বাসে ঢাকা থেকে শেরপুর যাচ্ছিলাম। ময়মনসিংহ ব্রিজের কাছে যেতেই বাসটি থেমে থেমে চলতে শুরু করলো। কারণ রাস্তায় প্রচুর জ্যাম ছিল। বাসের জানালার পর্দা সরাতেই চোখ পড়লো একটি দোকানের সাইনবোর্ডে। দোকানের নাম ‘মেসার্স ঝামেলা কিনি’। নাম দেখেই নেমে পড়লাম বাস থেকে। কি এক অদ্ভূত নাম! এই নামের রহস্য খুঁজতেই ঢুকে পড়লাম ‘মেসার্স ঝামেলা কিনি’তে।
দোকানে প্রবেশ করতেই দেখা গেলো নানা ধরনের আসবাবপত্র, টিভি, ফ্রিজসহ ঘর সাজানোর নানা উপকরণ। একজন কারিগর বসে রঙ করছেন ওয়ারড্রবে, ভেতরে বসে হিসেব কষছেন দোকানের স্বত্বাধিকারী সায়েম আহম্মেদ।
সায়েমের সাথে আড্ডা শুরু হয় রাইজিংবিডি প্রতিবেদকের। জানা যায়, উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে পড়ছিলেন স্নাতকে। সে সময় মারা যায় তার বাবা। ২০০০ সালে নিজে ব্যবসা শুরু করার কথা ভাবেন। কিন্তু ব্যবসা করার জন্য মোটা অঙ্কের টাকা ছিল না সায়েমের কাছে। বিনা পুঁজিতে কি ব্যবসা শুরু করা যায়?—ভাবতে থাকেন তিনি। পুরাতন জিনিস কিনে শুরু করবেন ব্যবসা। পুরনো জিনিস মেরামত করে বিক্রি করবেন গ্রাহকদের কাছে। ২০০১ সালে যাত্রা শুরু হয় মেসাস ঝামেলা কিনির যাত্রা।
সায়েমের এই দোকানে অনেকেই ব্যবহৃত আসবাবপত্রসহ নানা জিনিস বিক্রি করেন। আবার প্রয়োজন অনুযায়ী ক্রেতারা তাদের পছন্দের জিনিসটি কিনে নেন। সাশ্রয়ী মূল্যে পাওয়া যায় বলে অনেকেরই পছন্দ এই দোকান।
এই দোকানে পাওয়া যায়— ব্যবহৃত খাট, টেবিল, সোফা, চেয়ার, আলনা, আলমারি ও ওয়ারড্রব। আরও পাওয়া যায় পুরাতন টিভি ও ফ্রিজসহ নানা ধরনের তৈজসপত্র।
দোকানের নামের বিষয়ে সায়েম রাইজিংবিডিকে বলের, ‘নতুন জিনিসের যেমন কদর রয়েছে পুরাতন জিনিসের তেমন কদর নেই। পুরাতন জিনিসকে সবাই ঝামেলা মনে করে, কেউ ফেলে রাখে কেউ আবার বিক্রি করার জন্য লোক খোঁজে। তাই এই দোকানের এমন নাম দিয়েছি।’
ব্যবসা সম্পর্কে সায়েম বলেন, একসময় আমার দোকানের প্রচারের জন্য মাইকিং করেছি, পোস্টারিং করেছি। বর্তমানে ময়মনসিংহসহ সারা দেশের মানুষ এই দোকানের কথা জানেন। অনেকেই অনেক জায়গা থেকে ফোন করেন ‘এই জিনিস আছে কিনা?’, ‘এই জিনিস কিনবেন কিনা?’ আমাদের আশেপাশে থেকে যারা ফোন দেয় তাদের সব জিনিসই আমরা আনার চেষ্টা করি এবং ভালো দাম দেওয়ার চেষ্টা করি। প্রয়োজন অনুযায়ী কেউ কেউ বলে রাখেন টিভি, ফ্রিজ আসলে যেন তাদের জানাই।
সায়েম শুধু নিজেই সামলম্বী নন। তার দোকানে বিভিন্ন কাজের সাথে সবসময় যুক্ত থাকেন ৪-৫ জন লোক। তাদের কর্মসংস্থান করতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান দাবি করেন সায়েম। তিনি বলেন, ‘হালালভাবে ব্যবসা করলে রহমত পাওয়া যায়। আমার এখানে বেশ কয়েকজন কাজ করেন। তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পেরে খুশি।’
খাট কিনতে আসা ক্রেতা আমিনুল ইসলাম বলেন, জানতে পারলাম এখানে পুরাতন ভালো খাট পাওয়া যায় তাই কিনতে এসেছি।’
ক্রেতারা জানান, ময়মনসিংহ শহরে এমন একটি দোকান বেশ ভালো সুবিধা দেয় তাদের।