উদ্যোক্তা/ই-কমার্স

ফেসবুক পেজ ‘বাদামওয়ালা’ থেকে সফল উদ্যোক্তা রাকিব

রাকিবুল হাসান রাকিব, জন্ম ও বেড়ে ওঠা লালমনিরহাট জেলার কালিগঞ্জে। দুই ভাই বোনের মধ্যে পরিবারের ছোট সন্তান তিনি। ২০১৬ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন রাকিব। বর্তমানে লালমনিরহাট সরকারি কলেজে বি.বি.এ শেষ বর্ষে অধ্যয়নরত আছেন তিনি।

পড়াশোনার পাশাপাশি অনলাইনে দেশীয় পণ্যের একজন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা রাকিব। ফেসবুক পেজ ‘বাদামওয়ালা’-এর মাধ্যমেই লাখ টাকার পণ্য বিক্রয় করেছেন তিনি। শুধু চিনাবাদামই নয়, তার পেজে প্রাধান্য পেয়েছে হাতে ভাজা মুড়ি, খই, মুড়কি, মোয়া, ঢেঁকিতে বানানো বিভিন্ন ধরনের ছাতু, গ্রাম বাংলার নানা রকম পিঠা, ঢেঁকিতে বানানো আতপ চালের গুঁড়া, রংপুরের ঐতিহ্যবাহি খাবার সিদল, খাঁটি গাওয়া ঘি ও বিভিন্ন মৌসুমি ফল ।

করোনা মহামারীতে ফেসবুক গ্রুপ উই (উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম) থেকেই ব্যবসা করার সিদ্ধান্ত নেন রাকিব। কিন্তু কেমন পণ্য নিয়ে ব্যবসা করবেন? কীভাবে করবেন? লোকে কী বলবেন? ছিলো এসব নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব । অপরদিকে ব্যবসা শুরুর করার মতো টাকাও ছিল না।   

এরইমধ্যে অফলাইনে মামার বাদাম স্টক ব্যবসা থেকে দুই মাস অভিজ্ঞতা অর্জন করেন রাকিব। তখন থেকেই পরিকল্পনা তার অনলাইনে চিনাবাদাম নিয়ে ব্যবসা করার। বন্ধুদের কটু কথায় কান না দিয়ে, মায়ের দেওয়া ১ হাজার টাকা দিয়ে ১৫ কেজি বাদাম নিয়েই অনলাইনে তিনি হয়ে উঠেন উদ্যোক্তা।

নিজের উদ্যোগের কথা বলতে গিয়ে রাকিব বলেন, ‘আমার যেহেতু অর্থনৈতিক অবস্থা খুব একটা ভালো ছিলো না, তাই বড় ধরনের ব্যবসা করা সম্ভব হতো না। সেই চিন্তা থেকেই অল্প টাকায় দেশীয়, ঐতিহ্যবাহি ও ভেজালমুক্ত পণ্য ক্রেতার কাছে পৌঁছে দিতে আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস’।

তিনি আরও বলেন, ‘ছাত্র অবস্থায় উদ্যোক্তা জীবনে অনেক মানুষের সঙ্গে পরিচিত হয়েছি যা আগে আমার দ্বারা সম্ভব হতো না। আমি আমার ৪৮ বছর বয়সী মাকে উদ্যোক্তা বানিয়েছি। যিনি এই বয়সে এসে তার সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে পারছেন। এছাড়াও আমার কাজের সঙ্গে আরও ২ জন লোক আছে। যারা আমার কাজে সহযোগিতা করেন। যাদের আমি কিছু হলেও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করতে পারছি। এটাই আমার সফলতা। এছাড়াও আমার ব্যবসার সফলতায় পরিবারের প্রতিটা সদস্যদের ভুমিকা ছিলো। মা ও মামির  অনুপ্রেরণা এবং কিছু শুভাকাঙ্ক্ষীদের দোয়া সবসময় পেয়েছি’।   

এভাবেই প্রায় ১০ মাসের উদ্যোক্তা জীবনে রাকিবের বিক্রির অর্থ দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ টাকা। বর্তমানে বাজারে দেশীয়, নিরাপদ ও বিশুদ্ধ পণ্যগুলোকে ব্রান্ডে পরিনত করতে চান রাকিব। ভবিষ্যতে তার পেজের পণ্যগুলো নিয়ে দেশের জেলা শহরগুলোতে আউটলেট দেওয়ার প্রবল ইচ্ছা পোষণ করেন তিনি। দেশীয় এমন পণ্য নিয়ে ছাত্র রাকিব অংশ নিতে চান দেশের রপ্তানি খাতেও ।