সত্যজিৎ রায় নির্মিত বহুল নন্দিত চলচ্চিত্র ‘পথের পাঁচালী’। এতে ‘দুর্গা’ ও ‘অপু’ চরিত্রে অভিনয় করেন উমা দাশগুপ্ত এবং সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার (১৮ নভেম্বর) সকালে মারা গেছেন ‘দুর্গা’ চরিত্র রূপায়নকারী উমা দাশগুপ্ত। তবে এখনো বেঁচে আছেন অপু অর্থাৎ সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়। পর্দার দিদিকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন অপু।
ভারতীয় একটি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়। মন খারাপের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সকালেই খবর পেয়েছি দিদি আর নেই। জানতাম, দিদি দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। কিন্তু তারপর এ রকম একটা খবর! মনটা খারাপ হয়ে গেছে।’
একটি অনুষ্ঠানে সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায় ও উমা দাশগুপ্ত (বাঁ থেকে)
পথের পাঁচালী’ সিনেমার শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা জানিয়ে সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আজকে বেশি করে ‘পথের পাঁচালী’ সিনেমার শুটিংয়ের দিনগুলো মনে পড়ছে। আমার তখন মাত্র ৯ বছর বয়স। আর উমাদির ১৪ বছর। আমি তো শুটিংয়ের কিছুই বুঝতাম না। একসঙ্গে দু’জনে শুটিং করছি। গড়িয়ার বোড়ালে শুটিং। ট্রেন দেখতে যাওয়ার দৃশ্যের শুটিং হয়েছিল শক্তিগড়ের কাছে পালসিটে। আমাকে শুরু থেকে আগলে রাখতেন দিদি। একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া, খুনসুটি করতাম। আনন্দ করতাম। একেবারেই যেন ভাই-বোন। সিনেমার মতোই শুটিং ফ্লোরেও তিনি যেন আক্ষরিক অর্থেই আমার দিদির মতো হয়ে উঠেছিলেন।”
আরো পড়ুন: ‘পথের পাঁচালী’ সিনেমার সেই ‘দুর্গা’ মারা গেছেন
সত্যজিৎ রায়ের জন্মশতবর্ষে উমা দাশগুপ্তর সঙ্গে দেখা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা হয়নি। এ তথ্য উল্লেখ করে সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “তারপর আমাদেরও বয়স বেড়েছে। বিভিন্ন সময়ে একাধিক অনুষ্ঠানে একসঙ্গে গিয়েছি। মানুষ যে আমাদের এখনো মনে রেখেছেন, সেটা খুব ভালো লাগে। দিদির সঙ্গে শেষের দিকে আমার খুব বেশি দেখা হয়নি। সত্যজিৎ রায়ের জন্মশতবর্ষে ‘পথের পাঁচালী’ সঙ্গে যুক্ত সকলকে নন্দনে সংবর্ধনা দেওয়া হলো। ভেবেছিলাম, দিদির সঙ্গে দেখা হবে। কিন্তু দেখলাম, তিনি আসতে পারেননি। জানতে পারলাম, শরীর খুবই খারাপ। আর্থ্রাইটিসে ভুগছেন। তারপর আর সেভাবে দেখা হয়নি।”
‘পথের পাঁচালী’ সিনেমার দৃশ্যে অপু ও দুর্গা
উমা দাশগুপ্তর সঙ্গে দেখা না হওয়ার আফসোস নিয়ে সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “স্মৃতি অনেক সময়ই দুঃখের এবং বেদনার হতে পারে। এবারে সেটাই হলো। একে একে ‘পথের পাঁচালী’ সিনেমার সকলেই চলে যাচ্ছেন। একদিন আমিও চলে যাব। দিদির প্রতি আমার শ্রদ্ধা। আরো কিছু দিন তিনি থাকলে ভালো হতো। হয়তো আরো একবার আমাদের দেখা হতো। সেই সুযোগটা আর পেলাম না।”