অন্য দুনিয়া

মৃতের না-বলা কথা জানিয়ে দেয়াই তার পেশা 

পৃথিবীতে কত রকম পেশা আছে- কত বিচিত্র দেশ, কত বিচিত্র পেশা! কিন্তু এমন এক পেশা সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে! কখনো কেউ শুনেছেন- মৃত ব্যক্তির না-বলা কথা বলে দেয়া এক অদ্ভুত পেশার কথা? 

ব্যাপারটি অবিশ্বাস্য মনে হলেও সত্য। এমন একটি কাজকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন বিল এডগার। তার দাবি তিনি মৃত ব্যক্তিদের প্রতিনিধিত্ব করেন। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে তিনি তাদের হয়ে লোকজনের কাছে সেই ব্যক্তির অপরাধের কথা স্বীকার করেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ‘কফিন কনফেসার’ বিল এডগার শোককারীদের বলে দেন মৃত ব্যক্তি গোপনে কোনো ব্যবসা বা টাকা আত্মীয়-স্বজনদের জন্য রেখে গেছেন কি না। স্বামীকে বলে দেন, তার স্ত্রীর অন্য কারো সঙ্গে সম্পর্ক ছিল কি না কিংবা মৃত স্বামীর ব্যাপারে বলে দেন তার স্ত্রীকে। সবচেয়ে বেশি অনুরোধ করা হয় মৃতের ফোনের গোপন পাসওয়ার্ড জানতে। এ জন্য তাকে নানা ধরনের সমস্যা পোহাতে হয়। তবে কাজটির জন্য বড় অঙ্কের অর্থ নেন তিনি। 

ডেইলি মেইলকে দেয়া এক সাক্ষাৎকার থেকে জানা যায়, বিলের মাথায় যখন এই কাজটির আইডিয়া আসে তখন তার বয়স ৫৩ বছর এবং তিনি অস্ট্রেলিয়াতে মৃত্যুপথযাত্রী এক রোগীর ব্যক্তিগত গোয়েন্দা হিসেবে কাজ করছিলেন। তিনি বলেন, মৃত্যুর বিষয়ে আমরা কথাবার্তা বলতাম, মৃত্যুর পর জীবন কেমন হবে- এ ধরনের বিষয় নিয়ে আলোচনা হতো। একদিন তিনি বললেন, ‘আমি আমার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্য কিছু করতে চাই।’ 

আমি তখন তাকে ওই অনুষ্ঠানে নিজের সম্পর্কে নিজের প্রশংসা করার ধারণা দেই। কিন্তু লোকটি তখন বলেন, শেষ বিদায়ের অনুষ্ঠানে তিনি যে-সব কথা বলতে চান সেগুলো তার পরিবার ও বন্ধুরা পছন্দ করবে না। ফলে তারা সম্ভবত তার লিখে যাওয়া বার্তা পাঠ করা থেকে বিরত থাকবেন অথবা তারা রেকর্ড করা অন্য কিছু চাইবেন। তখন আমি তার হয়ে এই কাজটা করার প্রস্তাব দেই। এবং এভাবেই কাজটা শুরু হয়ে যায়। আর এখন এই কাজ করাটাই আমার জীবিকা নির্বাহের উপায়।

বিল গণমাধ্যমে বলেন, আমি ‘কফিন কনফেসার’। এ কাজের জন্য আমি, অন্তেষ্ট্যিক্রিয়ার নির্দিষ্ট সময়ে উঠে দাঁড়াই, খামের ভেতর থেকে একটা কাগজ বের করি এবং কফিনে শায়িত লোকটির না বলা কথাগুলো সেখান থেকে পাঠ করি। কোনো ব্যক্তি মৃত্যু বরণ করলে আমি তার আত্মীয়দের কাছে যাই এবং  শুধু বলি, এই কফিনে আপনার প্রিয়জন আছে। তারা কিছু না বলা রেখে গেছে। আমি এখানে এটা বলতে এসেছি। আপনি যদি এটি শুনতে চান তাহলে বসে থাকুন, নীরবে শুনুন। অন্যথায় বাগড়া বন্ধ করুন। কারণ আমি যাই হোক এটি বলতে চাই। এ জন্য আমি প্রায় ১০ হাজার অস্ট্রেলিয়ান ডলার নিই।’ 

স্মৃতিচারণ করে বিল জানান, একবার তিনি এ রকম এক অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় বক্তব্য রাখছিলেন। তখন মৃত ব্যক্তির ঘনিষ্ঠ এক বন্ধু হঠাৎ তার কথা থামিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন। আমি তাকে বসতে বলি, বলি চুপ করে থাকতে। তাকে বলি তার বন্ধু যেসব কথা বলে গেছে, আমার বলার জন্য, সেসব শুনতে। কথাটা হচ্ছে মৃত ব্যক্তি যখন মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছিলেন তখন তার ঘনিষ্ঠ ওই বন্ধু তার স্ত্রীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করার ব্যাপারে তাকে প্ররোচিত করার চেষ্টা করেছিলেন।

বিল জানান, এরপর ওই ব্যক্তি গোপনে পেছনের দরজা দিয়ে বের হয়ে চলে যান। মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে আরো কয়েকজন ব্যক্তিকে সেখান থেকে চলে যেতে বলা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সুন্দরভাবেই সম্পন্ন হয়। 

আরেকবারের কথা তুলে ধরে বিল এডগার বলেন, এক মহিলা বলেছিলেন যে তার প্রায় আট বছর ধরে অন্যপুরুষের সাথে সম্পর্ক ছিল- কথাটি তার স্বামীকে জানাতে হবে। একইসঙ্গে স্বামীর কাছে প্রকাশ করতে হবে যে, সে জানে তার বোনের সঙ্গে স্বামীরও আট বছর ধরে সম্পর্ক ছিল।

বিল এডগারের কাজ কেমন হয়েছে সে বিষয়ে তার ক্লায়েন্টদের কাছ থেকে ফিডব্যাক, রিভিউ কিংবা অভিযোগ পাওয়া সম্ভব নয়। তবে বিল বলেন, বিষয়টা যে খুব ভালো তা নয়, কিন্তু এটা তো তাদের শেষকৃত্য অনুষ্ঠান। ফলে তারা যেভাবে এই পৃথিবী থেকে চলে যেতে চান, সেভাবেই যেতে পারবেন, এমন স্বাধীনতা সবার থাকা উচিত।