ভারতীয় উপমহাদেশের কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী মোহাম্মদ রফি। এক সময় বলিউড প্লেব্যাক গায়ক হিসেবে রাজত্ব করেছেন। ১৯৮০ সালের ৩১ জুলাই মারা গেলেও তার গানের কদর এখনো কমেনি। মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) বরেণ্য এই শিল্পীর জন্ম শতবর্ষ। হিন্দুস্তান টাইমস অবলম্বনে তার সংগীত ক্যারিয়ারের অজানা অধ্যায় নিয়ে এই প্রতিবেদন।
১৯২৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর পাঞ্জাবের কোটলা সুলতান সিং-এ জন্মগ্রহণ করেন মোহাম্মদ রফি। তার ডাকনাম ফিকো। তার গ্রামের বাসিন্দারা গবাদি পশু লালনপালন করতেন। তার বয়সি অন্য শিশুদের মতো ফিকোও স্কুলের পর গবাদি পশু চরাতে মাঠে যেতেন, আর গুনগুন করে লোকগীতি গাইতেন।
১৯৪২ সালে ফিকো (রফি) তার বাবা হাজী মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে কাজে যোগ দেন। লাহোরে তিনি একটা ধাবা চালাতেন। এরপর রফি সেলুনে নাপিতের চাকরি পান। ক্রেতাদের সঙ্গে আড্ডা দিতে গিয়ে ওয়ারিস শাহের ‘হীর’ ও পিল্লুর ‘মির্জা’ গাওয়ার লোভ সামলাতে পারতেন না রফি। তার মিষ্টি কণ্ঠ নতুন গ্রাহকদের আকৃষ্ট করত। সেখানকার একজন লাহোরের অল ইন্ডিয়া রেডিওর স্টুডিওতে ঘুরতে গিয়ে রাফির সুরেলা কণ্ঠের গল্প করেন আকাশবাণীর প্রধান জীবনলালের কাছে। এরপর জীবনলাল ওই সেলুনে গিয়ে নিজের কানে রফির গলায় গান শুনেন। তার গানে মুগ্ধ হয়ে রফিকে অডিশনের জন্য ডেকে পাঠান। তারপর পাঞ্জাবের লোকগায়ক হিসেবে গাওয়ার অনুমতি পান রফি।
অল্প সময়ের মধ্যেই রফির কণ্ঠ লাহোরের ফিল্ম স্টুডিওতে পৌঁছে যায়। নতুন সংগীত পরিচালক শ্যামসুন্দর ‘গুল বালুচ’ সিনেমার জন্য রফিকে দিয়ে একটা পাঞ্জাবি গান রেকর্ড করান। যদিও সেই সিনেমা ফ্লপ হয়েছিল। গানের প্রতি রফির ভালোবাসা তাকে লাহোরের কিংবদন্তি ওস্তাদ বড়ে গোলাম আলী খানের ভাই বরকত গোলাম আলী খানের কাছে নিয়ে যায়। সেখানে খেয়াল এবং ঠুমরির সূক্ষ্মতা আয়ত্ব করেন। পরে মুম্বাইয়ে গিয়ে প্লেব্যাক করে নিজের ভাগ্য পরীক্ষা করার কথা ভাবেন রফি।
১৯৪৪ সালের শেষের দিকে রফি ট্রেনে চেপে স্বপ্নের শহর মুম্বাইয়ে পৌঁছান। তার সামনে ছিল দীর্ঘ লড়াই। ১৯৪৯ সালে রফি তার প্রথম ব্রেক (সুযোগ) পান। পারফেকশনিস্ট সংগীত পরিচালক সাজ্জাদ হুসেন তাকে হীর ওয়ারিস শাহ গাইতে বাধ্য করেন। গানটি সেসময় হিট হয়েছিল।
প্লেব্যাক গায়ক হিসেবে ক্যারিয়ার শুরুর দিকে রফির পরামর্শদাতা ছিলেন পাঞ্জাবের পণ্ডিত হুসান লাল। ভোর ৪টায় তার বাড়িতে রফিকে ডেকে আনতেন। রেকর্ডিংয়ের আগে সেখানে কয়েকঘণ্টা অনুশীলন করতেন। ‘বাজার’ (১৯৪৯) সিনেমায় লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গে ডুয়েট গাওয়ার পরামর্শ রফিকে দিয়েছিলেন শ্যাম সুন্দর।
সংগীত পরিচালক ফিরোজ নিজামী ‘জুগনু’ সিনেমার জন্য ‘নূরজাহান’ গানটি ডুয়েট গাওয়ার জন্য রফিকে বারবার অনুশীলন করিয়েছিলেন। রফির গাওয়া ডুয়েট ‘ইয়াহান বদলা ওয়াফা কা বেওয়াফাই কে সিওয়া কেয়া হ্যায়’ গানটি সুপারহিট হয়। এর পরের গল্প সবারই জানা।