বগুড়ার প্রতিবন্ধী যুবক সোহেল রানা (৩৫)। চলচ্চিত্র জগতের সুপারস্টার অনন্ত জলিলের অন্ধভক্ত তিনি। অনন্ত জলিল এবং বর্ষা জুটির প্রথম ছবি ‘খোঁজ দ্য সার্চ’ সিনেমা মুক্তির পর থেকেই সোহেল রানা নায়ক অনন্ত’র ভক্ত বনে যান। এরপর অনেক চেষ্টার পর অনন্ত জলিলের ফোন নম্বর যোগাযোগ করে তার অনুভূতি ব্যক্ত করেন।
এরপর থেকেই অনন্ত জলিলের সঙ্গে তার নিয়মিত যোগাযোগ হতো। এর মাঝে অনন্ত জলিল তার ভক্ত সোহেল রানাকে কথা দিয়েছিলেন তার নতুন কোনো সিনেমা মুক্তি পেলে তিনি বগুড়ায় যাবেন। তার গ্রামে যাবেন। ভক্তকে দেয়া কথা রেখেছেন এই নায়ক। বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) দুপুর পৌনে ১টায় তার স্ত্রী বর্ষাকে নিয়ে হেলিকপ্টারে উড়ে যান সোহেল রানার গ্রাম কাহালু উপজেলার জামগ্রামের কালিপাড়া গ্রামে। এরপর তারা রানাকে সঙ্গে করে দুপুরের খাবার খান। পরে তারা তিনজনে হেলিকপ্টারে বগুড়া সদরে পৌঁছান। সেখান থেকে বগুড়ার মধুবন সিনেপ্লেক্সে দুপুর ৩টায় এই জুটির নতুন ছবি ‘দিন দ্য ডে’ সিনেমা দেখেন।
অনন্ত-বর্ষা জুটি তাদের ভক্ত সোহেল রানার গ্রামে হেলিকপ্টারে পৌঁছার পর সেখানে শত শত মানুষ ভিড় করে স্বচক্ষে তাদের দেখার জন্য। নায়ক-নায়িকার জন্য কালিপাড়া ইসমাইল হোসেন উচ্চ বিদ্যালয়ে স্টেজ সাজানো হয়। স্টেজেই ভক্ত রানাকে নিয়ে গ্রামবাসীর সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন অনন্ত-বর্ষা।
এ সময় সোহেল রানা বলেন, অনন্ত জলিলের মতো বড় মাপের মানুষকে যখনই ফোন দিয়েছি, তখনই তিনি কথা বলেছেন। আজ তিনি শুধু আমার কথা রাখতে বগুড়া এসেছেন। এ আনন্দ আমি বলে বোঝাতে পারবো না। তিনি আমাকে অনেক ভালোবাসেন, আমিও চেষ্টা করি তাকে আরও বেশি ভালোবাসার।
এ সময় নায়িকা বর্ষা বলেন, আমি গ্রামের মেয়ে। গ্রামে বড় হয়েছি। রানার জন্য অনেক দিন পর আবার গ্রামে আসতে পারলাম। এ জন্য খুব ভালো লাগছে। দিন-দ্য ডে চলচ্চিত্র সম্পর্কে বর্ষা বলেন, দেশে চলচ্চিত্রের ধারায় পরিবর্তন আসছে। হলিউড, বলিউডের ধাঁচেও আমরা ছবি করতে পারি। এমনই একটি চলচ্চিত্র দিন-দ্য ডে। এর অ্যাকশন, গল্প সবকিছু দর্শকদের ভালো লাগবে। অনেক সিনেমা হলে দেখেছি সন্তান কোলে নিয়ে মা এসেছেন চলচ্চিত্র দেখতে। মানুষের ভালো সিনেমা দেখার এই আগ্রহ আমাকে মুগ্ধ করেছে।
অনন্ত জলিল বলেন, যত সচিব, আমলা, ব্যবসায়ী গড়ে উঠেছে গ্রাম থেকে। এ জন্য গ্রামকে কখনও ছোট করা যাবে না। আজকে বগুড়া আসার একটি বড় কারণ রানা। রানাকে দেখার পাশাপাশি আপনাদের কাছেও আসতে পেরেছি। ওর বাবা-মাকে আমার পক্ষ থেকে ধন্যবাদ দিতে চাই। ওর মন আপনার-আমার চেয়ে অনেক বড়। এ সময় তিনি আরো বলেন, রানা’র দুটো পা’ই অচল। আমি রানাকে ঢাকা নিয়ে যাবো। ওর পাসপোর্ট করাবো, ওকে থাইল্যান্ড নিয়ে যাবো চিকিৎসার জন্য। আমি চেষ্টা করব। বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছা।
এরপর তারা রানাকে সঙ্গে নিয়ে দুপুরের খাবার খান। পরে দুপুর ২টায় হেলিকপ্টারে করে বগুড়া সদরের উদ্দেশ্যে রওনা দেন তারা। দুপুর তিনটায় তারা বগুড়া মধুবন সিনেপ্লেক্সে এসে পৌছান। এ সময় অনন্ত-বর্ষাকে কাছ থেকে এক নজর দেখার জন্য লোকজন ভিড় করে। এছাড়া ভক্তরা তাদের সঙ্গে মোবাইল সেলফি উঠানোর জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েন। হলে সিনেমা শুরুর আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এই জুটি। এ সময় অনন্ত জলিল বলেন, বগুড়া অনেক আধুনিক একটি শহর। মধুবন সিনেমা হলে ঢোকার পর তার মনে হচ্ছে তিনি দুবাইতে পৌঁছে গেছেন। এছাড়া তিনি সমালোচকদের উদ্দেশ্যে বলেন, অনেকে এবার আমাদের ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণের চেষ্টা করছে। কিন্তু আমরা এতে মর্মাহত না। বর্ষা একটু আপসেট হয়ে গিয়েছিল। আমি সব সময় বলে আসছি যেটা মিথ্যা সেটা মিথ্যাই। .
এর আগে অনন্ত জলিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তার ভেরিফায়েড পেজে একটি পোস্টে লেখেন, ‘প্রিয় বন্ধুগণ আমার একজন ভক্ত যার নাম রানা, যে কিনা প্রতিবন্ধী রানা হিসেবে পরিচিত, সে আমার প্রথম সিনেমা ‘খোঁজ: দ্য সার্চ’ দেখার পর থেকে আমার সঙ্গে দেখা করার জন্য নানাভাবে চেষ্টা করে আসছে। এমনকি তার নিজ এলাকায় নিজ অর্থায়নে আমার নামে বিভিন্ন প্রকার সমাজসেবামূলক কাজ করে আসছে, যা ওই এলাকার লোকজন অবগত আছে। আমি তাকে কথা দিয়েছিলাম আমাদের ‘দিন: দ্য ডে’ সিনেমাটি যখন রিলিজ হবে তখন আমি তার সঙ্গে দেখা করতে তার গ্রামের বাড়িতে যাবো। আমি আমার কথা রাখার জন্য প্রতিবন্ধী রানা এবং অত্র এলাকাবাসীর সঙ্গে দেখা করার জন্য ১৪ জুলাই দুপুর ১২টায় আসতেছি ইনশাআল্লাহ। ‘আমরা ইনশাআল্লাহ রানার সঙ্গে দুপুরের খাবার খাবো এবং দুপুরের খাবার শেষ করার পর রানাকে নিয়ে ৩৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মধুবন সিনেপ্লেক্স, বগুড়ায় যাবো এবং ৩টার শো-তে সিনেমা দেখবো। মধুবন সিনেপ্লক্সে আগত সকল দর্শকদের সঙ্গে একত্রে সিনেমা দেখবো এবং মতবিনিময় করবো ইনশাআল্লাহ।’