বাংলাদেশ টেলিভিশনের বহুল দর্শকপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’। দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সভ্যতা, সংস্কৃতি, শিল্প-সাহিত্য, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনসহ নানা বিষয়ই তুলে আনা হয় এই অনুষ্ঠানে। অনুষ্ঠানটি রচনা, পরিচালনা ও উপস্থাপনা করেন হানিফ সংকেত।
‘ইত্যাদি’র এবারের পর্ব ধারণ করা হয়েছে ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলের টংকনাথ রাজবাড়িতে। বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) সন্ধ্যার পর দৃশ্যধারণের কাজ শুরু হয়। এর কিছুক্ষণ পরই চেয়ার ছোড়াছুড়ির ঘটনা ঘটে। যার একটি ভিডিও ক্লিপ সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। এ নিয়ে জোর চর্চা চলছে অন্তর্জালে। অবশেষে ঘটনার সত্যতা জানালেন হানিফ সংকেত।
টংকনাথের রাজবাড়িতে ইত্যাদির শুটিং করার যাত্রা বর্ণনা করে হানিফ সংকেত একটি গণমাধ্যমে বলেন, “সাধারণত যেকোনো প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন বা দেশের কোনো ঐতিহ্যবাহী স্থানে আমরা ইত্যাদি অনুষ্ঠানটা করি। প্রতিটি জায়গারই আলাদা একটা বৈশিষ্ট্য থাকে। ঠাকুরগাঁওয়ে এ রকম কিছু নেই। তারপরও আমরা জানতে পেরেছি, রানীশংকৈল উপজেলায় টংকনাথের রাজবাড়ি নামে একটি জমিদারবাড়ি আছে, যেটা খুবই বিখ্যাত, প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শনও। আমাদের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এটা সংরক্ষণও করেছে। এরপর আমরা ওখানকার জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বললাম। তারা বললেন, ‘এটা তো গ্রামীণ এলাকা, এখানে অত লোক পাবেন? ঠাকুরগাঁওয়ের অন্য জায়গায় করা যায় কি না?’ আমি বললাম, ‘ঠাকুরগাঁওয়ে করব না। আমরা তো মাঠে করি না।’ তখন তারা বলেন, ‘দর্শক না এলে হবে?’ আমি তখন বলেছি, ‘আমাদের দুই থেকে তিন হাজার দর্শক হলেই চলবে। আমরা তো স্থাপনার বাইরে যেতে পারব না।’ সবকিছু মিলে টংকনাথ রাজবাড়িতে অনুষ্ঠানটি করলাম।”
অনুষ্ঠানস্থলে চেয়ার ছোড়াছুড়ির কথা স্বীকার করে হানিফ সংকেত বলেন, “অনুষ্ঠানের আগে আমরা আট হাজার প্রবেশ পাস দিয়েছিলাম। ওখানে কিন্তু আর্মি, পুলিশ সবাই ছিল। যখনই আমরা অনুষ্ঠান শুরু করলাম, দর্শক তালি দিল। যেই আমি মঞ্চে এলাম, শুনলাম, চারদিক থেকে তিন কিলোমিটারের মতো রাস্তা প্যাকড। পাঁচ লাখের অধিক লোক। এত মানুষকে আমি কোথায় বসতে দেব। লোকজন করল কি, বাঁশের ব্যারিকেড ছিল, তা ভেঙে ঝাঁপিয়ে পড়ল। তখন তো ম্যাচাকার অবস্থা। ওখানে নারী আছেন, শিশু আছে, আছেন বিভিন্ন বয়সি মানুষ। এরপর হাউকাউ শুরু হয়ে গেল। পুলিশ থামানোর চেষ্টা করছে, আমিও করছি। অস্থির অবস্থা। কেউ চেয়ার–ছোড়াছুড়ি করছে।”
পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য অনুষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেন হানিফ সংকেত। এ তথ্য উল্লেখ করে বরেণ্য এই সঞ্চালক বলেন, “আমি তখন প্রশাসনকে ডেকে বললাম, ‘এভাবে অনুষ্ঠান করা যাবে না। মানুষ শান্ত হোক, তারপর অনুষ্ঠান শুরু করব। আপাতত আমরা অনুষ্ঠান কিছু সময়ের জন্য বন্ধ রাখি।’ আমরাও অনুষ্ঠানের দৃশ্যধারণ বন্ধ করে দিয়ে লাইট বন্ধ করে দিলাম। জানিয়ে দিলাম, ‘অনুষ্ঠান আপাতত হচ্ছে না। আপনারা শান্ত হন।’ এ–ও অনুরোধ করেছি, ‘চলে যান। পরবর্তী সময় আমরা চিন্তা করব কী করা যায়।’ লোক যেতে তিন ঘণ্টা লেগে গেল।”
পুরো ঘটনাকে ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ বলে মন্তব্য করেছেন হানিফ সংকেত। তার ভাষায়— “এটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা, বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এখানে কিন্তু কোনো ঝগড়া নেই, মারামারি নেই। হামলা নেই।”
স্থানীয় বাসিন্দারাও এ ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন। এ তথ্য উল্লেখ করে হানিফ সংকেত বলেন, “সবাই পরে খুব দুঃখ প্রকাশ করেছে। তারা এ–ও বলেছে, ‘আপনাদের ভালোবাসে, এটা তো অন্যায় না। ভালোবাসি বলেই এই ঘটনা ঘটেছে।’ এখানে কেউই মারামারি করতে আসেনি, হামলাও করতে আসেনি। এখানে এসেছিল উৎসুক জনতা। তারা এসেছে ‘ইত্যাদি’ দেখবে, আমাদের দেখবে, ‘ইত্যাদি’র শুটিং দেখবে বলে।”