়নের ব্যবস্থা করতে হবে; শারীরিক শিক্ষার খাতাগুলো মূল্যায়নের দায়িত্বভার অবশ্যই দেশের স্বনামধন্য সরকারি ছয়টি শারীরিক শিক্ষা কলেজের শিক্ষকদের দিতে হবে; নিরীক্ষককে অবশ্যই পদমর্যাদার ক্ষেত্রে কমপক্ষে প্রভাষক হতে হবে।

এছাড়া সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান না করে অবশ্যই ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের মৌখিক পরীক্ষা ও ১৯তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার ঘোষণা দেওয়া যাবে না; খাতাগুলো পুনরায় মূল্যায়ন করা না হলে অকৃতকার্য হওয়ার কারণ প্রমাণ সহকারে জানাতে হবে; অকৃতকার্য হওয়ার পিছনে অন্য কারণ আছে কিনা তা অবশ্যই তদন্ত করতে হবে; অযোগ্য এনটিআরসিএ এর চেয়ারম্যানের পদত্যাগ করতে হবে এবং আবেদনের তারিখ থেকে বয়স বিবেচনা করতে হবে বলে দাবি করা হয়।