শিক্ষা

শিক্ষাঙ্গন: বছরজুড়ে যত আলোচিত ঘটনা

করোনা মহামারির পর ২০২৪ সাল ছিল শিক্ষা খাতে অন্যতম আলোচিত একটি বছর। জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের প্রভাব পড়ে শিক্ষা খাতেও। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অধিকাংশ স্বায়ত্তশাসিত ও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য, সহ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষসহ শীর্ষ পর্যায়ের শিক্ষক-কর্মকর্তারা পদত্যাগ করেন।

ফলে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। এমনকি অনেক স্কুল-কলেজে শিক্ষকদের পদত্যাগে বাধ্য করেছিলেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এই অবস্থায় শিক্ষা খাত এবং শিক্ষাপ্রশাসন নিয়ন্ত্রণে আনা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল।

বছরের শুরুতে তৎকালীন আওয়ামী লীগের আমলেও পাঠ্যবই পরবির্তন এবং শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে অসন্তোষ এবং আন্দোলন হয়েছিল। তবে সরকার পতনের পর বিষয়টি নতুন করে আবার আলোচনায় আসে। বছরের মাঝামাঝিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে। এর বাইরে পরীক্ষা বাতিলের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণার দাবি, পাঠ্যপুস্তক, শিক্ষানীতি, শিক্ষা পদ্ধতি পরিবর্তন-পরিমার্জনসহ শিক্ষার্থীদের নানা দাবি-দাওয়া নিয়েও আলোচনায় ছিল ২০২৪ সাল। এবার এইচএসসি পরীক্ষার ধরন পরিবর্তনসহ নানা পরিবর্তন এসছে শিক্ষা খাতে। পরিবর্তন হয়েছিল কারিকুলামেও। স্কুলের পাঠ্যবই থেকে শেখ হাসিনার ছবি বাদ দিয়ে এতে যুক্ত করা হয় জুলাই বিপ্লবের গল্প ও গ্রাফিতি। এছাড়া অন্যান্য বিষয়ও আলোচনায় ছিল বছরজুড়ে।

মাঝপথে বাতিল হয় এইচএসসি পরীক্ষা কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কয়েক দফায় এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। প্রথমে ১৮ জুলাইয়ের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। এরপর একসঙ্গে ২১, ২৩ ও ২৫ জুলাইয়ের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। সবশেষ গত ২৮ জুলাই থেকে ১ আগস্ট পর্যন্ত পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। পরে সিদ্ধান্ত হয় ১১ আগস্ট থেকে নতুন সময়সূচিতে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা নেওয়া হবে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের আন্দোলন সচিবালয়ে ঢুকে বিক্ষোভের কারণে এইচএসসি পরীক্ষার স্থগিত হওয়া পরীক্ষাগুলো বাতিল করতে বাধ্য হয় শিক্ষা প্রশাসন। পরে এসএসসি পরীক্ষার নম্বরের ভিত্তিতে এইচএসসির ফলাফল নির্ণয়ের সিদ্ধান্ত হয়।

অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য পরিবর্তন বর্তমানে দেশে ৫৫টি স্বায়ত্তশাসিত ও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় চালু আছে। এর মধ্যে স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় চারটি। বাকি ৫১টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সেই সরকারের নিয়োগ দেওয়া প্রায় সব কটি স্বায়ত্তশাসিত ও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য, সহ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষসহ শীর্ষ পর্যায়ের শিক্ষক-কর্মকর্তারা পদত্যাগ করেন। ফলে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। অন্তর্বর্তী সরকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া শুরু করে।

পর্যায়ক্রমে উপাচার্য নিয়োগের মাধ্যমে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অচলাবস্থা কাটে। এখন পর্যন্ত অন্তত ৩২টি বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন উপাচার্য (ভিসি) নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বাকিগুলোতে নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে।

পাঠ্যবইয়ে যত পরিবর্তন গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের বইয়ে নানা পরিবর্তন এসেছে। থাকছে না সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ও তার উদ্ধৃতি। নতুন করে যুক্ত হচ্ছে জুলাই অভ্যুত্থানের গ্রাফিতি বা দেয়ালে আঁকা ছবি।

পরিমার্জনের মাধ্যমে বেশ কিছু পাঠ্যপুস্তকে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের চেতনার প্রতিফলন থাকছে। এছাড়া বইয়ে পুরনো টেন্ডারও বাতিল করা হচ্ছে। তবে যেহেতু এবার বছরের প্রায় শেষ প্রান্তে বইয়ের পুরনো টেন্ডার বাতিল করে নতুন টেন্ডার আহ্বান করা হয়। তাই বিনামূল্যের পাঠ্য বই ছাপাতে কিছুটা বিলম্ব হবে বলে জানানো হয়।

এনসিটিবির একাধিক কর্মকর্তা জানান, পরিমার্জনের মাধ্যমে বেশ কিছু পাঠ্যপুস্তকে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের চেতনার প্রতিফলন থাকছে।তবে যেহেতু এই অভ্যুত্থানের বিষয়টি অতি নিকট ইতিহাস এবং এবার সময়ও কম, তাই লেখা হিসেবে না রেখে কিছু পাঠ্যবইয়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের গ্রাফিতি বা দেয়ালে আঁকা ছবি ইত্যাদি বিষয় রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এ ব্যাপারে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার জানিয়েছেন, একটি দেশকে বই ছাপানোর জন্য টেন্ডার দেওয়া হয়েছিল, গত ৫ আগস্টের পরে তা বাতিল করা হয়েছে। নতুন বইয়ে বেশ কিছু সংস্কার ও সংযোজন করা হচ্ছে। যে কারণে বই ছাপাতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে।

পুরোনো টেন্ডার বাতিল করে নতুন টেন্ডার ও সংস্কারের কারণে গত বছরগুলোর মতো আগামী ১ জানুয়ারি বই উৎসব হচ্ছে না। তবে জানুয়ারি মাসের মধ্যেই প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছে দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।

বাতিল হচ্ছে ২০১০ সালের শিক্ষানীতি শেখ হাসিনা সরকারের আমলে ২০১০ সালে গৃহীত শিক্ষানীতিকে ‘অনুপযোগী ও অবাস্তবায়নযোগ্য’ বলছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। নতুন শিক্ষানীতি প্রণয়নে শিগগিরই আরেকটি শিক্ষা কমিশন গঠন করা হবে।

স্বাধীনতার পর থেকে দেশে প্রণয়ন করা ছয়টি শিক্ষানীতি সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে বাতিল হয়েছে। এবারও পুরোনো শিক্ষানীতি বাতিল করে নতুন শিক্ষানীতি প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম বলেন, “আমরা বর্তমান শিক্ষানীতি বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। শিগগিরই একটি নতুন শিক্ষানীতি প্রণয়নের জন্য একটি নতুন শিক্ষা কমিশন ঘোষণা করা হবে। আমরা নিশ্চিত যে এই কমিশন একটি চমৎকার কাজ করবে।”

২০১০ সালের শিক্ষানীতি বাতিলের সম্পর্কে অধ্যাপক আমিনুল বলেন, “এটা সম্পূর্ণ অনুপযোগী এবং এতে কোনো লাভ হবে না। বর্তমান শিক্ষানীতির অনেক বড় একটা অংশ বাস্তবায়িত হয়নি, যা প্রমাণ করে যে এটি ‘অবাস্তবায়নযোগ্য’।”

তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে আন্দোলন সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ছিল বছরের একটি আলোচিত ঘটনা। আন্দোলন চলাকালে তারা গত ১৮ নভেম্বর মহাখালী রেলগেট অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। তখন তারা একটি চলন্ত ট্রেনকে লক্ষ্য করে পাথর ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করায় শিশুসহ কয়েকজন আহত হয়। আহত ও রক্তাক্তদের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, বিশেষ করে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন।

ফেসবুকে অনেকেই হ্যাশট্যাগ দিয়ে ‘বয়কট তিতুমীর কলেজ’ লিখেন। কেউ কেউ আবার এও ঘোষণা দিয়েছেন যে তিতুমীর কলেজের কোনো শিক্ষার্থী যদি চাকরির জন্য সিভি জমা দেয়, তাহলে তাকে চাকরি দেওয়া তো পরের বিষয়, সেই সিভি গ্রহণই করা হবে না।

তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করা সম্ভব কিনা খতিয়ে দেখতে সাত কর্ম দিবসের মধ্যে কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরই মধ্যে শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বৈঠক করেন অন্তর্বর্তী সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা করেন শিক্ষার্থীরা।

সমস্যা আর দাবির বৃত্তে ঘুরছে সাত কলেজ প্রায় সাত বছর আট মাস আগে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা রাজধানীর সাতটি বড় সরকারি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু এই কলেজগুলোর উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য প্রত্যাশিত পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ফলে শুরু থেকেই এখন পর্যন্ত পরীক্ষা ও ফল প্রকাশে বিলম্ব হওয়াসহ নানা ধরনের সমস্যা আর দাবি-দাওয়ার আন্দোলনের বৃত্তেই ঘুরছে সুপরিচিত এই কলেজগুলো।

এই সাত সরকারি কলেজের শিক্ষা ও প্রশাসনিক সমস্যা নিরসনে গত ২৪ অক্টোবর কমিটি গঠন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে শিক্ষার্থীরা বলছেন, যারা উচ্চশিক্ষা নিয়ে ভাবেন, এমন ব্যক্তিদের নিয়ে একটি কমিশন গঠন করে দ্রুত এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা সরকারি কলেজগুলোকে সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি প্রথম দফায় রাজধানীর সাতটি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। কলেজগুলো হচ্ছে ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ।

এদিকে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে শিক্ষার্থীরা তাদের কয়েক দফা দাবি জানিয়ে আন্দোলন শুরু করে। এতে রাজধানীর কয়েকট গুরুত্বপূর্ণ সড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। গত ৬ নভেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদের আশ্বাসে সন্তুষ্ট হয়ে চলমান আন্দোলন-কর্মসূচি সাময়িক স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেন স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে আন্দোলনরত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাতটি বড় সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা।

তিন কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে রণক্ষেত্র যাত্রাবাড়ী ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে গত ২৫ নভেম্বর তিন কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় ওই এলাকা। এদিন দুপুর ১২টার সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল সরকারি কলেজের কয়েকশ শিক্ষার্থী ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। তারা কলেজ ভবন ভাঙচুর ও প্রতিষ্ঠান থেকে মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে যায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়। এ হামলা ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ায় ৫০ জনের বেশি আহত হয়। এর মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২০ জন এবং যাত্রাবাড়ী ও মাতুয়াইলের স্থানীয় ক্লিনিকে অন্তত ৩৩ জন চিকিৎসা নিয়েছেন বলে খবর পাওয়া যায়।

ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজসহ এক ডজনের বেশি কলেজের হাজারো শিক্ষার্থী পুরান ঢাকার কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজে হামলার একদিন পর এ হামলার ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ঘটনার দিন দুপুরে কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ ক্যাম্পাসে জড়ো হয়ে লাঠি ও লোহার রড নিয়ে মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের দিকে মিছিল নিয়ে যায়। সংঘর্ষ চলাকালে শিক্ষার্থীরা হামলা ও একে অপরকে লক্ষ্য করে ইটের টুকরো নিক্ষেপ করে। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে যায়।

ড. মাহবুবুর রহমান কলেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফ সামীর বলেন, ‘‘শিক্ষার্থীর নাম ধরে লোকজন ক্লাস চলাকালীন আমাদের শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের ওপর হামলা চালায়। তারা প্রতিটি রুমে ভাঙচুর করে এবং লুটতরাজ চালায়। হামলায় শতাধিক শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী আহত হয়ে আশেপাশের হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।”

সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট হাসপাতালে। অভিযোগ ওঠে, চিকিৎসকের গাফিলতির কারণে ডা. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী অভিজিতের মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুর বিচার দাবি করে ২৪ নভেম্বর দুপুর থেকেই বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট হাসপাতাল ঘেরাও করেন। এক পর্যায়ে এই বিক্ষোভ সংঘর্ষে রূপ নেয়। হাসপাতাল ছাড়াও সোহরাওয়ার্দী ও কবি নজরুল কলেজেও ভাঙচুর চালানো হয়।

এর জের ধরে পরের দিন ২৫ নভেম্বর শিক্ষার্থীরা সড়কে জড়ো হয়ে লাঠিসোঁটা নিয়ে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় এবং এই ঘটনয় বহু শিক্ষার্থী আহত হন।

বহাল থাকছে শনিবারের ছুটি ‘২০২৫ সাল থেকে শনিবারও স্কুল খোলা থাকবে’ এমন একটি তথ্য ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ জানান অনেকে। ওই সময় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) পক্ষ থেকে জানানো হয়, তথ্যটি সঠিক নয়। শেষ পর্যন্ত শনিবার স্কুল বন্ধ না খোলা, বিষয়টি স্পষ্ট করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

২৩ ডিসেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রকাশিত মাধ্যমিক ও নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছুটির তালিকায় বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়। প্রকাশিত তালিকায় ৭৬ দিন স্কুল বন্ধ থাকবে বলে জানানো হয়েছে। প্রকাশিত শিক্ষাপঞ্জি ও ছুটির তালিকায় শুক্র ও শনিবার দুই দিন সাপ্তাহিক ছুটি বহাল রাখা হয়েছে।

পাঠ্যবইয়ের পাতা ছিঁড়ে আলোচনায় ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক আসিফ মাহতাব গত ২২ জানুয়ারি সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ের ‘শরীফ থেকে শরীফা’র গল্পের পাতা ছিঁড়ে প্রতিবাদ করা ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিলোসফির খণ্ডকালীন শিক্ষক আসিফ মাহতাবকে চাকরিচ্যুত করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তাকে আর ক্লাস নিতে না যাওয়ার জন্য মুঠোফোনে জানিয়ে দেওয়া হয়।

এদিন রাতে তিনি নিজের ফেসবুকে এ সংক্রান্ত একটি স্ট্যাটাস দেন। ফেসবুক স্ট্যাটাসে আসিফ মাহতাব লেখেন, আজকে আমি ব্র্যাকে রেগুলার ক্লাস নিয়েছি। আমাকে (রাত ১১টা) এইমাত্র ফোন করে জানানো হয়েছে, আমি যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে আর ক্লাস না নিতে না যাই। আমি জানি না, হঠাৎ কেন তারা এই সিদ্ধান্ত নিলো। আমাকে কোনো কারণ জানানো হয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয়টির জনসংযোগ কর্মকর্তা ফাতিয়াস ফাহমিদ বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দিয়েছে। কেন তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে, তার পূর্ণাঙ্গ আনুষঙ্গিক ব্যাখ্যা দেওয়া হবে।”

রাজধানীর কাকরাইলে ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে ‘বর্তমান কারিকুলামে নতুন পাঠ্যপুস্তক: বাস্তবতা ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক সেমিনারে শিক্ষক আসিফ মাহতাব এ প্রতিবাদ জানান। এই সেমিনারের আয়োজন করে জাতীয় শিক্ষক ফোরাম। ওই অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘‘সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে ট্রান্সজেন্ডারের গল্প ঢুকিয়ে শিক্ষার্থীদের মগজধোলাই করা হচ্ছে। এ সময় এই পাঠ্যবই থেকে ‘শরীফ থেকে শরীফা’ হওয়ার গল্পের পাতা ছিঁড়ে ফেলেন তিনি। বিষয় নিয়ে উত্তপ্ত হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমও। শিক্ষার্থীরা তাকে চাকরিতে বহালের দাবি জানান।