উদ্যোক্তা/ই-কমার্স

ই প্ল্যাটফর্মে ব্যবসা সহজ না: তারসিয়া আলম

‘অনেকেই মনে করেন, ই প্ল্যাটফর্মে ব্যবসা করা অনেক সোজা। তারা ভাবেন, প্রোডাক্ট আনলাম, ছবি তুললাম ব্যাস সেল হয়ে গেলো! আসলে ই প্ল্যাটফর্মে ব্যবসা সহজ না। প্রোডাক্ট সোর্সিং থেকে শুরু করে একটা প্রোডাক্ট ডেলিভারি দেওয়া পর্যন্ত অনেকগুলো বিষয় জড়িত থাকে। আরেকটি সমস্যা হলো, ডেলিভারি সমস্যা। অনেক সময় কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাস্টমারের হাতে পণ্য পৌঁছায় না। ঠিক তখনি হয় বিপত্তি। অনেক সময় সেই পণ্যটি রিটার্নও আসে। পণ্য রিটার্ন আসলেই লসে পড়তে হয়।’ কথাগুলো বলছিলেন ‘ইয়াফিজেড’ (YafeeZ) এর স্বত্বাধিকারী তারসিয়া আলম। তিনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি করেন। চাকরির পাশাপাশি ব্যবসাও এগিয়ে নিচ্ছেন। ব্যবসার জন্য ই-প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করেন তারসিয়া।

তারসিয়া আলম রাইজিংবিডিকে বলেন,  ‘আমি যেহেতু চাকরির পাশাপাশি ব্যবসা চালু করেছি সেক্ষেত্রে ছুটির দিনগুলোতে প্রোডাক্ট সোর্সিং এবং ফটোগ্রাফিতে আমার বেশি সময় দেওয়া লাগে। এমন অনেক সময় হয় কিছু থ্রি পিসের অর্ডার এসেছে, ডেলিভারি দেওয়ার আগে একবার চেক করি যেকোন ডিফেক্ট আছে কিনা। ঠিক ওই সময়ে চোখে পরে যে থ্রি পিসে সমস্যা আছে।  যদি দেখি সেলাইয়ে সমস্যা আছে বা রঙ ওঠে; তাহলে সেই পোশাক আমি ক্রেতাকে পাঠাই না। আমার কাছে বিজনেসে সততা যতদিন ধরে রাখতে পারবো ততদিন হয়তো ঠেকবোনা। মনের অজান্তে কখনো ভুল হয়ে হয়ে গেলে কাস্টমারের সাথে তর্কে না জড়িয়ে ক্ষমা চেয়ে নেই।’

২০২১ সালের অক্টোবরে ব্যবসা শুরু করেন তারসিয়া। শুরুতে থ্রি পিস, বিছানার চাদর আর হিজার বিক্রি করতেন তারসিয়া আলম। সোর্সিং এর সমস্যার কারণে হিজাব বিক্রি বন্ধ করে দেন। এটির বদলে আরও নতুন নতুন পণ্য যুক্ত করেন। যেমন কাস্টমাইজড বেবি ড্রেস, শিশুদের জন্য কাস্টমাইজড ফ্লানেল পোশাক, প্রিমিয়াম কোয়ালিটির পালাজ্জো, বেবি লেগিংস, পানিরোধী বিছানার চাদর ইত্যাদি। 

তারসিয়া আলম বলেন, ‘ক্লোদিং আইটেম নিয়ে কাজ করলেও আমার উদ্যোগের আরেকটি প্রোডাক্ট আছে, যেটা নিয়ে আমি ব্যাপক সাড়া পাই। সেটা চুয়াডাঙার স্পেশাল নলেন গুড়। টানা তিনবছর শীতে এই গুড় নিয়ে কাজ করেছি। নলেন গুড়ের পাশাপাশি খেজুরের পাটালি গুড়ের ফিডব্যাকও অনেক ভালো পেয়েছি।’

চাকরির পাশাপাশি সফলভাবে ব্যবসার কাজ চালিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতা পান তারসিয়া। মাসে গড়ে ৭০ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি হয় তার। মাস্টার্স শেষ করে চাকরি খুঁজছিলেন। একটা সময় মনে করেন, চাকরি হবে না, ব্যবসা করবেন। ব্যবসার জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। সেই সময় চাকরি হয়। কিন্তু ব্যবসাটাও তিনি করবেন বলে ঠিক করেন। একটু একটু করে শুরু করেন ব্যবসা। কাজে মৌলিকত্ব যোগ করার জন্য অনেক পোশাকে নিজেই ডিজাইন করেন। 

‘আমার পণ্যের ডিজাইন বলতে কাস্টমাইজড বেবি ড্রেসগুলো আমি নিজেই ডিজাইন করি। কাস্টমাইজড পোশাকগুলো তৈরিতে একজন আমার সঙ্গে কাজ করেন। তিনি আর আমি মিলে ডিজাইন মোডিফাই করি।’— যোগ করেন তারসিয়া।

সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজ থেকে ম্যানেজমেন্টে  অনার্স, মাস্টার্স করেছেন তারসিয়া। চাকরি এবং ব্যবসা উভয়ক্ষেত্রেই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কাজে লেগেছে বলে মনে করেন তিনি। তবে কাজ করতে করতে নতুন নতুন আরও অনেকে অভিজ্ঞতা তার দক্ষতা বৃদ্ধি করেছে। 

তারসিয়া আলম বলেন, ‘আমি যখন বিজনেস স্টার্ট করি তখন ফেসবুক মার্কেটিং শুরু করেছি।সবচেয়ে বেশি কাজে লেগেছে গ্রুপ মার্কেটিং। বিভিন্ন গ্রুপে সময় দিয়ে বিজনেসের খুঁটিনাটি অনেক বিষয় জেনেছি। কোন বিষয়গুলোতে আমার দুর্বলতা আছে সেটাও নিজে বোঝার চেষ্টা করেছি।গ্রুপগুলোতে নিজের পণ্য নিয়ে লিখতাম। মোটামুটি ভালোই অর্ডার পেতাম। এভাবে আস্তে আস্তে আরও বড় পরিসরে সেলের জন্য এ বছর থেকে বেছে নিয়েছি পেইড মার্কেটিং। এখন প্রতিমাসেই বুষ্টিং এর জন্য একটা আলাদা বাজেট রাখি। পার্সোনাল প্রোফাইল, গ্রুপ মার্কেটিং, ইন্সটাগ্রাম, হোয়াটস অ্যাপ সব মাধ্যমেই মার্কেটিং করছি।’

তারসিয়া আলম জানান, জীবনের ছোট ছোট প্রাপ্তিগুলোকে জীবনের সেরা প্রাপ্তি বলে মনে করেন। স্বপ্ন দেখেন ব্যবসাকে দিনে দিনে আরও বড় করে তুলবেন। সেখানে অনেকের কর্মের সুযোগ তৈরি হবে।