রাহাত সাইফুল : যুগে যুগে মাকে নিয়ে অনেক গান রচিত হয়েছে। বাংলাদেশেও মাকে নিয়ে অসংখ্য জনপ্রিয় গান রচিত হয়েছে। এসব গানের মধ্যে ‘আম্মাজান’ গানটি অন্যতম। ১৯৯৯ সালের ২৫ জুন মুক্তি পায় ‘আম্মাজান’ সিনেমাটি। এটি পরিচালনা করেন কাজী হায়াৎ। এতেই ব্যবহার করা হয় এই গান। মুক্তির পর তখন তুমুল জনপ্রিয়তা লাভ করে এটি। গানটির কথা মনে হলে মনের অজান্তেই মায়ের প্রতি সম্মানবোধটা আরো বেড়ে যায়। ‘আম্মাজান আম্মাজান, চোখের মনি আম্মাজান/বুকের ধ্বনি আম্মাজান, প্রাণের খনি আম্মাজান/আম্মাজান আম্মাজান আপনি বড়ই মেহেরবান, জন্ম দিয়াছেন আমায়, আপনার দুগ্ধ করছি পান/সবার আগে আমি আমার আম্মাজান রে চিনি রে আম্মাজানরে চিনি’ এমন হৃদয়স্পর্শী কথার গানটির লিখেছেন বিখ্যাত সংগীত ব্যক্তিত্ব আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। সুর ও সংগীত পরিচালনাও করেছেন তিনি। গানটি লেখা ও সুর কীভাবে হয়েছে-পেছনের সেই গল্প রাইজিংবিডিকে জানিয়েছেন আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। ‘আম্মাজান’ গানের শুরু যেভাবে : ‘আম্মাজান’ সিনেমাটি নির্মাণ করেন বিশিষ্ট পরিচালক কাজী হায়াৎ। তিনি কখনো গান নিয়ে আমার সঙ্গে বসতেন না। এ বিষয়ে তিনি আমাকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিতেন। তার বিশ্বাস আমাকে স্বাধীনতা দিলে ভালো কিছুই হবে। স্বাধীনতা ঠিকই দিয়েছিলেন কিন্তু আমাকে বলেছিলেন, ‘বুলবুল তুমি এমন একটা গান লিখবে যে গানটির কথা ও সুর দেয়ার পর মাকে নিয়ে লেখা অন্য কোনো গান তোমার লেখা গানের সামনে দাঁড়াতে না পারে।’ সিনেমার গল্পটাও তিনি আমাকে শুনিয়েছিলেন। এই সিনেমায় মায়ের সুখের জন্য পৃথিবীতে সবকিছু করতে পারেন নায়ক মান্না। তারপর আমাকে অনেক চিন্তা-ভাবনা করে গানটি লিখতে ও সুর করতে হয়েছে। ‘আম্মাজান’ গানের গভীরতা : মাকে নিয়ে আরো অনেক গান রচিত হয়েছে। আমি ভাবলাম, এমন একটি গান লিখব যার কথার মধ্যে অনেক গভীরতা থাকবে। মক্কার ধুলো, মদিনার ধুলো, এই মাটি দিয়ে গড়া মায়ের দেহ। এসব কথাগুলো খুব চিন্তা-ভাবনা করে আনতে হয়েছে। ধর্মীয় অনুভূতিতে যেন আঘাত না লাগে এবং সুরটা এমনভাবে করেছি যা একটি শিশুও গাইতে পারবে। এই গানের সুর এমনভাবে তৈরি করেছি যা কেউ ভাঙতে পারবে না। অন্যভাবে গাওয়ারও উপায় নেই। গানের কথা ভালো হলে, সুরটা সাধারণ হলে সাধারণ মানুষও তা গাইতে পারেন। ‘আম্মাজান’ গানটির সঙ্গে আইয়ুব বাচ্চু যেভাবে যুক্ত হলেন : বাচ্চুর কথা মাথায় রেখেই এই গানটি আমি তৈরি করেছিলাম। কারণ এই সিনেমায় মান্না একজন ‘অ্যাংরি হিরো’ ছিল। তখন আমার চোখে মুখে বাচ্চুর মুখটাই ভাসছিল। বাচ্চু তখন ফিল্মে গান করেনি। বাচ্চুকে অনেক কষ্ট করে গানটি করানো হয়েছিল। বাচ্চু অনেক মেধাবী মিউজিশিয়ান। ও ছোটবেলায় আমার কাছে আসত। যাই হোক, আমার কাছে কয়েকবার শোনার পর বাচ্চু খুব স্বাভাবিকভাবে গানটি গাইল। রেকর্ডিং করতে যখনই যেতাম তখনই অনেক মানুষ গানটি শোনার জন্য চলে আসত। তখনই আমি বুঝতে পারছিলাম গানটি হিট হবে। শ্রুতি স্টুডিওতে গানটির রেকর্ডিং হয়েছিল। ‘আম্মাজান’ গানটি নিজের সবটুকু ভালোবাসা দিয়েই গেয়েছেন শিল্পী আইয়ুব বাচ্চু। অনুভূতি ব্যক্ত করে এ গান প্রসঙ্গে আইয়ুব বাচ্চু রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আম্মাজান গানটি আমি যখনই গাই তখনই মনে হয় আমি আমার মাকে নিয়েই গাইছি। মাকেই এই কথাগুলা বলছি। আমি এটা গান মনে করে গাই না। মায়ের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে গাই। গানটির সঙ্গে আমাকে যুক্ত করেছেন শ্রদ্ধেয় বুলবুল ভাই। তার অসাধারণ কথার এই গানটি বাংলার দর্শকদের মুখে মুখে এটা একজন শিল্পীর কাছে অনেক ভালো লাগার। মাকে নিয়ে আমি এমন একটি গান করতে পেরে নিজের কাছে খুব ভালো লাগছে। অনেক হিট গান রয়েছে কিন্তু মাকে নিয়ে যে ক’টা গান রয়েছে তার মধ্যে ‘আম্মাজান’ গানটি অন্যতম। এটা দর্শকদের উপহার। আর এটাই বড় ভালো লাগা।’
রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৩ মে ২০১৮/রাহাত/শান্ত