বিনোদন

যৌন হেনস্তার অভিযোগ: অরিন্দমের স্ত্রী বললেন, জয়া-কোয়েলের সঙ্গে কথা বলা উচিত

ভারতীয় বাংলা সিনেমার পরিচালক-অভিনেতা অরিন্দম শীলের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তার অভিযোগ তুলেছেন এক অভিনেত্রী। এ নিয়ে মহিলা কমিশনে অভিযোগ জানানোর পর তাকে ডিরেক্টর্স গিল্ড থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এরপর অরিন্দমের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করলেন ভুক্তভোগী অভিনেত্রী।

এ বিষয় নিয়ে কলকাতায় জোর চর্চা চলছে। এতদিন বিষয়টি নিয়ে নীরবে ছিলেন অরিন্দমের স্ত্রী শুক্লা দাস। অবশেষে পুরো ঘটনা নিয়ে টিভি নাইনের সঙ্গে আলাপকালে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করলেন তিনি।

২৬ বছরের বেশি সময় ধরে অরিন্দমের সঙ্গে সম্পর্কে রয়েছেন শুক্লা দাস। তা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘১৯৯২ সাল থেকে আমি অরিন্দমকে চিনি। আমরা সম্পর্কে রয়েছি ২৬ বছরেরও বেশি সময় ধরে। সিনেমা তৈরি এবং অভিনয়ের প্রতি প্রথম থেকেই ওর একটা ভালোবাসা ছিল। ১৯৯৯ সালের আগে অরিন্দম একটি বড় সংস্থায় চাকরিও করতেন। তারপর আমিই বলি দুই নৌকায় পা দিয়ে চলা যায় না। বলেছিলাম, আমি চাকরি করি, সামলে নিতে পারব। সুতরাং ঝুঁকি নেওয়ার আত্মবিশ্বাস ছিল। এত বছরে অনেক বড় বড় সিনেমার সঙ্গে অরিন্দমের নাম জড়িয়েছে। আমি সবাইকে স্পষ্ট করে দিতে চাই যে, ও যখন অভিনয় করত তখন আমি অরিন্দমের ফ্লোরে যেতাম। আর এখন পরিচালক অরিন্দমের ফ্লোরেও আমি যাই। আমি জানি ও কী করে কাজ করে।’

ঘনিষ্ঠ দৃশ্যে কীভাবে অভিনয় করতে হয়, তা অভিনেতা-অভিনেত্রীদের বুঝিয়ে দিয়ে থাকেন অরিন্দম। এ তথ্য উল্লেখ করে শুক্লা দাস বলেন, ‘চিত্রনাট্য তৈরির সময় থেকে ওর (অরিন্দম) সিনেমার সঙ্গে যুক্ত থাকি। আমি জানি ও যেকোনো সিনেমার দৃশ্য কী করে অভিনয় করে দেখায়। ঘনিষ্ঠ দৃশ্য থেকে যেকোনো দৃশ্য নিজে অভিনয় করে দেখায়। অনেক সময় নবীন অভিনেতাদের অভিনয় করে দেখিয়ে দিতে হয়। এমনকি অনেক অভিজ্ঞ অভিনেতারাও অরিন্দমকে বলেন দৃশ্যটা অভিনয় করে দেখিয়ে দিতে। আমি এমন অনেক ঘনিষ্ঠ দৃশ্যের শুটিং, রিহার্সালের সাক্ষী। অরিন্দম যে শুধু নায়িকাদের অভিনয় করে দেখায় তেমনটা নয়। পুরুষ অভিনেতাদের ক্ষেত্রেও ও (অরিন্দম) একইভাবে বুঝিয়ে দেয়।’

যে দিনের ঘটনা নিয়ে অরিন্দমের বিরুদ্ধে অভিযোগ, সে দিনের বিহাইন্ড দ্য সিনের ভিডিও দেখেছেন শুক্লা দাস। তা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যে ঘটনাকে কেন্দ্র করে এত অভিযোগ, সে দিন শুটিং ফ্লোরে ছিলাম না। কিন্তু সেখানে কী হয়েছিল তার সবকিছুই আমার জানা। কারণ, ও সব সময় সিন, বিহাইন্ড দ্য সিনের ভিডিও আমার সঙ্গে শেয়ার করে। আমি সবটা জানি সে দিন কী হয়েছিল। হতে পারে সেই অভিনেত্রী নতুন। এত বড় বাজেটের সিনেমায় অভিনয় করছেন, তাই হয়তো ভয় পেয়েছেন। সে জন্য ঘাবড়ে গিয়েছিলেন। অস্বস্তি বোধ করেছিলেন। কিন্তু যখন চিত্রনাট্য তিনি শুনেছিলেন তখনই তার বোঝা উচিত ছিল, তাকে ঠিক কী করতে হবে। ওই দৃশ্যে লেখাই ছিল ‘গভীর চুম্বন’। উনি অস্বস্তি বোধ করতেই পারেন।’

অরিন্দম শীলকে ফাঁসানো হয়েছে। এ তথ্য উল্লেখ করে শুক্লা দাস বলেন, ‘৩ এপ্রিলে ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ে এত দিন পরে কেন অভিযোগ জানালেন নায়িকা? আমিও অনেক বড় সংস্থায় কাজ করেছি। আমি জানি ঠিক কী কী ঘটতে পারে। আমি সত্যিই জানি না ঠিক কী কারণে ওই অভিনেত্রী এমনটা করেছেন। কেউ ওকে প্রভাবিত করেছেন এমনটাও হতে পারে। আমি জোর গলায় বলতে পারি, অরিন্দমের ৩৫ বছরের ভাবমূর্তিকে নষ্ট করার উদ্দেশ্যেই এটা করা হয়েছে। অরিন্দমের সব নায়িকাদের সঙ্গে কথা বলা উচিত। একটা ভিত্তিহীন ঘটনার নিরিখে ওর দিকে প্রশ্ন তোলা কখনো উচিত নয়। ওকে ফাঁসানো হচ্ছে। লীনা গাঙ্গুলি একদিকে মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন। অন্যদিকে আবার প্রযোজক এবং পরিচালকও। তারই সিরিয়ালে অভিনয় করেন ওই নায়িকা। কোথাও গিয়ে মনে হচ্ছে না যে, স্বার্থের সংঘাত হয়েছে! মনে হয় না তিনি পক্ষপাতদুষ্ট হবেন? এই দিকটা তো কেউ ভেবেই দেখেননি।’

শুক্লা দাস মনে করেন, এ বিষয়ে অরিন্দমের নায়িকা জয়া আহসান, কোয়েল মল্লিকের সঙ্গে কথা বলা উচিত। তা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার তো মনে হয় অরিন্দমের সিনেমার সব নায়িকা, জয়া আহসান থেকে কোয়েল মল্লিক সবার সঙ্গে কথা বলা উচিত। এর আগে কোনো নায়িকা তো এমন কোনো অভিযোগ আনেননি। মহিলা কমিশনে যখন অরিন্দমকে ডাকা হয় নিয়ম অনুযায়ী, সেই কথাবার্তার পরে সেই সভার কার্যবিরণীর রেকর্ডে সবার সই করার কথা। কিন্তু সেটা তো হয়নি। বরং, শুধু অরিন্দমের উপর চাপ সৃষ্টি করে চিঠিতে সই করানো হয়েছে মহিলা কমিশনের পক্ষ থেকে। ওকে জালে ফাঁসিয়ে ওই সই করা চিঠি পাঠানো হয় ডিরেক্টর্স গিল্ডে। পুরো ঘটনাটি পূর্ব পরিকল্পিত লাগছে।’

স্বামী অরিন্দমকে ‘ভালো মানুষ’ উল্লেখ করে শুক্লা দাস লেখেন, ‘অরিন্দম তো ভালো মানুষ, জোর করাতেই মেনে নেয়। আমি অবাক কেন এমন হচ্ছে? আমার প্রশ্ন করতে ইচ্ছা হচ্ছে ওনার (লীনা গাঙ্গুলি) কোন প্রযুক্তিগত যোগ্যতায় এমন গুরুত্বপূর্ণ পদটি পেয়েছেন? অরিন্দম পরিস্থিতির শিকার। আমি বলে দিচ্ছি, ও ভালো মানুষ বলে সরি বলেছে। কারণ, ওর মনে হয়েছে বিতর্ক বাড়িয়ে কোনো লাভ নেই। অরিন্দম নারীদের সম্মান করতে জানে। আমি সত্যিই বুঝতে পারছি না, কীসের ভিত্তিতে এই ঘটনা ঘটল!’