ঢাকাই চলচ্চিত্রের তুমুল জনপ্রিয় চিত্রনায়ক মান্না। অসংখ্য ভক্তকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে ২০০৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি না ফেরার দেশে চলে যান এক সময়ের এই ঢালিউড কিং। মৃত্যুর এত দিন পরও তার জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েনি।
আজ সোমবার চিত্রনায়ক মান্নার ১২তম মৃত্যুবার্ষিকী। তার প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি স্মরণসভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে। আজ বাদ আসর বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির কার্যালয়ে এই দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। রাইজিংবিডিকে এ তথ্য জানিয়েছেন চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান।
জায়েদ খান বলেন, ‘চিত্রনায়ক মান্না শুধু একজন শিল্পী ছিলেন না, একজন দক্ষ সংগঠকও ছিলেন। তার মৃত্যুতে ঢাকাই চলচ্চিত্রের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। আজ তার ১২তম মৃত্যুবার্ষিকী। তাকে স্মরণ করতেই শিল্পী সমিতির উদ্যোগে স্মরণ সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। আমি তার রুহের মাগফিরাত কামনা করছি।’
জীবদ্দশায় দুই শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন মান্না। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিনেমা হলো— ‘আম্মাজান, ‘লাল বাদশা’, ‘আব্বাজান’, ‘স্বামী স্ত্রীর যুদ্ধ’, ‘দুই বধু এক স্বামী’, ‘মনের সাথে যুদ্ধ’, ‘মান্না ভাই’, ‘পিতা মাতার আমানত’, ‘তওবা’, ‘পাগলী’, ‘কাসেম মালার প্রেম’, ‘চাঁদাবাজ’, ‘ত্রাস’, ‘তেজী’, ‘মিনিস্টার’, ‘প্রেম দিওয়ানা’, ‘শান্ত কেন মাস্তান’, ‘গুণ্ডা নাম্বার ওয়ান’, ‘কুখ্যাত খুনী’, ‘রংবাজ বাদশা’, ‘বসিরা’, ‘ঢাকাইয়া মাস্তান’, ‘মেজর সাহেব’, ‘সুলতান’, ‘ভাইয়া’, ‘বিদ্রোহী সালাহউদ্দিন’, ‘বাবা’, ‘কিলার’, ‘জনতার বাদশা’, ‘রাজপথের রাজা’, ‘এতিম রাজা’, ‘টোকাই রংবাজ’ প্রভৃতি।
মান্না নামে চলচ্চিত্রপ্রেমীদের কাছে পরিচিত হলেও তার পুরো নাম এস এম আসলাম তালুকদার। ১৯৬৪ সালে টাংগাইলের কালিহাতীতে জন্মগ্রহণ করেন বাংলা চলচ্চিত্রের এই প্রতিবাদী নায়ক। ১৯৮৪ সালে নতুন মুখের সন্ধানের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে পা রাখেন তিনি। এরপর চলচ্চিত্রাঙ্গনে নিবেদিত এক শিল্পী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেন।
নব্বই দশকে অশ্লীল চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু হলে যে কজন প্রথমেই প্রতিবাদ করেছিলেন, তাদের মধ্যে নায়ক মান্না ছিলেন অন্যতম। অশ্লীল চলচ্চিত্রের বিরুদ্ধে রীতিমতো যুদ্ধ করে শেষ অবধি জয়ী হয়েছিলেন তারা। তারপর ‘দাঙ্গা’, ‘লুটতরাজ’, ‘তেজী’, ‘আম্মাজান’, ‘আব্বাজান’ প্রভৃতি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা পান মান্না। তার অভিনীত ‘আম্মাজান’ চলচ্চিত্র বাংলাদেশের সর্বাধিক ব্যবসাসফল সিনেমার অন্যতম।
২০০৬ সালে সেরা অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান জনপ্রিয় এ অভিনেতা। মেরিল প্রথম আলো পুরস্কারও জমা হয়েছে তার প্রাপ্তির ঝুলিতে। মানুষের ভালোবাসা আর শ্রদ্ধায় সিক্ত হলেও, তার অনুপস্থিতি দর্শক হৃদয়ে আজও কষ্টের দাগ কেটে যায়। ঢাকা/রাহাত সাইফুল/শান্ত