কয়েক দিন আগে অনুষ্ঠিত হয় বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ফাইনাল ম্যাচ। এতে মুখোমুখি হয় ভারত ও অস্ট্রেলিয়া। পুরো বিশ্বকাপ জুড়ে ভালো খেললেও ফাইনাল ম্যাচে হেরে যায় ভারত; চ্যাম্পিয়ন হয় অস্ট্রেলিয়া। এতে করে বাংলাদেশের অনেক দর্শক উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে এ চিত্র নজর কেড়েছে ভারতীয়দেরও।
এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আজতাক ডটকম যোগাযোগ করে বাংলাদেশের গুণী অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরীর সঙ্গে। সংবাদমাধ্যমটি তার বক্তব্য প্রকাশের পর তা ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়। চঞ্চল চৌধুরীর বক্তব্য নিয়ে নেটিজেনদের অনেকে কড়া সমালোচনা করছেন।
চঞ্চল চৌধুরীর বক্তব্য ‘কোট’ করে অনেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করছেন। তারই একটি পোস্টে লেখা আছে, ‘‘ইন্ডিয়া বিশ্বকাপ হারার পর, যারা বাংলাদেশে আনন্দ উদযাপন করেছে তারা স্বাধীনতা বিরোধী, ১৯৭১ সালে যারা স্বাধীনতা বিরোধী ছিল তাদের রেখে যাওয়া উত্তরসূরী-ই এখন ইন্ডিয়া বিরোধী।’— চঞ্চল চৌধুরী।’’
চঞ্চল চৌধুরীর ছড়িয়ে পড়া এই বক্তব্য নিয়ে অনেকে যেমন সমালোচনা করছেন, তেমনি অনেকেই এর সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাদের ভাষ্য— ‘সত্যি কি এমন বক্তব্য দিয়েছেন চঞ্চল চৌধুরী?’ ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে চঞ্চল চৌধুরী আসলে কী বলেছেন? সংবাদমাধ্যমটির প্রকাশিত অডিও রেকর্ড থেকে তা তুলে ধরা হলো।
কথার শুরুতে চঞ্চল চৌধুরী বলেন, ‘যারা ভারত বিরোধী, তারা ভারতের হেরে যাওয়াকে উপভোগ করছে, উদযাপন করছে। তার মানে এই নয় যে, বাংলাদেশে ভারতের সমর্থক কম আছে। যদি ভারত জিততো তবে তারা আবার আনন্দ করতো। কিন্তু ব্যাপারটা এমন নয় যে, বাংলাদেশের ২০ কোটি মানুষের আচরণ এটা। রাজনীতি অথবা খেলা— যে যে দল সমর্থন করে সেই দল জিতলে সে উদযাপন করে; এটাই তো স্বাভাবিক।’
‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যত শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে, তাদের সবাই কি ভারতকে সমর্থন করে? নিশ্চয়ই না! সেখানে পাকিস্তানের সমর্থক আছে বা অন্য দলের সমর্থক আছে। এটা স্পষ্ট বোঝা যায়, এটা ভারত বিদ্বেষী। বাংলাদেশে ভারত বিদ্বেষী সংখ্যা কম নয় তো। রাজনীতিতে বলি অথবা খেলাধুলায় বলি, বাংলাদেশে ভারত বিদ্বেষী সংখ্যা কম নয়। এটা বাস্তবতা। এটার মানে এই নয় যে, এটি বাংলাদেশের সাধারণ চিত্র।’ বলেন চঞ্চল চৌধুরী।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রসঙ্গ টেনে চঞ্চল চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রচুর ভারতীয় সমর্থক রয়েছে, যারা ভারতের খেলাকে সমর্থন করে, ভারতের সিনেমাকে সমর্থন করে; এমন প্রচুর আছে। তারা জানেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদানের কথা, সেটাকে তারা স্বীকার করেন। আবার কেউ কেউ এই অবদানের কথা স্বীকার করে না। মানে এটাই তো বাস্তবতা। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি ও বিপক্ষের শক্তি। বিপক্ষের শক্তি পাকিস্তানকে সমর্থন করে, তারা ভারতকে পছন্দ করে না। এই মতাদর্শের মানুষ এবং তাদের বংশ পরম্পরায় একই জিনের ভেতর ওটা রয়েছে। ১৯৭১ সালে যারা বাংলাদেশের বিরোধিতা করেছে, পাকিস্তানের পক্ষে ছিল, তারা সবসময়ই ভারত বিদ্বেষী ছিল। তাদের সন্তানেরা বংশ পরম্পরায় ওই কাজই করছে। এই প্রজন্মে তারাই হয়তো ভারতের বিরোধিতা করছে।’
এ বিষয়টি ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্কে কি প্রভাব ফেলবে? এমন প্রশ্নের উত্তরে চঞ্চল চৌধুরী বলেন, ‘সত্যি বলতে, এত গভীরে গিয়ে এই বিষয়গুলো বোঝার মতো, বলার মতো যোগ্যতা আমার নেই। আমার কাজ সম্পর্কিত প্রশ্নের বাইরে গিয়ে উত্তর দিলাম। কারণ আমার কাছে কমন সলিউশন ছিল। যে বা যারা ভারত হেরে যাওয়াতে খুশি হয়েছে, তারা ইন্ডিয়া বিরোধী, তারা হয়তো পাকিস্তানকে সমর্থন করে। আসলে এটা তো খেলা, এখানে কিছু বলারও নেই। কেউ কেউ বলেও ফেলে খেলার মধ্যে কেন রাজনীতি? খেলার মধ্যে কেন এটা-ওটা! আমার সমর্থন করতে ইচ্ছা করেছে আমি করেছি; এটা যার যার ব্যক্তিগত পছন্দের ব্যাপার।’
‘দুই দেশের সম্পর্কে প্রভাবের বিষয়ে চিন্তা করার মতোও ইয়ে আমার নেই। সিনেমা বা এই সম্পর্কিত কিছু হলে হয়তো আমি বিস্তারিত বলতে পারতাম। এটা কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তি বা কূটনৈতিক বিষয়ে যাদের অনেক জ্ঞান আছে তারা বলতে পারবেন, কোন আচরণের কারণে একটি দেশের সঙ্গে আরেকটি দেশের সম্পর্ক খারাপ হয়। আমি বলেছি, এই উচ্ছ্বাস বাংলাদেশের মানুষের একটা অংশের। যদি ২ কোটি মানুষ রাস্তায় দাঁড়ায় তারপরও তো দেশে আরো ১৮ কোটি মানুষ রয়েছেন। সেই ১৮ কোটি মানুষকে কি আমি এই ২ কোটির মধ্যে ফেলে দেব? আমার সেটা মনে হয় না। যারা অস্ট্রেলিয়াকে সমর্থন করেছে, তারাই উদযাপন করেছে। ইন্ডিয়াকে নিয়ে হয়তো আজেবাজে কথা বলেছে। কিন্তু যারা ভারতকে সমর্থন করেছে তারা কিছু বলেনি, তারা মন খারাপ করেছে। খেলার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমার সঙ্গে অনেকের দেখা হয়েছে, এখানে অধিকাংশ মানুষকে দেখেছি তারা ভারতের সমর্থক।’ বলেন চঞ্চল চৌধুরী।