‘ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ে চাকরি করতে পারিনি। বিয়ে করে সংসারী হয়েছি। যখন সন্তান বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে তখন অনলাইনে ব্যবসা শুরু করি। শুরুতে পরিচিতজনেরা আমাকে নিয়ে খুব হাসাহাসি করতে শুরু করেন। কান দেইনি। দেশি বিদেশি রেডিমেড পোশাক সংগ্রহ করে বিক্রি করি, এর পাশাপাশি নিজস্ব ডিজাইনে পোশাক তৈরি করি। মূলত শখ থেকে শুরু করেছিলাম। অবসর সময়টাকে কাজে লাগানো লক্ষ্য ছিলো। আমার শুরুটা খুব ভালো ছিল কিন্তু মাঝখানে কিছুটা থমকে গিয়েছিলাম। তবে আমি কখনো আশাহত হইনি, নিজের কাজ করে যাচ্ছি। আমার পণ্যের চাহিদাও দিন দিন বাড়ছে। আমার মনে হয় শক্ত মনোবল থাকলে যেকোন বয়সে উদ্যোক্তা হওয়া যায়।’— কথাগুলো বলছিলেন নার্গিস রিনা। তিনি ‘রীনা’স ওয়্যারড্রব’এর স্বত্বাধিকারী।
নার্গিস রীনার জন্ম ও বেড়ে ওঠা ফরিদপুরে। ঢাকা পলিটেকনিক থেকে ইলেকট্রিক্যাল ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং- সম্পন্ন করেছেন তিনি। এরপর পারিবারিক সিদ্ধান্তে বিয়ে হয়ে যায় তার। সংসার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন নার্গিস। সন্তানের মা হওয়ার পরে সংসারে আরও মনোযোগী হন। সন্তান যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে, তখন নিজে কিছু করার কথা ভাবতে শুরু করেন। অবসর সময়টাকে কাজে লাগানোর কথা চিন্তা করতে থাকেন তিনি। এরপর এলো করোনাকাল। ঘরে বন্দি সময়ে ঘরে বসেই কিছু করার ইচ্ছা থেকে হোম মেড খাবার বিক্রি শুরু করেন নার্গিস। ভালো সাড়াও পাচ্ছিলেন। কিন্তু একা সবকিছু সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছিলেন। এরপর একটি বিরতি নিয়ে স্বামীর পরামর্শে পোশাক বিক্রি শুরু করেন নার্গিস।
পাকিস্তানি পোশাক বেশি বিক্রি করেন নার্গিস
নার্গিস বলেন, ‘২০২১ সালে নতুন করে ব্যাবসা শুরু করি। অনলাইনে ‘রীনা'স ওয়্যারড্রব’ নামে একটি পেইজ খুলে পণ্যের প্রচারে কাজ শুরু করেন। নার্গিস সংগ্রহ করতে শুরু করেন পাকিস্তানি পোশাক। ক্রেতাদের ভালো সাড়া পান। স্বামী ও বড় ভাইয়ের সহযোগিতায় পণ্য সংগ্রহ দিনে দিনে বাড়াতে থাকেন। বিক্রিও বাড়তে থাকে। নার্গিস জানান, প্রতি মাসে গড়ে ৭০ হাজার টাকার পোশাক বিক্রি করেন তিনি।
জীবনের এই পর্যায়ে এসে নতুন করে নিজে কর্মে যুক্ত হতে পেরে আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছেন নার্গিস। যারা অবসর সময়ে নিজেরা কিছু করতে চান, তাদের উদ্দেশ্যে নার্গিস বলেন, ‘শক্ত মনোবল থাকলে উদ্যোক্তা হতে পারবেন। একজন উদ্যোক্তাকে সৎ সাহস ও শক্ত মনোবল নিয়ে এগিয়ে যেতে হয়।’