ভারতীয় বাংলা ও বলিউড সিনেমার দর্শকপ্রিয় অভিনেতা ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত। বাংলাদেশি সিনেমায়ও অভিনয় করেছেন। তবে নিকট অতীতে তেমন হিট সিনেমা উপহার না দিতে পারায় অনেকটা আড়ালে চলে গিয়েছেন। অভিনয়শিল্পীদের নিয়ে নেটিজেনদের ‘সমালোচনা’ নিয়ে মন্তব্য করে খবরের শিরোনাম হয়েছেন ইন্দ্রনীল। কারণ ‘জাত’ নিয়ে করা তার মন্তব্যও পছন্দ হয়নি নেটিজেনদের।
ভারতীয় একটি গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত বলেন, ‘মানুষ হিসেবে আপনাকে যখন কিছু বলা হবে, তখন ভালো কিছু বললে আপনার ভালো লাগবে, খারাপ কিছু বললে খারাপ লাগবে। এর ব্যত্যয় ঘটার সুযোগ নেই। সোশ্যাল মিডিয়া হওয়াতে সবারই এখন বক্তব্য আছে। আগে সিনেমা দেখে বন্ধুদের বলত, এটা ভালো হয়নি। এখন একই প্রতিক্রিয়া সোশ্যাল মিডিয়ায় জানায়। বাড়িতে বসে সমালোচনা করাটাই এখন মার্কেটে ফেলা হচ্ছে। একজন অভিনেতা হিসেবে এসব যদি সবসময় পড়ি, তবে এটা আমার জন্য ভালো নয়। এটা শুধু আমার জন্য নয়, সবার ক্ষেত্রেই তাই।’
উদাহরণ টেনে ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত বলেন, “যেমন— খেলোয়াড়দের ট্রল করা হয়। বিরাট কি খেলছে! ভুলে যাও ক্রিকেট! একই ঘটনা ঘটে অভিনয়শিল্পীদের নিয়েও। কোনো ডাক্তারকে আমি কিন্তু বলতে পারব না, আপনার ডাক্তারি হচ্ছে না। ডাক্তার কিন্তু ঠিকই বলবেন, আপনার অভিনয় হচ্ছে না। এটা আমাদের ‘হতভাগ্য’ একটি পেশা। পৃথিবীর যে কেউ আমাদের যা তা বলে যেতে পারে! কিন্তু আমরা কিছু বলতে পারব না। অভিনয়টাও যে বিশেষ একটা পেশা, এটা ভাবা হয় না। ক্যামেরার সামনে বসে কথা বলা কতটা কঠিন সেটা কেউ বুঝে না। যাইহোক, মানুষ মনে করে অভিনয়শিল্পীদের কথা বলাটা তাদের অধিকার।”
সোশ্যাল মিডিয়ায় দর্শকদের সঙ্গে প্রতিক্রিয়া জানাতে পছন্দ করেন না ইন্দ্রনীল। তা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমি সোশ্যাল মিডিয়া ঘাটাঘাটি করি না। ইনস্টাগ্রামে সক্রিয়, সেখানে ছবি দিতে পছন্দ করি। কিন্তু প্রতিক্রিয়া জানাতে নয়। আমি ‘ভক্ত’ বলতে পছন্দ করি না, আমি ‘দর্শক’ বলতে ভালোবাসি। সেই দর্শকদের সঙ্গে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করি না। মনে হয় না, এটা আমার কর্তব্য। সিনেমার ট্রেইলার কিংবা সিনেমা দেখে যে প্রতিক্রিয়া আসে, সেটা আমি দেখি না। আগেও দেখেনি, এখনো দেখি না।”
অভদ্রভাবে মন্তব্যকারীরা ছোট জাতের। তা স্মরণ করে ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত বলেন, “ভদ্রভাবে সমালোচনা করলে সেটা আমি নিতে পারি, অভদ্রটা নিতে পারি না। আমার মনে হয়, ওরা (সমালোচনাকারী) অভদ্র। সন্দীপ রায়কে (সত্যজিৎ রায়ের ছেলে) নিয়ে যখন আপনি অভদ্রভাবে মন্তব্য করবেন, এতে করে আপনাকে ‘ছোট জাত’ দেখাবে। এটাকে আমি উৎসাহিত করি না। এজন্য আমি সোশ্যাল মিডিয়ার জিনিসপত্র পড়িও না। বলে রেখেছি, কেউ পড়লেও তা যেন আমাকে জানানো না হয়। এতে আমি খুব বিরক্ত বোধ করি।”
অভদ্র সমালোচনাকারী বা ট্রলারদের ‘ছোট জাত’ বলে মন্তব্য করার বিষয়টি ভালোভাবে গ্রহণ করেননি নেটিজেনরা। বিষয়টি যাদের দৃষ্টিতে পড়েছে, তারাও পাল্টা আক্রমণ করে মন্তব্য করছেন। অরুণ সৈকত নামে একজন লেখেন, “ছোটজাত’ শব্দটা আসছে কীভাবে, সত্যিই নিজের সঠিক লালন-পালনের অভাবটা সমাজের সামনে না দেখালেই হতো।” দ্বীপায়ন ঘোষ লেখেন, ‘জাত বিদ্বেষী এই লোকটা ভালো অভিনয় করলেও ওর সিনেমা দেখব না।’ এমন অনেক মন্তব্য ভেসে বেড়াচ্ছে নেট দুনিয়ায়।
মডেলিংয়ের মাধ্যমে শোবিজ অঙ্গনে পা রাখেন ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত। পরবর্তীতে টিভি সিরিয়ালে অভিনয় শুরু করেন। ২০০৪ সালে হিন্দি ভাষার ‘শুকরিয়া: টিল ডেথ ডু আস অ্যাপার্ট’ সিনেমার মাধ্যমে বড় পর্দায় পা রাখেন। ২০০৯ সালে ‘অংশুমানের ছবি’ সিনেমার মাধ্যমে টলিউড চলচ্চিত্রে পা রাখেন। পরবর্তীতে খল চরিত্রে অভিনয় করে দারুণ খ্যাতি কুড়ান এই অভিনেতা। ২০১২ সালে বাংলাদেশের ‘চোরাবালি’ সিনেমায় দেখা যায় তাকে।