বাংলাদেশের একটি আদি নৃগোষ্ঠী হাজং। তারা মূলত ময়মনসিংহ জেলার পর্বত সংলগ্ন ভূমিতে বসবাস করে এর বাইরে শেরপুর, সিলেট ও নেত্রকোনা অঞ্চলেও তারা বসবাস করে। বাংলাদেশে বসবাসরত হাজংয়ের সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার। নৃবিজ্ঞানীদের মতে, হাজংদের আদি নিবাস উত্তর বার্মায়। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে তাদের পূর্ব পুরুষ ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় পার্বত্য এলাকায় প্রথমে প্রবেশ করে। সেখান থেকে আসামের কামরূপ জেলার হাজো নামক স্থানে বসতি স্থাপন করে। সপ্তদশ শতকে আসাম থেকে মুঘলদের দ্বারা বিতাড়িত হয়ে গারো পাহাড়ে আশ্রয় নেয়। এরপরে সমতলভূমিতে বসতি স্থাপন করে।
প্রাচীনকাল থেকেই কৃষিকাজের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করত। দেশভাগের পূর্বে ময়মনসিংহ জেলায় হাজংরা চাষাবাদের মাধ্যমে স্বনির্ভরতা অর্জন করেছিল। বর্তমানে বাংলাদেশে বসবাসকারী হাজং জনগোষ্ঠীর আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। শিক্ষাক্ষেত্রেও তারা অনেক পিছিয়ে। শিক্ষিতের হার প্রায় ৩০%। হাজংদের চেহারায় মঙ্গোলীয় ছাপ আছে। হাজংরা মধ্যমাকৃতির, হূষ্টপুষ্ট ও মাংশল দেহের হয়ে থাকে। এদের মাথার চুল ঘন ও কালো। তারা বেশ হাসিখুশি।
তারা হাজং ভাষা এবং বাংলা ভাষায় কথা বলে থাকে। হাজং ভাষার লিখিত রূপ নেই এজন্য অসমীয় বর্ণমালায় হাজং ভাষার লিখিত রূপ দেয়। হাজং নারীরা ‘পাথিন’ নামক এক ধরনের পোশাক পরে। যা বিভিন্ন রংয়ের সংমিশ্রণে তাঁতে বোনা ডোরাকাটা মোটা কাপড়, যা দৈর্ঘ্যে সাড়ে তিন হাত এবং প্রস্থে আড়াই হাত হয়ে থাকে। এই পাথিন হাজং নারীরা বক্ষবন্ধনী হিসাবেও ব্যবহার করে। হাজং নারীরা শীতকালে হাতে বোনা চাদর ব্যবহার করে যাকে বলা হয় আর্গন। এছাড়া কাজের সময় বিশেষ করে আমন ক্ষেতে চারা বপনকালে হাজং নারীরা বানং নামে এক ধরনের কোমরবন্ধনী ব্যবহার করে।
হাজংদের বসবাসের ঘর সাধারণত বাঁশ, কাঠ, শণ প্রভৃতির সাহায্যে বানানো হয়। হাজং বাড়িতে সৃষ্টিকর্তাকে প্রণাম জানানোর জন্য আলাদা একটি ঘর থাকে। একে বলে ‘দেওঘর’। প্রতি সন্ধ্যায় হাজংরা দেওঘরে প্রদীপ জ্বালিয়ে ধুপধুনা পুড়িয়ে সৃষ্টিকর্তাকে প্রণাম করে।
আমিষ ভোজী হাজংদের প্রিয় খাবার বিন্নী চালের ভাত এবং শুঁটকি মাছ।
হাজং নারীরা পৌষ ও চৈত্রসংক্রান্তিতে বিভিন্ন ধরনের পিঠা তৈরি করে এবং এইগুলির নাম মুছি পিঠা, পুনি পিঠা, পাতি পিঠা, ডিক্রি পিঠা, চা পিঠা ইত্যাদি। হাজং সমাজ পিতৃতান্ত্রিক।
সূত্র: বাংলাপিডিয়া