উদ্যোক্তা/ই-কমার্স

সৃজনশীল কাজ পছন্দ উদ্যোক্তা ফাহিমার

তিতুমীর সরকারি কলেজের প্রাক্তন ছাত্রী ফাহিমা খানম। স্নাতকের থাকা অবস্থায় ২০০০ সালে বিয়ে হয়ে যায়। সংসার, সন্তান সামলানোর পাশাপাশি একই সঙ্গে চালিয়ে যান পড়াশোনাও। এরই মধ্যে ২০০৫ সালে রাজধানীর কবি নজরুল সরকারি কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।

তবে চাকরি কিংবা নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবার সুযোগ তেমন একটা পাননি তিনি। একটি বেসরকারি স্কুলে কিছুদিন চাকরি করলেও দুই সন্তানের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে তার সেটা আর চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সংসার আর দুই সন্তানের লেখাপড়ার পিছনে সময় দিতে গিয়ে তিনি অন্যদিকে নজর দেওয়ার ফুসরত পাননি। কিন্তু তার মনের মধ্যে নিজের জন্য কিছু করার ইচ্ছে সবসময়ই ছিল। ২০২০ সালে করোনাকালে ঘরবন্দি থাকা অবস্থায় বেশিরভাগ সময় ব্যয় হতো ফেসবুকে। তখন তিনি সময়কে কাজে লাগানোর কথা ভাবেন। এরই মধ্যে ফেসবুকে স্ক্রল করতে গিয়ে উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স (উই) নামক গ্রুপের খোঁজ পান, আর সিদ্ধান্ত নেন উদ্যোক্তা হওয়ার।

ফাহিমা খানম বলেন, নিজের জন্য কিছু করার ইচ্ছে সবসময়ই ছিল। করোনাকালে ফেসবুকে স্ক্রল করতে করতে উই এর খোঁজ পাই। ভাবলাম, নিজেকে নিয়ে কিছু করার এটাই উত্তম সুযোগ। কারণ বর্তমান ডিজিটালাইজেশনের যুগে ঘরে বসেই সংসার সামলানোর পাশাপাশি নির্দ্বিধায় আমি কাজটা করতে পারবো; হলে গেলাম উদ্যোক্তা।

তিনি নারী উদ্যোক্তা হওয়ার মৌলিক ধারণা পেয়েছেন ফেসবুকভিত্তিক ডিজিটাল স্কিল ফর বাংলাদেশ নামক গ্রুপ থেকে। এছাড়াও অনলাইন, অফলাইন মিলিয়ে বেশকিছু কোর্সও সম্পন্ন করেছেন। ফলে তার উদ্যোক্তা হিসেবে পথ চলা বেশ সহজ হয়েছে। এরই মধ্যে তিনি ফেসবুকে ‘নারীকথন’ নামে একটি পেজ খোলেন। এর মাধ্যমে তিনি তার পণ্যগুলো প্রদর্শনী ও বিক্রি করে থাকেন।

এ নারী উদ্যোক্তা যেকোনো ধরনের সৃজনশীল কাজ করতে খুবই পছন্দ করেন। সেখান থেকেই মূলত তিনি ব্লক প্রিন্ট এবং হ্যান্ডস্টিচ নিয়ে কাজ শুরু করেন। 

তিনি বলেন, পোশাক ডিজাইন করে পরার অভ্যাস আমার সবসময়ই ছিল। এছাড়া ঘরের সাজ-সরঞ্জামে সৃজনশীলতা আনতেও আমার খুব ভালো লালে! সে জায়গা থেকেই আমি সবরকম পোশাক নিয়েই কাজ করছি। এর মধ্যে রয়েছে- শাড়ি, থ্রি-পিস, পাঞ্জাবি, শাল ইত্যাদি। এছাড়া হোমডেকরের মধ্যে রয়েছে- বিছানার চাদর, কুশন কভার, পর্দা ইত্যাদি। এসব পণ্যে ব্লক ফিউশন নিয়ে কাজ করছি। তাছাড়া আমার সিগনেচার পণ্য হলো হ্যান্ডস্টিচ ডিজাইনের ওড়না।

ওড়না আমাদের দেশের নারীদের পোশাকের অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ হওয়ায় তিনি এটা সিগনেচার পণ্য হিসেবে বেছে নিয়েছেন। ব্লক ফিউশন করা টাঙ্গাইলের কটন, হাফসিল্ক, মসলিন, সেমিমসলিন শাড়িতে তিনি মন জুগিয়েছেন অসংখ্য গ্রাহককে। 

এ নারী উদ্যোক্তার বেশিরভাগ পণ্যের কাজগুলো কারখানাতেই সম্পন্ন হয়। কিন্তু ফেব্রিক সংগ্রহ, ডিজাইন, রঙ ইত্যাদি নিজেই করে থাকেন। অবশ্য হ্যান্ডস্টিচ ও ব্লক প্রিন্টের জন্য ছয়জন সহযোগী রেখেছেন তিনি।

ব্লক প্রিন্ট সহজে করা গেলেও হ্যান্ডস্টিচ সময় সাপেক্ষ। অনেক সময় ডিজাইনের উপর ভিত্তি করে একটি কাজে ১৫ দিন থেকে শুরু করে দুই মাস পর্যন্ত লেগে যেতে পারে। কিন্তু তিনি ভালো লাগার জায়গা থেকে এ সময় সাপেক্ষ কাজগুলো করে থাকেন।

তিনি বলেন, আমি এ সময় সাপেক্ষ কাজগুলো ভালো লাগার জায়গা থেকেই করি। শুধু ভালো লাগা থাকলেই হয় না, কাজের উপর নিজের দক্ষতা থাকতে হবে সর্বোচ্চ। অন্যত্থায় খুব বেশিদূর এগিয়ে যাওয়া যায় না।

শুরুতে বেশ প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিল এ নারী উদ্যোক্তার। তিনি বলেন, শুরুর দিকে পরিবার থেকে নানা কটু কথা শুনতে হয়েছিল। আমার পরিবার বিষয়টি নিয়ে পজেটিভ চিন্তা করেনি। সবাই বলতো- ‘পড়াশোনা করে কেনো শাড়ি কাপড় বেচতে হবে?’ তবে নিজের আন্তরিক চেষ্টা আর একাগ্রতায় প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে এ পর্যন্ত আসতে পেরেছি। এর পেছনে আমার দুই সন্তান ও মায়ের ভূমিকা অপরিসীম। তাদের সাপোর্টই আমার এগিয়ে যাওয়ার শক্তি।

প্রতি মাসে মুনাফা হিসেবে তার মোটা অংকের টাকা আয় হলেও নারী উদ্যোক্তাদের মূলধন একটি বড় সমস্যা বলে মনে করেন তিনি। 

ফাহিমা বলেন, আমাদের মতো উদ্যোক্তাদের মূলধন অনেক বড় একটা সমস্যা। কারণ মূলধনের অভাবে অনেক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা যায় না। আবার চাইলেই সহজে ঋণ নেওয়া যায় না। নানা ধরনের জটিলতা রয়েছে। এজন্য এখনও ঋণ নেওয়া হয়ে ওঠেনি।

এ নারী উদ্যোক্তার স্বপ্ন নিজের একটা ব্র্যান্ড তৈরি করা, যার মাধ্যমে তার পণ্যগুলো দেশ-দেশান্তরে ছড়িয়ে যাবে। এছাড়া নারী হিসাবে নিজেকে আর্থিক দিক দিয়ে সাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি তার টিমের অন্তত পাঁচজনকে সাবলম্বী হওয়ার পথ তৈরি করে দেওয়া।