অন্য দুনিয়া

ফেঁসে যাচ্ছে রাঙ্গুনিয়ার প্রভাবশালীরা...

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার শিলক ইউনিয়নের চাঞ্চল্যকর শিশু ধর্ষণ ঘটনায় সমজাপতিকে রক্ষা করতে বড় ভাইকে ছোট বোনের ধর্ষণকারী সাজিয়ে মামলা দেওয়ার ঘটনায় ফেঁসে যাচ্ছেন পুলিশসহ একাধিক প্রভাবশালী।

 

ভাইকে বোনের ধর্ষণকারী বানিয়ে জেলে পাঠানোর চক্রান্তের সঙ্গে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা পর্যায়ের একজন প্রভাবশালী জন প্রতিনিধি ও আওয়ামী লীগ নেতা, অন্তত তিনজন মিডিয়াকর্মী, রাঙ্গুনিয়া থানার ওসি (তদন্ত)সহ তিনজন পুলিশ কর্মকর্তা জড়িত রয়েছের বলে অভিযোগে জানা গেছে। এ ছাড়া শিলক ইউনিয়নের জনৈক সালাউদ্দিন (প্রকৃত ধর্ষকের ভাগিনা) ধর্ষণের ঘটনাটি ভিন্নখাতে নিতে মোট অংকের টাকা লেনদেন করেছেন বলে প্রাপ্ত অভিযোগে জানা গেছে।

 

সোমবার দুপুরে হাইকোর্টে ব্যারিস্টার সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়ার দায়েরকৃত এই রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে বিচারপতি কাজী রেজাউল হক ও বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ শিশু ধর্ষণকারী শাহ আলম (৬২)সহ এই ঘটনাটি ভিন্নখাতে নিয়ে যাওয়ার পেছনে জড়িতদের গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছেন।

 

একইসঙ্গে রাঙ্গুনিয়া থানায় মামলা না নেওয়া কেন বে-আইনী ঘোষণা করা হবে না, ওই ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কেন আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তা জনতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে সরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি), চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার, রাঙ্গুনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এবং ওই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ ১০ জনকে এ রুলের জবাব দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

 

আদেশে রাঙ্গুনিয়ার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অভিযুক্ত শাহ আলমকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি আগামী ১৫ জুনের মধ্যে এই বিষয়ে একটি প্রতিবেদনও জমা দিতে বলা হয়েছে।

 

জানা যায়, শিলক মিনাগাজির টিলা এলাকার দরিদ্র রিকশা চালক পিতার ১১ বছর বয়সী শিশু একই এলাকার প্রভাবশালী সমাজপতি ষাটোর্ধ্ব শাহ আলমের লালসার শিকার হয়। ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর এলাকাবাসীর বিক্ষোভের মুখে গত ৯ মে ধর্ষক শাহ আলমকে পুলিশ আটক করে থানায় নিয়ে যায়। কিন্তু মধ্যরাতে পুলিশ, রাঙ্গুনিয়া উপজেলা পর্যায়ের একজন জনপ্রতিনিধি এবং কয়েকজন সংবাদকর্মীর অর্থলিপ্সার শিকারে পরিণত হয় ধর্ষিত শিশুটি ও তার পরিবার।

 

পুলিশ কৌশলে ধর্ষককে ছেড়ে দিয়ে ধর্ষিত শিশুর ১৪ বছর বয়সী বড় ভাইকে ছোট বোনকে ধর্ষণের ঘটনায় ফাঁসিয়ে দিয়ে জেলে প্রেরণ করে। ছেড়ে দেওয়া হয় মুল অভিযুক্তকে। আসল ধর্ষণকারীকে রক্ষা করতে ধর্ষিত শিশুর ভাইকে ধর্ষণকারী সাজিয়ে জেলে পাঠানোর আয়োজন করতে মূল ধর্ষক শাহ আলমের হয়ে তিন মিডিয়াকর্মী পুলিশ ও জনপ্রতিনিধির মধ্যে মোটা অংকের টাকা বন্টন করেন ধর্ষকের আত্মীয় সালাউদ্দিন।

 

ঘটনায় রাঙ্গুনিয়াসহ সমগ্র চট্টগ্রামে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এই নিয়ে রাইজিংবিডি, বাংলামেইলসহ একাধিক টিভি চ্যানেল ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে রোববার দুপুরে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় একটি রিট আবেদন দায়ের করেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।

 

অপরদিকে চট্টগ্রামের তিনটি জনপ্রিয় বহুল পঠিত দৈনিকের তিনজন সংবাদদাতা মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে ধর্ষিত শিশুর ১৪ বছর বয়সী বড় ভাইকে ১৮ বছর বয়স উল্লেখ করে বোনের ধর্ষক সাজিয়ে সংবাদ পরিবেশন করে মূল ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন। তিন পুলিশ, তিন মিডিয়াকর্মী, এক জনপ্রতিনিধি, এক অর্থ লেনদেনকারী এবং ঘটনার মহানায়ক ধর্ষক শাহ আলম নিজেই ভাইকে বোনের ধর্ষনকারী সাজানোর নেপথ্য সব আয়োজন করেছিলেন বলে ঘটনা ফাঁস করেছে ধর্ষিতার পরিবার।

 

এ ব্যাপারে ঘটনার অর্থ যোগানদাতা ওমান প্রবাসী সালাউদ্দিনের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি রাইজিংবিডিকে জানান, শিশু ধর্ষণে অভিযুক্ত শাহ আলম তার মামা। তবে মামাকে রক্ষায় অর্থ লেনদেনে যে অভিযোগ উঠেছে তা সত্য নয়। সালাউদ্দিন বলেন, ‘আমিও শিশু ধর্ষণকারীর গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’

 

রাঙ্গুনিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আলী শাহ রাইজিংবিডিকে জানান, রাঙ্গুনিয়ার শিশু ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে তার বিরুদ্ধে নানাভাবে ষড়যন্ত্র ও মিথ্যা প্রচারণা চালানো হচ্ছে। আলী শাহ্ বলেন, ‘আমিই প্রথম ব্যক্তি ঘটনা জানার সঙ্গে সঙ্গেই আমি ধর্ষণকারীকে গ্রেফতার করতে পুলিশকে অনুরোধ জানিয়েছি। পুলিশ যদি মূল ধর্ষনকারীকে রক্ষা করতে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ধর্ষিত শিশুর ভাইকে ধর্ষক সাজিয়ে মামলা করে তবে সেই পুলিশ সদস্যদেরও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’

       

রাইজিংবিডি/চট্টগ্রাম/২৫ মে ২০১৫/রেজাউল/সনি