উদ্যোক্তা/ই-কমার্স

করোনাকালের অবসরে শিক্ষক যখন ই-কমার্স উদ্যোক্তা

মোছাঃ ছাবিকুন্নাহার, পেশায় একজন সহকারী শিক্ষক। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে পরিবারের তৃতীয় সন্তান তিনি। পড়াশোনায় বিজ্ঞান বিভাগের একজন শিক্ষার্থী ছিলেন ছাবিকুন্নাহার। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের পর রাঙামাটি কৃষি কলেজ থেকে কৃষি বিভাগে ডিপ্লোমা করেন। পরবর্তীতে ডিপ্লোমায় অধ্যয়নরত অবস্থায় চাকরি হয়ে যায় তার।

এরপর করোনাকালীনে বিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যায়। আর এই অবসর সময়কে কাজে লাগাতে ছাবিকুন্নাহার হয়ে উঠেন একজন ই-কমার্স ব্যবসায়ী। তিনি ব্যবসা করছেন রাঙামাটি জেলার দুর্গম লংগদু উপজেলা থেকে। সম্প্রতি রাইজিংবিডিতে তিনি তার উদ্যোগ ও ফেসবুক পেজ ‘রাঙ্গাঘর’ নিয়ে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন রাইজিংবিডির  উদ্যোক্তা/ই- কমার্স পাতার রাঙামাটি জেলার কন্ট্রিবিউটর লেখক শিরীন সুলতানা অরুনা-

রাইজিংবিডি: ব্যবসা শুরুর গল্পটা কেমন ছিল?  

ছাবিকুন্নাহার: সত্যিই বলতে ব্যবসার শুরুটা সহজ ছিলো না। কভিড-১৯ এর কারণে ১৬ই মার্চ, ২০২০ থেকে বিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যায়। ৮ জুলাই, ২০২০ সালে আমি ফেসবুক গ্রুপ উইতে (উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম) যোগদান করি। তারপর গ্রুপের অন্যান্য মেয়েদের লেখা পড়ে নিজের ভেতর থেকে একটা তাড়া পেতে থাকি। মনে হতো, আমারো কিছু করা দরকার। অবসরের সময়গুলোতে উই এর পোস্টগুলো পড়তাম। আর ভাবতে থাকি, কি করা যায়?

এমন কিছু করতে চেয়েছিলাম যেখানে আমি নিজেও উপকৃত হই এবং আমার পণ্য যারা ব্যবহার করবেন, তারাও যেনো উপকৃত হতে পারেন। এভাবেই ব্যবসার শুরু। এজন্য পরিবার ও অনেকের থেকে ব্যাঙ্গাত্মক কথা শুনেছি। তবে প্রথম থেকেই স্বামীর সাপোর্ট ছিলো।  দুইজন মিলেই কাজ শুরু করি।  

রাইজিংবিডি: কোন ধরনের পণ্য নিয়ে ব্যাবসা করছেন?

ছাবিকুন্নাহার: আমার পেজের সিগনেচার পণ্য পাহাড়ি আদার গুঁড়া এবং নারিকেলের চিঁড়া। এছাড়াও পাহাড়ি হলুদ গুঁড়া, হাটহাজারীর মিষ্টি ও ঝাল মরিচের গুঁড়া, ধনিয়া ও জিরার গুঁড়া, বিভিন্ন রকমের আচার এবং পাহাড়ে চাষকৃত বিন্নি ও পোলাও চালের গুড়া ।

রাইজিংবিডি: এমন পণ্য নিয়ে কাজ করার পরিকল্পনা কেন ছিল?

ছাবিকুন্নাহার: অনেক সময় মানসম্মত গুঁড়া মসলা খুঁজে পেতে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। রান্নার প্রথম ও প্রধান উপকরণ হলো মসলা। এখন মসলাই যদি ভালো মানের না হয়, তাহলে পুরো খাবারের স্বাদটাই নষ্ট হয়ে যায়। অপরদিকে যেহেতু আমি একজন কর্মজীবি নারী, কর্মজীবী নারীদের সময়ের গুরুত্বটা বুঝি। এজন্যই আদা গুঁড়া করার কথা চিন্তা করেছি। আর নারিকেলের চিঁড়া আমাদের পুরনো ঐতিহ্যের কথা মনে করিয়ে দেয়। পরিচ্ছন্ন এবং স্বাস্হ্যসম্মত নারিকেলের চিঁড়া পাওয়া যায় না বললেই চলে। এজন্যই এই দুটি পণ্যকে গুরুত্ব দিয়ে ব্যবসায় নেমেছি।

রাইজিংবিডি: আপনার উদ্যোগের সফলতার কথা জানতে চাই।

ছাবিকুন্নাহার: কাজ শুরু করেছি ডিসেম্বর, ২০২০ সালের একদমই শেষের দিকে। পণ্য ভেলিভারি শুরু করেছি এ বছরের জানুয়ারি মাস থেকে। ৪এপ্রিল, ২০২১ এর মধ্যে অনলাইনেই লাখ টাকার পণ্য বিক্রি করতে পেরেছি আলহামদুলিল্লাহ।

এই অল্প সময়ের মধ্যে রিপিট কাস্টমার পেয়েছি অনেককেই। তিন পার্বত্য জেলার উইর (উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম) জেলা প্রতিনিধি শিরীন সুলতানা অরুনা আপুও অনেকবার আমার পণ্য নিয়েছেন, এটা আমার জন্য অনেক আনন্দের। বেশ কয়েকজন বলে রেখেছেন, আমার মসলা শেষ হলে আপনার কাছ থেকেই নিবো। এই কথাগুলো ভীষণ অনুপ্রাণিত করে। কাজটাকে বেছে নিয়েছি সেবা হিসেবে। তাই আমি বেশি লোকের কাছে পৌঁছাতে না পারি, ১০ জন মানুষও যদি আমার পণ্য ব্যবহার করে সন্তুষ্ট  হয় তবে এটাই আমার সফলতা।

রাইজিংবিডি: উদ্যোক্তা জীবনের শুরু কতদিন ধরে এবং রেভিনিউ বা আয় বা বিক্রয় কেমন?

ছাবিকুন্নাহার: আগের প্রশ্নোত্তরে বলেই দিয়েছি ডিসেম্বরের শেষ দিকে কাজ শুরু করি।  আসলে অনলাইন ব্যবসায় যতো বেশি অ্যাক্টিভ থাকা যায় এবং পণ্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো যায়, ততো বেশি বিক্রি হয়। একা হাতে সংসার ও ছোট দুই বাচ্চা সামলিয়ে ব্যবসায় সময় দিচ্ছি। সবকিছু মিলিয়ে আলহামদুলিল্লাহ বেশ ভালো সাড়া পাচ্ছি।

রাইজিংবিডি: উদ্যোক্তা জীবনের সফলতায় কাদের অবদান বেশি ছিল?

ছাবিকুন্নাহার: প্রথমে কৃতজ্ঞতা জানাই সৃষ্টিকর্তার প্রতি যিনি আমাকে কাজ করার জন্য শারীরিক ও মানসিক ভাবে শক্তি দিয়েছেন।  তারপর কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই উইর সভাপতি নিশা আপু এবং সবার প্রিয় রাজীব স্যারের প্রতি।  উই না থাকলে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন কখনোই দেখতাম না।  আর রাজীব স্যারের নির্দেশনামূলক পোস্টগুলো ছাড়া এগিয়ে যাওয়া ছিলো শুধুই স্বপ্ন।  তারপর কৃতজ্ঞতা জানাই আমার স্বামীর প্রতি, যিনি প্রতিনিয়ত আমার সঙ্গে সময় ও শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন। এরপর আমার ছোট দুই ভাই, যারা বিভিন্ন ভাবে আমার কাজে সহায়তা করে থাকে।

রাইজিংবিডি: ব্যবসা নিয়ে ভবিষ্যতে কতদূর যেতে চান এবং পরিকল্পনা কি?

ছাবিকুন্নাহার: স্বপ্নতো আকাশের সমান বড়।  আমি স্বপ্ন দেখি আমার পণ্য দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও যাবে।  তবে এর জন্য আরো অনেক পরিশ্রম ও সময় দরকার।  আমি চেষ্টা করছি সবকিছুর আগে পণ্যের গুণগত মান ধরে রাখতে।  নিজ হাতে সবকিছু তৈরি করছি এখন পর্যন্ত।  ক্রেতাদের সেবা ও পণ্যের কোয়ালিটি যদি ঠিক রাখতে পারি, তবে আমার স্বপ্ন সফলতার মুখ দেখবেই ইনশাআল্লাহ।

রাইজিংবিডি: ধন্যবাদ আপনাকে।

ছাবিকুন্নাহার: ধন্যবাদ রাইজিংবিডিকেও, আমার ব্যবসা নিয়ে বলার সুযোগ দেওয়ার জন্য।

লেখক: স্বত্ত্বাধিকারী, এস এস এগ্রো প্রোডাক্ট, জেলা প্রতিনিধি উই (রাঙামাটি,খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান) এবং জেলা কন্ট্রিবিউটর লেখক, উদ্যোক্তা/ ই-কমার্স পাতা, রাইজিংবিডি ডটকম।