অন্য দুনিয়া

ছেলের খুনিদের বিচার দেখে যেতে চান জিন্নাত আরা

বাদল সাহা, গোপালগঞ্জ : ‘বিডিআর বিদ্রোহের পর ইতিমধ্যে ছয় বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেছে। কিন্তু আমার ছেলে হত্যার বিচার আজও পাইনি। এ ঘটনায় বিচার কার্যক্রম চলছে অত্যন্ত ধীরগতিতে। এ বিচার কার্যক্রম যত দ্রুত সম্ভব শেষ করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কার্যকর করা হোক। আমি আমার ছেলের খুনিদের বিচার দেখে যেতে চাই।’

কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন পিলখানায় বিদ্রোহী বিডিআরের গুলিতে নিহত ১৩ রাইফেল ব্যাটালিয়নের কমান্ডিং অফিসার বদরুল হুদার মা জিন্নাত আরা নুরিয়া বেগম।বুধবার বিডিআর হত্যাকাণ্ডে ছয় বছর পূর্তিতে ছেলের কবর দেখতে এসে মা জিন্নাত আরা নুরিয়া বেগম কান্নায় ভেঙে পড়েন। গোপালগঞ্জ শহরের ব্যাংকপাড়াস্থ পারিবারিক কবরস্থানে ছেলের কবরের পাশে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন তিনি। নিহত বদরুল হুদার স্ত্রী নাসিমা বেগম লিজি দুই মেয়েকে নিয়ে বর্তমানে ঢাকার ক্যান্টনমেন্টে বসবাস করছেন। তারাও দিন গুনছেন, কবে এ বিচার কার্যক্রম শেষ হবে এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে।এর আগে দিবসটি উপলক্ষে বুধবার সকাল ১০টায় ১৩ রাইফেল ব্যাটালিয়নের কমান্ডিং অফিসার বদরুল হুদার কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় সোনালী স্বপ্ন একাডেমি, মালেকা একাডেমিসহ বিভিন্ন সংগঠন। এ সময় তার রুহের মাগফিরাত কামনা করে সূরা ফাতিহা পাঠ ও বিশেষ মোনাজাত করা হয়।বাদ জোহর শহরের ব্যাংকপাড়ায় নিহতের পারিবারিক মসজিদ, কোর্ট মসজিদ, গোপালগঞ্জ মুসলিম এতিমখানা, গ্রামের বাড়ি সদর উপজেলার কলপুর গ্রামের মসজিদে এবং ভেন্নাবাড়ী মাদ্রাসায় দোয়া ও মিলাদ-মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।উল্লেখ্য, ইতিমধ্যে নিহত সেনা কর্মকর্তার বাবা সামসুদ্দোহা সন্তান হত্যাকারীদের বিচারের অপেক্ষায় দিন গুনতে গুনতে মারা গেছেন। বিডিআর বিদ্রোহে নিহত লে. কর্নেল বদরুল হুদা গোপালগঞ্জ শহরের শামসুদ্দোহা ও জিন্নাত আরা নুরিয়া বেগমের ১৫ সন্তানের মধ্যে অষ্টম ছিলেন। ১৯৭৯ সালে এইচএসসি পাস করে ১৯৮০ সালে সপ্তম বিএমএ লং-কোর্সের মাধ্যমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে অফিসার পদে যোগ দেন এবং ১৯৮২ সালে কমিশনপ্রাপ্ত হন। বিডিআর বিদ্রোহের কয়েক দিন আগে তিনি পিলখানার বিডিআর সদর দপ্তরে বদলি হন।ঘটনার আগের দিন ২৪ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় বিডিআর সদর দপ্তরে আয়োজিত বিডিআর সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে প্রেসিডেন্ট পদক গ্রহণ করেন তিনি। পরদিনই পড়েন বিদ্রোহের কবলে। এরপর আর তার পরিবারের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ হয়নি।২৮ ফেব্রুয়ারি লে. কর্নেল বদরুল হুদার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত জানা যায়। ২ মার্চ তার লাশ সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারযোগে গোপালগঞ্জে এনে শহরের ব্যাংকপাড়াস্থ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

         

রাইজিংবিডি/গোপালগঞ্জ/২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫/বাদল সাহা/দিলারা/এএ