দিনাজপুরের হিলিতে দেশি মুরগির খামার করে নিজেকে স্বাবলম্বী করার স্বপ্ন দেখছেন হাকিমপুর নারী উদ্যোক্তা ফোরমের সহ-সভাপতি ফেরদৌসী মনি। দেশি মুরগি ছাড়াও গরু, ছাগল, কবুতর, গাড়ল, বিদেশি পাখি ও বিভিন্ন প্রজাতির মুরগির মোট সাতটি খামার রয়েছে তার।
বর্তমান তার খামারে অন্তত ১ হাজার দেশি মুরগি রয়েছে। আর এ সব মুরগির দেখভাল করে জীবিকা নির্বাহ করছেন সাতজন শ্রমিক।
হিলির দক্ষিণ বাসুদেবপুর মতিন মণ্ডলের চাতালে ফেরদৌসী গড়ে তুলেছেন এ সব খামার। বাজারে দেশি মুরগির মাংস ও ডিমের বেশি চাহিদা এবং দাম ভাল থাকায় অন্যান্য মুরগির খামারের পাশাপাশি দেশি মুরগির খামারে ঝুঁকেছেন তিনি।
গত দুই মাস আগে ৪৫ টাকা দরে ১ হাজার দেশি মুরগির বাচ্চা দিয়ে এ খামার শুরু করেন তিনি। অতিযত্নে মুরগিগুলো লালন-পালন করায় তেমন কোনো বাচ্চা নষ্ট হয়নি। বর্তমান প্রতিটি মুরগি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা দরে বাজারজাতের উপযুক্ত হয়েছে। তবে দেশি মুরগির খামার বৃদ্ধির লক্ষ্যে শুধু মোরগগুলো বিক্রি করবেন। কেননা ডিম পাড়া মুরগি দিয়ে খামারের আকার বৃদ্ধি করতে চান তিনি। আর মাত্র ২০-৩০ দিনের মধ্যে এসব মুরগি ডিম পাড়া শুরু করবে বলে জানান এ নারী উদ্যোক্তা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, খামারের এই ১ হাজার দেশি মুরগির জন্য তৈরি আছে একটি ছাউনি। ছাউনির পাশে রয়েছে ঘেরা এক বিঘার জমি। সকাল হলেই ছাউনি থেকে বের করে দেওয়া হয়। এরপর ওই জমিতে চড়ে বেড়ায় মুরগিগুলো। খামারে দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা শ্রমিকরা নিয়মিত খাদ্য হিসেবে গম, ভুট্টা ও চালের গুড়া দেন। এ নারী উদ্যোক্তার খামার দেখে অনুপ্রাণিত হচ্ছেন অনেকেই।
স্থানীয় আরিফ আহমেদ বলেন, “মতিন মণ্ডলের চাতালে ফেরদৌসী মনি আপার বিভিন্ন পশুপাখির খামার আছে। আমি প্রায় সময়ই এ সব খামার দেখতে আসি, অনেক ভাল লাগে। সবচেয়ে বড় বিষয়, তার একটা বড় দেশি মুরগির খামার রয়েছে। সচারাচর দেশি মুরগির খামার তেমন চোখে পড়ে না। এটা অনেক লাভজনক খামার। আমারও ইচ্ছে আছে, তার পরামর্শ নিয়ে বাড়িতে একটা দেশি মুরগির খামার দেওয়ার।”
খামারের শ্রমিক আজগর আলী বলেন, “এ চাতালে সাতটি খামার আছে। আমরা সাতজন শ্রমিক কাজ করি। এখানে বর্তমান মালিক দেশি মুরগির খামার করেছেন। দেশি মুরগিতে অনেক লাভ থাকাই তিনি এ খামার তৈরি করেছেন। আমরা এখানে যে পারিশ্রমিক পাই, তা দিয়ে আমাদের সংসার অনেক ভালোভাবেই চলে।”
উদ্যোক্তা ফেরদৌসী মনি বলেন, “আমি একজন নারী উদ্যোক্তা। হাকিমপুর নারী উদ্যোক্তা ফোরামের সহ-সভাপতি। গরু, ছাগল, গাড়ল, কবুতর, বিভিন্ন জাতের মুরগি, বিদেশি পাখিসহ দেশি মুরগির খামার করেছি। বর্তমান নিজেকে একজন সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে দেশি মুরগির খামার তৈরি করেছি। কেননা দেশি মুরগির মাংস ও ডিমের অনেক চাহিদা রয়েছে বাজারে, পাশাপাশি দামও ভাল আছে।”
তিনি আরও বলেন, “আগামী ১৫-২০ দিনের মধ্যে মোরগগুলো বিক্রি করবো। আর বাকি ডিম পাড়া মুরগি দিয়ে খামার বৃদ্ধি করবো। বর্তমানে খামারে ১ হাজার দেশি মুরগি আছে। নিজেকে স্বাবলম্বী করতে ২-৩ হাজার দেশি মুরগির খামার তৈরির ইচ্ছে রয়েছে।”
হাকিমপুর নারী উদ্যোক্তা ফোরামের সাধারণ সম্পাদক হামিদা আকতার ডালিম বলেন, “আমরা নারী, আমরাও পারি। ইচ্ছে করলে পুরুষের পাশাপাশি সংসারের হাল আমরাও ধরতে পারি। ফেরদৌসী মনি আপা একজন সফল নারী উদ্যোক্তা। দেশি মুরগির খামার করে তিনি নিজেকে স্বাবলম্বী করেছেন। আমরা নারীরা যে যেখানে যে অবস্থায় থাকি না কেনো, ইচ্ছে ও শক্তি থাকলে নিজেদের স্বাবলম্বী করতে সময় লাগবে না।”
হাকিমপুর নারী উদ্যোক্তা ফোরামের সভাপতি রোমেনা আক্তার মনি বলেন, “হাঁটি হাঁটি পা পা করে আমরা হাকিমপুর নারী উদ্যোক্তারা এগিয়ে যাচ্ছি। প্রতিটি নারী সদস্য কোনো না কোনো উদ্যোক্ত নিয়ে কাজ করছি। নারী উদ্যোক্তা ফেরদৌসী মনি আপা বিভিন্ন খামারের পাশাপাশি একটি দেশি মুরগির খামার করে লাভবান হচ্ছেন।”
তিনি বলেন, “আমরা প্রতিনিয়ত তার খামার পরিদর্শন করে আসছি। আশা করছি, এ দেশি মুরগির খামার করে তিনি একজন প্রতিষ্ঠিত নারী উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলবেন।”