বিনোদন

‘আমি ভীষণভাবে বিয়েটা টিকিয়ে রাখতে চেয়েছি’

ভারতীয় বাংলা সিনেমার তারকা জুটি ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত ও বরখা। দুই বছর প্রেম করার পর বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন তারা। তারপর ১৫ বছর সংসার করেন। এক যুগের বেশি সময় সংসার করার পরও ভেঙে গেছে এ জুটির বিয়ে।

গত কয়েক বছর ধরে বরখা-ইন্দ্রনীলের সংসার ভাঙা নিয়ে নানা ধরনের চর্চা হয়েছে ইন্ডাস্ট্রিতে। কিন্তু ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে তাদের কেউই কখনো মন খুলে কথা বলেননি। এবার ইন্দ্রনীলের সঙ্গে সংসার ভাঙার নেপথ্যের নানা ঘটনা নিয়ে কথা বলেছেন বরখা।

ভারতীয় একটি গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন বরখা। বিবাহিত জীবনের এ পর্যায়ে পরস্পরের হাত ছেড়ে দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে বরখা বলেন, “আর কোনো উপায় ছিল না তাই। আমরা চার বছর সেপারেশনে ছিলাম। তারপর ডিভোর্সের মামলা শুরু হয়। এই ফেজটা আমার জন‍্য ভীষণ কষ্টের। আপাতত জীবনে কীভাবে মুভ অন করা যায়, সেটা নিয়েই ভাবছি।”

১৫ বছরের দাম্পত‍্য জীবনে হঠাৎ কেন বিশ্বাস ভেঙে গেল? এ প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে, তা ইন্দ্রনীলকে করার পরামর্শ দিয়ে বরখা বলেন, “এ প্রশ্নের উত্তর ইন্দ্রনীল দিতে পারবে। আমি ভীষণভাবে বিয়েটা টিকিয়ে রাখতে চেয়েছি। কিন্তু ইন্দ্রনীল বোধহয় জীবনটা নতুনভাবে শুরু করতে চায়। তাই ও ডিভোর্স চেয়েছে। আমি আর জোর করিনি। কারণ জোর করে কাউকে আটকে রাখা যায় না। ওর সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়েছি।”

এক সময় বরখা জানিয়েছিলেন, ইন্দ্রনীল আছে বলেই সংসার, ক্যারিয়ার সমানতালে চালাতে পারছেন। অথচ সেই জীবনেই ছন্দপতন। এ প্রসঙ্গ তোলার পর বরখা বলেন, “আমরা একসঙ্গে যখন ছিলাম তখন পরস্পরকে ভীষণ সাপোর্ট করতাম। কিন্তু পরিস্থিতি বদলেছে। তবে আমি এখন বিশ্বাস করি, ঈশ্বর যা করেন, তা ভালোর জন‍্যেই করেন। একটা সময় ইন্দ্রনীলকে কেন্দ্র করেই আমার জীবন ছিল। এখন নিজের মতো করে গুছিয়ে নিতে শুরু করেছি।”

ইন্দ্রনীল-বরখার সংসার ভাঙার গুঞ্জন চাউর হওয়ার পর পরকীয়ার অভিযোগও উঠেছিল। কেউ কেউ দাবি করেছিলেন, অভিনেত্রী ইশা সাহার সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছেন ইন্দ্রনীল। কারো কারো অভিযোগ ছিল, অভিনেতা-প্রযোজক আশিষ শর্মার সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়েছেন বরখা। সংসার ভাঙার পেছনে তৃতীয় কোনো ব্যক্তির ভূমিকা আছে কিনা, সে প্রশ্ন রাখা হয় বরখার কাছে।

এ বিষয়ে বরখা বলেন, “সেটাও ইন্দ্রনীলই সবচেয়ে ভালো বলতে পারবে। অনেক কিছু কানে এসেছে। সত‍্যি-মিথ‍্যের হিসাব করতে চাইনি। সম্পর্কটা আর থাকছে না, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। কেন ভাঙছে সেটা নিয়ে আমি মাথা ঘামাতে চাই না।”

নতুন করে জীবন শুরু করার বিষয়ে বরখা বলেন, “এখন গোটা জীবনটাই নতুন। তবে অন‍্য সম্পর্কে যাওয়ার জন‍্য যে বিশ্বাস দরকার, সেটা আর বেঁচে নেই। তা ছাড়া আমার মেয়ে আমাকে বলে দিয়েছে, আর প্রেম বা বিয়ে না করতে। ও কথা দিয়েছে সারাজীবন আমার পাশে থাকবে। মেয়ের চেয়ে ভালো লাইফ পার্টনার আর কে হতে পারে!”

সংসার ভাঙার পর বরখার অনেক কিছুই বদলে গেছে। সম্পর্ক নিয়েও তার ধারণা বদলেছে। বরখা বলেন, “সম্পর্ক নিয়ে যে ধারণা আমার ছিল, সেটা একেবারে ওলট-পালট হয়ে গিয়েছে। আমার কাছে এই মুহূর্তে সফল সম্পর্ক মানে, দু’টো মানুষের একসঙ্গে থাকা। দু’জন এক বিন্দুতে থাকলে সমস্ত বাধা অতিক্রম করা যায়। শুধু একে-অন্যের হাতটা ধরে রাখতে হবে।”

বরখা ভারতীয় টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র অভিনেত্রী হিসেবেই বেশি পরিচিত। ‘রাজনীতি’ সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে পা রাখেন তিনি। এতে একটি গানে দেখা যায় এই অভিনেত্রীকে। বলিউডের ‘রামলীলা’ ও ‘স্মার্ট অ্যান্ড কোং’ সিনেমায় অভিনয় করেন তিনি। এছাড়া কলকাতার ‘দুই পৃথিবী’, ‘আমি সুভাষ বলছি’, ‘ব্ল্যাক’সহ বেশ কিছু সিনেমায় অভিনয় করেছেন এই অভিনেত্রী।

অন‌্যদিকে মডেলিংয়ের মাধ‌্যমে শোবিজ অঙ্গনে পা রাখেন ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত। পরবর্তীতে টিভি সিরিয়ালে অভিনয় শুরু করেন। ২০০৪ সালে হিন্দি ভাষার ‘শুকরিয়া: টিল ডেথ ডু আস অ্যাপার্ট’ সিনেমার মাধ‌্যমে বড় পর্দায় পা রাখেন। ২০০৯ সালে ‘অংশুমানের ছবি’ সিনেমার মাধ‌্যমে টলিউড চলচ্চিত্রে পা রাখেন। পরবর্তীতে খল চরিত্রে অভিনয় করে দারুণ খ‌্যাতি কুড়ান এই অভিনেতা। ২০১২ সালে বাংলাদেশের ‘চোরাবালি’ সিনেমায় দেখা যায় তাকে।

২০০৮ সালে বরখার সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন ইন্দ্রনীল। ২০১২ সালে তাদের ঘরে আলো করে আসে কন‌্যা মীরা।