আজকের শিক্ষার্থী আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। আজকের শিক্ষার্থীদের হাতেই আগামী দিনের বাংলাদেশের নেতৃত্ব আসবে। যুগোপযোগী জ্ঞানে শিক্ষিত হয়ে তারা বিভিন্ন বিষয়ে নিজেদের মূল্যবান মতামত দিতে পারছে। শিক্ষার্থীদের মতামত গ্রহণের মাধ্যমে দেশে শিক্ষা ও গবেষণার উন্নয়ন সম্ভব।
ইউএসএএইডের অর্থায়নে ও ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের আয়োজনে ‘আমিও জিততে চাই’ ক্যাম্পেইনের আওতায় সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) অনুষ্ঠিত আলোচনায় উঠে আসে এসব পরামর্শ।
এই আয়োজনে ছিল বিতর্ক পর্ব, সচেতনতামূলক মঞ্চনাটক, উন্মুক্ত আলোচনা, কুইজ প্রতিযোগীতা, প্যানেল আলোচনা প্রভৃতি।
‘বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা সংস্কারে তারুণ্যের প্রত্যাশা’ শীর্ষক এই প্যানেল আলোচনায় অংশগ্রণ করেন জাবি’র ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ডা. এটিএম আতিকুর রহমান, দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সৈয়দ মঈনুল আলম নিজার, জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য মুশফিক উস সালেহীন এবং জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক সুমাইয়া জাহান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন চ্যানেল টুয়েন্টিফোরের সাংবাদিক এবং সংবাদ উপস্থাপিকা শায়লা রহমান ইমা।
আলোচনায় ডা. এটিএম আতিকুর রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আমাদের প্রত্যাশা পূরণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। শিক্ষক রাজনীতির অপব্যবহার ও শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধা ও গবেষণার মূল্যায়ন না থাকার ফলে ব্যহত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা পরিবেশ। সেইসঙ্গে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভালো মানুষ এবং দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করতে পারছে না।
সহযোগী অধ্যাপক সৈয়দ নিজার বলেন, শিক্ষা ও গবেষণায় বরাদ্দের দিক থেকে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। এখানকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বরাদ্দ বেশি থাকে অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য, যেখানে টেন্ডারবাজির সুযোগ আছে। বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিতে হলে গবেষণায় বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপাশি শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে বলে মনে করেন তিনি। এছাড়া পাঠদান নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থার পাশাপাশি গবেষণানির্ভর পদ্ধতি চালুর প্রস্তাব রাখেন তিনি।
প্যানেল আলোচনা শেষে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের ডেপুটি চিফ অব পার্টি (প্রোগ্রামস) আমিনুল এহসান। এসময় তিনি ক্যাম্পেইন সম্পর্কে বলেন, ‘আমিও জিততে চাই’ প্লাটফর্মের মাধ্যমে যখনই প্রয়োজন তখনই আপনার চাওয়া জানাতে পারবেন, আমরা সেটা ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করবো। আমাদের অধিকারের প্রতি আমাদের সোচ্চার থাকতে হবে।
এর আগে, অনুষ্ঠানের শুরুতেই ‘এই সংসদ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক মূল্যায়ন সমর্থন করে’ শিরোনামে বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়। বিতর্কে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে পক্ষে লড়েছেন ফারিম আহসান, জাহিদুল ইসলাম এবং সাদমান অলীভ। বিপক্ষে ছিলেন রাতুল হাসান, আহনাফ তাহসীন খান এবং মির্জা সাকি। বিতর্কের স্পিকারের দায়িত্ব পালন করেন শেখ মো. তৌহিদুর রহমান সিউল।
বিতর্ক অনুষ্ঠানের পর শুরু হয় মঞ্চনাটক। একটি ক্যাম্পাসের ক্যান্টিনের আড্ডা, তিন বন্ধুর সখ্যতা এবং সমাজের অসঙ্গতি ফুটে উঠেছে এই নাটকে। ইন্টারনেটের মেয়াদ নিয়ে অসন্তুষ্টি, বাজারে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ও পরিবেশে পলিথিনের বাজে প্রভাব নিয়ে গল্পোচ্ছ্বলে বার্তা দিয়েছেন নাটকটির অভিনেতা অভিনেত্রীরা। এছাড়াও ছিল, নাগরিক অসুবিধা, অসামাজিক পরিবেশ, শিক্ষার্থীদের পক্ষে না থেকে ছাত্রসংসদের রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে গড়ে উঠা, ইভটিজিং, মবজাস্টিসসহ আরো অনেক অসঙ্গতির উত্থাপন। পাশাপাশি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংবিধানের ৩৯ নং ধারা নিয়েও সচেতনতামূলক বার্তা দেয়া হয় নাটকে। ৩৯ নং ধারায় বলা হয়েছে, (১) চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতার নিশ্চয়তাদান করা হইল। (২) রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, বিদেশী রাষ্ট্রসমূহের সহিত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, জনশৃঙ্খলা, শালীনতা ও নৈতিকতার স্বার্থে কিংবা আদালত-অবমাননা, মানহানি বা অপরাধ-সংঘটনে প্ররোচনা সম্পর্কে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ-সাপেক্ষে (ক) প্রত্যেক নাগরিকের বাক্ ও ভাবপ্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারের, এবং (খ) সংবাদক্ষেত্রের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দান করা হইল।
ইউএসএআইডির স্ট্রেনদেনিং পলিটিক্যাল ল্যান্ডস্কেপ (এসপিল) প্রকল্পের আওতায় ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল ‘আমিও জিততে চাই’ ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে নাগরিক প্রত্যাশা তুলে ধরতে সারা দেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও জেলায় আলোচনা, নাট্য প্রদর্শনী, বিতর্ক প্রতিযোগিতাসহ নানা কর্মসূচি পরিচালিত হচ্ছে।