দুই দিন ব্যাপী নারী উদ্যোক্তা মেলার আয়োজন করেছে পাওয়ার অব শি। ধানমণ্ডির মাইডাস সেন্টারের ১২ তলায় দেশীয় পণ্যের সমাহার নিয়ে এসেছেন নারী উদ্যোক্তারা। মোট ২৭জন উদ্যোক্তা অংশ নিয়েছেন এই মেলায়। সকাল ৯ টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলছে মেলা। ক্রেতারা দেখে শুনে পছন্দ মতো পণ্য ক্রয় করতে পারছেন আবার দেশ-বিদেশের বায়াররাও সরাসরি যোগাযোগ করার সুযোগ পাচ্ছেন এই উদ্যোক্তাদের সঙ্গে। ‘অনুপমা তুমিই গড়বে দেশ’ স্লোগান নিয়ে আয়োজিত এই মেলায় উদ্যোক্তাদের মৌলিক ডিজাইনে তৈরি দেশীয় পোশাক, গয়না, শো-পিস-এর পসরা বসেছে। আরও আছে খাবারের দোকান। মেলায় আগতরা ফ্রিতে মেহিদিতে রাঙিয়ে নিতে পারছেন হাত। রয়েছে গানের আয়োজন।
নারী উদ্যোক্তা মেলার আয়োজক সাবিনা স্যাবি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘বাংলাদেশের বেশিরভাগ উদ্যোক্তা ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মে কাজ করেন। করোনার সময়ে তাদের ব্যবসায়ে একটা ধস নামে। তারপরেও তারা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে পেরেছিলেন। কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটা একেবারে বন্ধ করে দেওয়া হলো। এর প্রভাবে ই-কমার্সে পুরোপুরি স্থবির অবস্থা তৈরি হয়ে যায়। তারপরেই শুরু হলো দেশে বন্যা পরিস্থিতি। বন্যার প্রভাবও ই কমার্স সেক্টরে পড়েছে। ওই সময় অনেক উদ্যোক্তা অর্থনৈতিক এবং মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এখন পর্যন্ত অনেকেই স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে পারেননি। পাওয়ার অব শি যেহেতু নারীদের শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য নিয়েও কাজ করে, সেই জায়গা থেকে আমরা সিদ্ধান্ত নেই নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে একটি মেলার আয়োজন করার। এই যে একটা প্ল্যাটফর্মে এতজন উদ্যোক্তা এসেছেন এতে তাদের মানসিক শক্তি ও আত্মবিশ্বাস বাড়বে। নতুন উদ্যোক্তাদের আমরা ফ্রিতে স্টল দিয়েছি। বন্যার্ত এলাকার যেসব নারী উদ্যোক্তা তাদেরকেও ফ্রি স্টল দিয়ে এনেছি।’
অটিজম অ্যাডাল্ট অ্যাকটিভিটিজ সেন্টারের ‘ফুলডানা’ এই মেলায় অংশ নিয়েছে। সাবিনা স্যাবি বলেন, ‘আমরা ফুলডানাকে এখানে সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে এনেছি। ওদেরকে ৫০ শতাংশ ডিসকাউন্টে স্টল বরাদ্দ দিয়েছি। আমরা চেয়েছি তারা সাধারণ মানুষের প্ল্যাটফর্মে দাঁড়াক।’
সুযোগ সৃষ্টি করার জন্য উদ্যোক্তাদের একটা প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসা হয়েছে। যাতে দেশ-বিদেশের বায়াররা সহজেই তাদের পণ্য দেখতে পারে এবং ক্রেতারা পণ্য দেখে ক্রয় করতে পারে। মেলায় দেশীয় পণ্যের সমাহার নিয়ে এসেছেন উদ্যোক্তারা। কেউ পোশাকের জমিন রাঙিয়েছেন মনের মাধুরি মিশিয়ে, কেউবা তৈরি করেছেন নিপুন ডিজাইনের গয়না।
আটকুঠুরি নয় দরজা-এর সত্বাধিকারী হাফসা মোসলেম বলেন, ‘জুলাই বিপ্লবের সময় বেচাকেনা একেবারে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ধীরে ধীরে বাড়ছে কিন্তু তাও সন্তোষজনক নয়। আগে যেখানে মাসে প্রায় পাঁচ লাখ টাকার গয়না বিক্রি হতো এখন সেটা এক থেকে দেড় লাখে নেমে এসেছে।’
হাফসা আরও বলেন, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রভাবও পড়েছে গয়নার ব্যবসায়। মানুষ আগে খাবার কেনেন, তারপর পারলে বিলাসী পণ্য কেনেন। এখন এমন অবস্থা যে চারশো জনের সঙ্গে মেসেঞ্জারে কথা হওয়ার পর চারজন গয়না কেনেন।
জেনেটস ক্রিয়েশনের সত্বাধিকারী জেনেটস গোমেজ বলেন, ‘জুলাই বিপ্লবের সময় ব্যবসায় একেবারে থমকে গিয়েছিল। কিন্তু এখন আবার অর্ডার পাচ্ছি। যেহেতু বিয়ের মৌসুম চলে এসেছে গায়ে হলুদের শাড়ি, পাঞ্জাবির বড় বড় থিমেটিক অর্ডারও আসতে শুরু করেছে।’
উল্লেখ্য, ২০১৭ সাল থেকে নারীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কাজ করছে পাওয়ার অব শি।