মাসুদা তাসনীম তরী পড়ালেখা করেছেন চারুকলায়। আর তিনিই যখন ফ্যাশন হাউসের স্বত্বাধিকারী তার পোশাকতো ক্যানভাস হয়েই ওঠার কথা। হয়েছেও তাই। শুরুতে ১৬০০ টাকা মত নিয়ে তিনটা প্রাইডের শাড়ি আর সামান্য কিছু রং কিনে কাজ শুরু করেছিলেন। হ্যান্ডপেইন্ট শাড়ি হলেও সময়ের সাথে ক্রেতাদের চাহিদা পুরনে পাঞ্জাবি, কামিজ বা কুর্তি, ব্লাউজ, বাচ্চাদের জামা ফতুয়া, শাল নিয়ে কাজ করছেন তরী।
রাইজিংবিডিকে মাসুদা তাসনীম তরী বলেন, ‘তন্দ্রাবতীর সকল পণ্যের ডিজাইন আমার নিজের করা। আমি নিজে হাতে এঁকে ডিজাইন তৈরি করি, আমি হ্যান্ড পেইন্ট, স্ক্রিনপ্রিন্ট, ব্লক প্রিন্ট, টাই ডাই, হাতের সেলাই সবগুলো মাধ্যমে কাজ করতেই পছন্দ করি। মাঝে কয়েকটি মাধ্যম মিলিয়ে মিশিয়ে ডিজাইন করি, এসব ফিউশন ডিজাইন আমাকে আনন্দ দেয়।’ ‘তন্দ্রাবতীর শুরুর কথা বলতে গেলে আমার কথা বলতে হবে। আমি ছোট বেলা থেকে গতানুগতিক পোশাক পরতে পছন্দ করতাম না। নিজে ডিজাইন করে, হাতের কাজ বা পেইন্ট করে পরতাম। আমার নিজের প্রথম ডিজাইন করে জামা বানিয়েছি যখন আমি ক্লাস সিক্সে পড়ি। এরপর অনেক কাজ করেছি নিজের জন্য কাছের বন্ধুদের জন্যও। আমি রাজশাহী ইউনিভার্সিটির চারুকলায় পড়ার সময় ডিজাইন করার ঝোঁকটা আরও বৃদ্ধি পায়। চারুকলায় বাংলা ১৪১৪ সালের বৈশাখে প্রথম আমি শাড়িতে হ্যান্ড পেইন্ট করি। এরপর পড়াশোনা শেষ করে পেশা হিসেবে শিক্ষকতা বেছে নেই, তখন প্রতিদিন শাড়ি পরার চাহিদা তৈরি হয়। আবার সেই ছোটবেলার সমস্যা, গতানুগতিকতার বাইরে কিছু চাই। তখন শুরু করি শাড়িতে ডিজাইন করা। সময়টা ২০১৭ সাল। উদ্যোগটা তখনই শুরু, এরপর আর থেমে থাকিনি।’— যোগ করেন মাসুদা তাসনীম তরী।
মাসুদা তাসনীম তরীর আরেকটি নাম আছে। সেই নামে ডাকতো তার নানু। নামটি হলো তন্দ্রাবতী। এই নামের সঙ্গে নানুর আদর-ভালোবাসা আর মমতা মিশে আছে। কিন্তু তরী বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নামটি হারাতে থাকে। তন্দ্রাবতী নামটি বাঁচিয়ে রাখতে চান তরী। এই নামেই নামকরণ করেছেন তার ফ্যাশন হাউসের। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘Tondraboti - তন্দ্রাবতী ’ নামে একটি পেইজ রয়েছে তার। এই পেইজে নিজের পণ্যের প্রচারণা চালান তরী। একটু একটু করে বড় হচ্ছে তার কাজের পরিসর আসলে একটু একটু করে বড় হচ্ছে নানুর রাখা নামটিও। পণ্য প্রসারের জন্য তরী নিয়মিত পেইজে এড ক্যাম্পেইন করেন। এ ছাড়া ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপেও নিয়মিত লেখেন এবং প্রচারণা করেন। ক্রেতাদের মুখে মুখেও ছড়িয়ে গেছে তন্দ্রাবতীর সুনাম। বিভিন্ন উদ্যোক্তা মেলায় অংশগ্রহণ করেও প্রচারণা কার্যক্রম পরিচালনা করেন মাসুদা তাসনীম তরী।
মাসুদা তাসনীম তরীর জন্ম ওঠা বেড়ে ওঠা রাজশাহীতে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চারুকলায় অনার্স, মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন। চাকরি আর উদ্যোগ এগিয়ে নিচ্ছেন একইসঙ্গে। উৎসব এলে তন্দ্রাবতীর পণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়। ইদ, পূজা, পহেলা বৈশাখ, ফাগুনে তন্দ্রাবতীর পোশাকের কদর বেশি। এক উৎসবে দেড় লাখ টাকাও বিক্রি করেন মাসুদা তাসনীম তরী।
তার এই উদ্যোগের সঙ্গে আরও পাঁচজন যুক্ত রয়েছেন। টেইলারিং এ তিনজন, প্রিন্ট এ দুজন। ডিজাইন এবং পেইন্টের কাজগুলো তরী নিজেই করেন। এই উদ্যোক্তা জানান, ‘পণ্যগুলো ঋতুভেদে আলাদা চাহিদা থাকে, যেমন শীতে শালের চাহিদা থাকে, গরমে বাচ্চাদের জামার চাহিদা থাকে। এছাড়া শাড়ি পাঞ্জাবিগুলো সারাবছর চাহিদা থাকে।’
তরীর স্বপ্ন দেশি পোশাকের প্রসারে কাজ করবেন। দেশি কাপড়ের তাঁতিদের উন্নতিতে অবদান রাখবেন।