উদ্যোক্তা/ই-কমার্স

৪টি দিয়ে শুরু, রাজিয়ার খামারে এখন ৩৫টি গরু

রাজিয়া কবির, ছোটবেলা থেকেই তার শখ ছিল কিছু একটা করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর। তখন ‘নিজের পায়ে দাঁড়ানো’ না বুঝলেও এখন তিনি একজন সফল উদ্যোক্তা। ২০১৬ সালে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও এলাকায় প্রতিষ্ঠা করেন নিজের নামে খামার ‘রাজিয়া এগ্রো ফার্ম’। বর্তমানে তার খামারে গরু রয়েছে ৩৫টি।

লেখাপড়া চলাকালেই চাকরি শুরু করেন রাজিয়া। এরপর বিয়ে এবং সন্তান হওয়ার পর চাকরি ছেড়ে পুরোদস্তুর মা। ছেলের বয়স দুই বছর পার হলে ছোটবেলার শখ পূরণের চিন্তা মাথায় ভর করে রাজিয়ার। 

তবে, খামার শুরুর আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পেজ খুলে ব্লক, বাটিকসহ বিভিন্ন পোশাক ও বেডশিট নিয়ে কাজ করতেন। তার বন্ধুরা এগুলো খুবই পছন্দ করতেন। কিন্তু ছেলে ছোট থাকায় নিয়মিত সময় দিতে পারতেন না।

উদ্যোক্তা হিসেবে পথচলার গল্প বলতে গিয়ে রাজিয়া বলেন, ‘ছোটবেলায় যৌথ পরিবারে আমার বেড়ে ওঠা। দাদুকে অনেক গরু পালন করতে দেখেছি। তিনি গরুর দুধও বিক্রি করতেন। একটু বড় হওয়ার পর সেটা মনে গেঁথে যায়। তবে, আমার উদ্যোগ এটা নিয়েই হবে কখনো ভাবিনি। ছেলে হওয়ার পর তাকে খাওয়ানোর জন্য গরুর খাঁটি দুধের অভাব অনুভব করি। তখনই উপযুক্ত সময় মনে হলো। নিজের ও আত্মীয়দের খাঁটি দুধের চাহিদা পুরণ করতে মাত্র চারটি গরু নিয়ে শুরু করি খামার। সঙ্গে বেশ কিছু ষাড়ও ক্রয় করি কোরবানির সময় বিক্রির জন্য।’

এরপরই তার আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুরা গরুর খাঁটি দুধের চাহিদার কথা জানান এবং পরিচিতজনদের মাধ্যমে কিছু ক্রেতাও যুক্ত হয়। এভাবেই তার স্বজন ও বন্ধুদের উৎসাহে একটু একটু করে বড় হতে থাকে খামার। শুরু হয় পুরোদমে উদ্যোক্তা হিসেবে পথচলা। এ নিয়ে অনেকগুলো প্রশিক্ষণও গ্রহণ করেন। পর্যটন থেকে আগেই করা ‘শেফ ডিপ্লোমা’ তার বেশ কাজে দেয়। 

প্রথমে অফলাইনে কাজ শুরু করলেও ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে অনলাইনে যাত্রা শুরু করেন। এরপর উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্সে (উই) যুক্ত হয়ে তার ব্যক্তিগত পরিচিতি বেশ বৃদ্ধি পায়। উই এর সঙ্গে পরিচিত হওয়ার পর তার আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।

এ উদ্যোক্তা বলেন, গরু পালন খুব একটা সহজ কাজ নয়। নিজেদের ক্ষেতেই ভুট্টা, ঘাস, কলাইসহ বেশিরভাগ খাবার চাষ করিয়ে গরুকে খাওয়াই। এজন্য শ্রম, লোকবল, খরচ একটু বেশি হয়। তারপরও যখন কেউ গরুর দুধে কেউ ছেলেবেলার স্বাদ ফিরে পান, তখন সব কষ্ট দূর হয়ে যায়। ক্রেতারা তাদের সন্তানকে পুষ্টি নিশ্চিত করতে যখন আমার গরুর দুধ বেছে নেন, তখন সত্যি অসাধারণ অনুভূতি হয়।

দুধ ছাড়াও ঘি, পনির, বাটার, সরিষার তেল, পনির, চিজ ইত্যাদি রয়েছে তার পণ্য তালিকায়। আর পণ্য সবই তার ক্রেতাদের অনুরোধে যুক্ত হয়েছে। এতসব সফলতার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান তার স্বামীর।

তিনি বলেন, খামারে নিয়মিত বিক্রি যেমন চলে, তেমনি গরু পালন, কর্মীদের বেতনসহ সব খরচও নিয়মিতি চালাতে হয়। এজন্য প্রতিমাসে লাখ খানেক টাকা আয় হলেও সব খরচ হয়ে যায়। আমার স্বামী রাশেদুল কবিরের কথা না বললেই নয়, তার সহযোগিতার জন্যই আমি এখানে। আমি যেটা নিয়ে কাজ করছি, এখানে পারিবারিক সহায়তা না থাকলে কোনোভাবেই টিকে থাকা সম্ভব না।

তিনি আরও বলেন, ২০১৯ সাল থেকে উইতে আছি। উই থেকে অনেককিছু পেয়েছি। উদ্যোক্তা জীবনের সবকিছু এখান থেকেই শেখা। আমার ৮০ ভাগ ক্রেতাই উই থেকে এসেছে। বর্তমানে আমি উইয়ের ওয়ার্কিং কমিটির ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। নিজের সঙ্গে সঙ্গে অসংখ্য নারী উদ্যোক্তাকে এগিয়ে যেতে সহায়তা করছি।

চলতি বছর ৮ মার্চ সাহসিকা পুরস্কার পাওয়া আটজন নারীর মধ্যে তিনি অন্যতম। সরকারের পক্ষ থেকেও তিনি পেয়েছেন নারী উদ্যোক্তা অনুদান, যা তার উদ্যোগ এগিয়ে নিতে সহায়তা করেছে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানাতে গিয়ে এ সফল নারী উদ্যোক্তা বলেন, এই কোরবানিতে গরু বেচাকেনা নিয়ে বেশ ব্যস্ততা গেছে। আসলে দুই ঈদেই আমার অনেক ব্যস্ততা থাকে। কারণ রোজায় গরুর দুধের চাহিদা বেড়ে যায়, আর কোরবানির ঈদে গরুর। আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহর অশেষ রহমতে ভালো আছি। সবার দোয়া ও পরিশ্রম দিয়ে এগিয়ে যেতে চাই আরও বহুদূর। কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে চাই অসংখ্য মানুষের।