শুরুতে রাঙ্গামাটি থেকে টেক্সটাইলের কাপড় এনে সামান্য লাভে ঘরে বসে বিক্রি করতেন। এভাবে মাসে আয় করতেন ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা। পরে একটি তাঁতের কারখানা গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা করেই থেমে থাকেননি। স্বামী সহযোগিতা নিয়ে গড়ে তোলেন কারখানা। নাম দেন মিতা টেক্সটাইল।
বলছিলাম খাগড়াছড়ি জেলার মহালছড়ি উপজেলার মাইসছড়ির নতুন পাড়া গ্রামের স্বদেশ প্রীতি চাকমার স্ত্রী মিতা চাকমার কথা। পেশায় একজন গৃহিনী হলেও বর্তমানে তিনি একজন সফল নারী উদ্যোক্তা।
গত আট বছর আগে যুব উন্নয়ন থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে গবাদি পশু পালন করতেন তিনি। এছাড়া বিভিন্ন সমিতিতে টাকা সঞ্চয় করতেন। পরে তিনি দীর্ঘ প্রায় পাঁচ বছর ধরে রাঙ্গামাটি থেকে টেক্সটাইলের কাপড় এনে স্বল্প লাভে ঘরে বসে বিক্রি শুরু করেন।
একটা সময় পর তিনি স্বামীর কাছে একটি টেক্সটাইল কারখানা তৈরির কথা জানান। এতে স্বামী স্বদেশ প্রীতি চাকমা পূর্ণ সম্মতি দেন। স্বামীর সম্মতি পেয়ে রাঙ্গামাটিতে অবস্থিত টেক্সটাইল কারখানা পর্যবেক্ষণ করেন। এরপর নিজের ঘরের কাছে গড়ে তোলেন একটি টেক্সটাইল কারখানা। গত পাঁচ মাস আগে গড়ে তোলা কারখানাটির নাম দেন মিতা টেক্সটাইল। এ কারখানা থেকে শুরু করে সফল নারী উদ্যোক্তার এ যাত্রায় তার স্বামী সবসময়ই পাশে ছিলেন।
তার টেক্সটাইলে পাহাড়ি নারীদের পরিধেয় পিনোন হাদী, গামছাসহ নানা বস্ত্র তৈরি করছেন। তিনি প্রথমে তার কারখানার কর্মচারীদের তিন মাস প্রশিক্ষণ দেন। প্রশিক্ষন শেষে তাদের বেতনভুক্ত কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ দেন। এর মাধ্যমে নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি অন্যদেরও আত্ম-কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছেন মিতা চাকমা।
মিতা টেক্সটাইল হওয়ার পর থেকে এলাকা বেকার যুবক-যুবতিদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। তারা জানান, এ কারখানার মাধ্যমে মিতা এলাকার শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতিদের যে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছেন, তাতে খুশি এলাকার মানুষ। মিতা টেক্সটাইল সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আরও শিক্ষিত বেকারের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে বলে মনে করেন স্থানীয়রা।
কারখানার কর্মচারীরা জানান, মিতা টেক্সটাইল হওয়ায় তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এই টেক্সটাইলে চাকরি করে অনেকে পড়াশুনা করছেন। আবার অনেকে ভালোভাবে পরিবারও চালাতে পারছেন।
নারী উদ্যোক্তা মিতা চাকমা জানান, তার কারখানায় বর্তমানে ২০ জন কর্মচারী কাজ করছেন। এ কারখানায় দৈনিক ৪০ সেট পিনোন হাদী (পাহাড়ী নারীদের পরিধেয় বস্ত্র) দৈনিক সাতটি গামছা ও চারটি পাজারা তৈরি হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে তিনি মাপলার ও লুঙ্গি তৈরি করবেন বলে জানান।
এদিকে, এ সফলতার জন্য ২০২৩ সালে প্রথমে উপজেলা ও পরে জেলার শ্রেষ্ঠ জয়িতা নির্বাচিত হন মিতা চাকমা।
এ বিষয়ে খাগড়াছড়ি মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক সুস্মিতা খীসা বলেন, “মিতা চাকমা যদি সহযোগিতা চান, তাহলে তার উৎপাদিত পণ্য তাদের বিপণন কেন্দ্রে বিক্রির ব্যবস্থা করা হবে। একই সঙ্গে তাকে ঋণ দিয়েও সহযোগিতা করা হবে।”