বিনোদন

ওয়াসিম মূল্যায়ন না পেলে এতো সিনেমা করলো কীভাবে: ঝন্টুর প্রশ্ন

বাংলা সিনেমার তিনি ‘রাজপুত্র’। সত্তরের দশকের বডিবিল্ডার এই নায়কের অধিকাংশ সিনেমা ব্যবসাসফল। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে তার ছিল একচেটিয়া রাজত্ব! তারপরও অনেক অপ্রাপ্তি নিয়েই চলে যেতে হয়েছে নায়ক ওয়াসিমকে। এক সময় নিজেকে তিনি চলচ্চিত্র থেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছিলেন। এ কি শুধুই পারিবারিক কারণ, নাকি ছিল কিছু অভিমান? এই প্রশ্নের উত্তর এখন আর জানা সম্ভব নয়। কেননা তিনি চলে গেছেন লোকান্তরে। আমরা কথা বলেছি পরিচালক দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর সঙ্গে। কেননা ওয়াসিমের ক্যারিয়ারে বিশেষ একটি অংশজুড়ে আছেন নন্দিত এই নির্মাতা। সদ্যপ্রয়াত নায়ক ওয়াসিম স্মরণে নির্মাতা ঝন্টুর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রাহাত সাইফুল।

রাইজিংবিডি: কেমন আছেন?

ঝন্টু: মন ভালো নেই। কবরী আপা, ওয়াসিম ভাই মারা গেলেন। চারদিকে শুধু মৃত্যুর খবর! কাছের মানুষগুলো চলে যাচ্ছে- মেনে নেওয়া যায় না এমন বিদায়। বিশেষ করে ওয়াসিম ভাইয়ের কথা মনে পড়লেই খারাপ লাগছে!

রাইজিংবিডি: নায়ক ওয়াসিমের সঙ্গে আপনার পরিচয় কীভাবে হলো?

ঝন্টু: ওয়াসিম ভাইয়ের প্রথম সিনেমা হলে গিয়ে দেখেছি। একবার না, কয়েকবার দেখেছি৷ তখন সিনেমার পোকা ছিলাম! সব সিনেমা দেখতাম। আমার প্রথম ছবিতেও নায়ক ছিলেন ওয়াসিম ভাই। ‘বন্দুক’ ছিল নাম। শাবানা নায়িকা। আমার দ্বিতীয় সিনেমায়ও তিনি নায়ক ছিলেন।

রাইজিংবিডি: ওয়াসিম তখন ব্যস্ত নায়ক। তার সঙ্গে কাজের নিশ্চয়ই অনেক স্মৃতি আছে?

ঝন্টু: হ্যাঁ, বলে শেষ করা যাবে না। একটা কথা বলি, আমরা পরস্পরকে অনেক সম্মান করতাম। তখন ছিল সম্মান, শ্রদ্ধা প্রদর্শনের সময়। তিনি ভালো মানুষ ছিলেন। কখনও শিডিউল ফাঁসাতেন না। শট দিতে বললে বলতেন, দাঁড়ান, যে ডায়ালগ দিয়েছেন আগে মুখস্থ করে নেই। ডায়ালগ মুখস্থ না করে শট দিতেন না। কাজের প্রতি সিরিয়াস ছিলেন। পায়চারী করতেন আর মনে মনে ডায়ালগ ঝালাই করে নিতেন।

রাইজিংবিডি: আপনার লেখা অনেক গল্পের সিনেমায় আমরা নায়ক হিসেবে ওয়াসিমকে দেখেছি।

ঝন্টু: ঠিকই বলেছেন। বিশেষ করে ইবনে মিজানের প্রায় সব সিনেমার গল্প আমার লেখা। গল্প লেখার সময় ওয়াসিম ভাইকে ভেবেই লিখতাম। আসলে বিষয়টি নির্ভর করে পরিচালকের উপর। আমি গল্প লিখে অনেক সময় ওয়াসিম ভাইয়ের কথা পরিচালককে বলেছি।

রাইজিংবিডি: ওয়াসিম জীবিত থাকা অবস্থায় যথার্থ মূল্যায়ন হয়েছে কিনা- আপনি কী মনে করেন?

ঝন্টু: মূল্যায়ন যদি না করা হতো তাহলে এতগুলো সিনেমা করলো কীভাবে? এতগুলো সুপারহিট সিনেমা- কম কথা নয়! লাখ লাখ দর্শক তার সিনেমা কেন দেখল? পরিচালক তাকে নিয়ে সিনেমা বানাল আর দর্শক দেখল- এটাই তো বড় মূল্যায়ন। তার শিডিউল পাওয়া যেত না। হলে টিকেট পাওয়া যেত না। আমি মনে করি এটাই বড় মূল্যায়ন।

রাইজিংবিডি: জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার তিনি পাননি।

ঝন্টু: জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার কোনো ফ্যাক্টর নয়। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার নিজস্ব শিল্পীদের। ও নিয়ে দর্শকের কিছু আসে যায় না। অনেক শিল্পী আছেন চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন কিন্তু দর্শক চেনেন না। দর্শক না চিনলে পুরস্কার দিয়ে কি হবে? পুরস্কারের মূল্য অবশ্যই আছে। ওয়াসিম সাহেব পুরস্কার না পেলেও তার সিনেমা দেখার জন্য লাখ লাখ দর্শক হলে যেত৷ নায়ক ওয়াসিমকে দেখার জন্য তারা যেত- এটাই তো বড় প্রাপ্তি, এটাই তো সবচেয়ে বড় অ্যাওয়ার্ড।

রাইজিংবিডি: নায়ক ওয়াসিমের জনপ্রিয়তার পেছনে কারণ কী ছিল বলে মনে করেন?

ঝন্টু: ড্যাশিং, সুন্দর, মারামারি করলে মানাতো, সত্তরের দশকের বডি বিল্ডার! এ কারণে দর্শক তাকে পছন্দ করতো।